টানা দেড় বছর বন্ধ থাকার পর খুলেছে শিক্ষাঙ্গন। সপ্তাহ ঘুরলেও এখনো অনেক শিক্ষার্থী আসছে না স্কুলে। সরকারি তথ্য বলছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকছে। তবে বাস্তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছে এর চেয়ে কম শিক্ষার্থী। বিশেষ করে এই দেড় বছরে অনেক ছাত্রীই বসেছে বাল্যবিয়ের পিঁড়িতে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই যুক্ত হয়েছে নানা ধরনের কাজে।
যশোরের মণিরামপুরে প্রাথমিক স্তরের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী লেখাপড়ায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকছে। তাদের মধ্যে কেউ লেখাপড়া ছেড়ে কাজে লেগেছে, কেউ আবার কাজের খোঁজে ঢাকাসহ বাইরে গেছে। কেউ স্কুল খোলার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ভর্তি হয়েছে মাদরাসায়। মণিরামপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ২০-৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছে। শিরালী মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিটন হোসেন বলেন, ‘আমাদের ২৪৬ শিক্ষার্থী। গেল ছয় দিনে নিয়মিত অনুপস্থিতির হার ১৮-২০ শতাংশ। তাদের ফেরাতে আমরা নিয়মিত বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। খবর পাচ্ছি তারা সবাই কওমি মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে।’
মণিরামপুরের কাশিমনগর, সদর ও পৌরসভা ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ক্লাস্টারে কাশিমনগর ইউনিয়নে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এ ছাড়া ছয়জন ঝরে পড়েছে। তাদের কেউ শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই ক্লাস্টারে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৮৪ শতাংশ।’
রাজশাহীর দুর্গাপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেখা গেছে, প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণিতে ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ অনুপস্থিতি। এর মধ্যে মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে দেখা গেছে ১৮ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণিতে ১৫ শতাংশ, অষ্টম শ্রেণিতে ১৭ শতাংশ, নবম শ্রেণিতে ১৩ শতাংশ এবং দশম শ্রেণিতে ৫ শতাংশ অনুপস্থিতি। এ ছাড়া দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২০ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ, অষ্টম শ্রেণিতে ১৮ শতাংশ, নবম শ্রেণিতে ২০ শতাংশ এবং দশম শ্রেণিতে ৫ শতাংশ অনুপস্থিতি ছিল। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়। তবে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিটি বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলছেন, দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মূলত অনেক শিক্ষার্থী অল্প বয়সে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়েছে। এ ছাড়া অনেক ছাত্রী পরিবারিকভাবে বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। দুর্গাপুর পাঁচুবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটাই কম। বিশেষ করে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি। আমরা খবর নিয়ে দেখেছি, অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।’ এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তদারকি করে শতভাগ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাঙ্গনমুখী করার চেষ্টা করছি। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই শতভাগ উপস্থিতি দেখা যাবে।’
শরীয়তপুরের ডামুড্যার দারুস উচ্চ বিদ্যালয়ে গেল বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৮৯ জনের মধ্যে ৫২ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৮০ জনের মধ্যে ৫১ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৬৯ জনের মধ্যে ৫৯ জন, নবম শ্রেণিতে ৭০ জনের মধ্যে ৪০ জন এবং দশম শ্রেণিতে ৬১ জনের মধ্যে ৪৭ জন উপস্থিত ছিল। উপজেলার মালগাঁও ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় ৩৬ জনের মধ্যে ২১ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৩৭ জনের মধ্যে ৩০ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৪৭ জনের মধ্যে ৩৭ জন, নবম শ্রেণিতে ৫২ জনের মধ্যে ৪৫ জন, দশম শ্রেণিতে ৪০ জনের মধ্যে ২৪ জন উপস্থিত ছিল।
পটুয়াখালীর দুমকির ১৮ নম্বর রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে সাতজনের মধ্যে পাঁচজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১১ জনের মধ্যে ১০ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৩ জনের মধ্যে ১১ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ জনের মধ্যে সাতজন ও পঞ্চম শ্রেণিতে আটজনের মধ্যে সাতজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। উপজেলার মুরাদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২০ জনের মধ্যে ১৫ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৩২ জনের মধ্যে ১৬ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন, নবম শ্রেণিতে ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন এবং দশম শ্রেণিতে ২১ জনের মধ্যে ১৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। চরবয়রা মডেল বালিকা দাখিল মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৪৫ জনের মধ্যে ৩৩ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৫২ জনের মধ্যে ২৫ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৪২ জনের মধ্যে ৩৫ জন, নবম শ্রেণিতে ৫০ জনের মধ্যে ২৮ জন এবং দশম শ্রেণিতে ৪৮ জনের মধ্যে ২০ জনের উপস্থিতি দেখা যায়।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে লক্ষণপুর বালাপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় গেল বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬১.১১ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণিতে ৬৮.৬৩, অষ্টম শ্রেণিতে ৬২.২২ শতাংশ, নবম শ্রেণিতে ৭০.৮৩ শতাংশ এবং দশম শ্রেণিতে ৬৬.৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত ছিল।
বাগেরহাটের শরণখোলায় সুন্দরবন দাখিল মাদরাসায় গত এক সপ্তাহে পঞ্চম শ্রেণিতে ১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ছয়জন উপস্থিত ছিল। দশম শ্রেণিতে ৩৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে স্কুল খোলার প্রথম দিন রবিবারই সর্বোচ্চ ১৯ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০৮ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিল ৮০ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৯৬ জনের মধ্যে ৫৪ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ১২০ জনের মধ্যে ৮৯ জন, নবম শ্রেণিতে ১০০ জনের মধ্যে ৭০ জন এবং দশম শ্রেণিতে ৫২ জনের মধ্যে ৪০ জন উপস্থিত ছিল। উপজেলার ১০০ নম্বর দক্ষিণ খুলিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবার প্রথম শ্রেণিতে ৪৮ জনের মধ্যে ২৯ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ২৪ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩০ জনের মধ্যে ২২ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৫ জনের মধ্যে ১৯ জন উপস্থিত ছিল।