অবশেষে চাঁদপুরে সিসিইউ ও আইসিইউ আলোর মুখ দেখছে
ডাঃ দীপু মনি এমপির চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল এলাকা পরিদর্শন
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে সিসিইউ ও আইসিইউ সংযোজন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর জন্য অবকাঠামো নির্মাণে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে ৫০ শয্যার অবকাঠামোও নির্মাণ হবে। সহসাই এ বিষয়ে বাস্তবে কাজ দেখা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি গতকাল শনিবার হাসপাতাল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ৫০ শয্যার অবকাঠামোসহ সিসিইউ ও আইসিইউ স্থাপনের বিষয়ে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালটি চাঁদপুর জেলাসহ আশপাশের ক�টি জেলার চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিদিন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুর থেকেও অনেক রোগী আসে চাঁদপুরের এ হাসপাতালে। বিশেষ করে নদীপথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় চরাঞ্চলের ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সহজে এ হাসপাতালে চলে আসে। এজন্য প্রতিদিন এ হাসপাতালে প্রচুর সংখ্যক রোগী হয়। তবে হাসপাতালটির ২৫০ শয্যা নামকরণ হলেও এর বর্তমানে অবকাঠামোগত অবস্থান হচ্ছে ৫০ শয্যার। জনবলের পদ সৃষ্টি হতে শুরু করে বরাদ্দ এবং সুযোগ-সুবিধাসহ সবকিছুই চলছে ২শ� শয্যার হিসেবে। ৫০ শয্যার অবকাঠামো নির্মাণসহ এই হাসপাতালে সিসিইউ ও আইসিইউ সংযোজনে অর্থ বরাদ্দ হয়ে আছে দুই বছরের উপরে হয়। কিন্তু এর জন্য ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এই দুই বছরে এটি বাস্তবায়নে কোনো কাজ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ সময় পর হলেও এ সংক্রান্ত জটিলতা কাটতে শুরু করেছে। ডাঃ দীপু মনি এ ব্যাপারে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বেশ ক�বার সংসদেও এ বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন।
২৫ লক্ষাধিক মানুষ অধ্যুষিত চাঁদপুর জেলার সরকারি সবচে� বড় হাসপাতাল হচ্ছে চাঁদপুর শহরে অবস্থিত ২৫০শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল। অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালটিতে সিসিইউ (করনারী কেয়ার ইউনিট) ও আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) না থাকায় এই বিশাল জনগোষ্ঠী হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে বড় সমস্যায় পড়ে। হার্টের রোগীদের জন্য সিসিইউ তথা হৃৎপিন্ড পরিচর্যা কেন্দ্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর আইসিইউ তথা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র হচ্ছে মানুষ যখন মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে যায় তখন সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে যেখানে রাখা হয়। অর্থাৎ মানুষ যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যায় তখন তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় চাঁদপুরে না থাকায় জেলাবাসী এর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং হার্টের রোগীদের নিয়ে হঠাৎ বিপাকে পড়ে যায়। দেখা গেছে যে, হঠাৎ যারা হার্ট অ্যাটাক করে তাদেরকে ঢাকা বা কুমিল্লা নেয়ার পথে অনেকেই মারা যান। চাঁদপুরে যদি এ ব্যবস্থা থাকতো তাহলে হার্টের রোগীদের তাৎক্ষণিক সেবা দেয়া যেতো। মৃত্যুর আগে মানুষ অন্তত যথাযথ চিকিৎসা নেয়ার সান্ত্বনাটুকু পেতো।
এই গুরুত্বপূর্ণ সিসিইউ ও আইসিইউ স্থাপনের ব্যাপারেও দুই বছরের উপরে হয় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হয়ে আছে। কিন্তু জায়গা সংকটের অজুহাতে এটিও এতো দিন আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় বেশ ক�বার লেখালেখি হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন দপ্তরে অনেক চিঠি চালাচালি হয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে ২ বার উত্থাপন করেছেন। তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ সিসিইউ ও আইসিইউ স্থাপন, মেডিকেল কলেজ নির্মাণ ও নৌ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এছাড়া তিনি সংসদে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ বক্তব্যের সময়ও এ বিষয়গুলো উত্থাপন করেন। এরপরই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুরুত্বের সাথে তা দেখছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিঠি আসে অন্তত ৮ শয্যার একটি অবকাঠামো তৈরি করতে, যাতে সিসিইউ ও আইসিইউ স্থাপন করা যায়। সে আলোকে ডাঃ দীপু মনি গতকাল শনিবার হাসপাতাল এলাকা পরিদর্শন করে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। এ সময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ প্রদীপ কুমার দত্ত, চাঁদপুর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহমুদ কবীরসহ হাসপাতালের ক�জন ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সবাই তখন সম্ভাব্য স্থানে সিসিইউ ও আইসিইউ স্থাপনের ব্যাপারে মতামত দেন। ডাঃ দীপু মনি তখন ৫০ শয্যার অবকাঠামো নির্মাণ এবং সিসিইউ ও আইসিইউ স্থাপনের ব্যাপারে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। আশা করা যাচ্ছে এ ব্যাপারে সহসাই কিছু একটা দেখা যাবে।