মিজান লিটন
আজ ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা-২০১৪। এ বছর চাঁদপুর জেলায় ১শ� ৫০টি কেন্দ্রে মোট ৬০ হাজার ৮শ� ৬৬ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে অংশ নেবে ৫৩ হাজার ৫শ� ৩০ জন আর ইবতেদায়ী সমাপনীতে অংশ নেবে ৭ হাজার ৩শ� ৩৩ জন পরীক্ষার্থী। এই বিপুল সংখ্যক শিশুর কলকাকলীতে মুখরিত থাকবে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো। ছোট্ট সোনামনিরা তাদের শিক্ষা জীবনের প্রথম সার্টিফিকেট পরীক্ষায় আজ অংশ নেবে। এদিকে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, গত বছরের তুলনায় এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে ইবতেদায়ী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।
২০১৩ সালে জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার্থী ছিলো ৫২ হাজার ৯শ� ৮১ জন। গত বছরের চেয়ে এ বছর শিক্ষার্থী বেড়েছে ৫শ� ৪৯ জন। অন্যদিকে গত ক� বছরের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে এবারো কমেছে ইবতেদায়ী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। ২০১৩ সালে ৭ হাজার ৪শ� ৯৪ জন ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও এবার কমেছে ১৫৮ জন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১ সালে ইবতেদায়ী পরীক্ষার্থী ছিলো ৭ হাজার ৯শ� ২৮ জন। ২০১২ সালে যা ১শ� ৬২ কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭শ� ৬৬ জনে। সে হিসেবে গত ৪ বছরে ইবতেদায়ী সমাপনীতে মোট পরীক্ষার্থী কমেছে ৫শ� ৯২ জন। প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে কমছে ইবতেদায়ী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁদপুর সদরের ওসমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে যে হারে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সে হারে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা হাতে গোণা। যেমন- চাঁদপুর সদরের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, এ উপজেলায় মাত্র তিন-চারটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। পক্ষান্তরে প্রাইমারি স্কুল আছে অসংখ্য। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সকলের দোরগোড়ায় থাকলেও ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেভাবে পৌঁছতে পারেনি। ফলে ইবতেদায়ী পড়তে হলে শিক্ষার্থীকে দূরে পড়তে যেতে হয়। এ কারণেই প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে, আর কমে যাচ্ছে ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।
অন্যদিকে প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শিক্ষার্থী সংখ্যা। বিগত ৪ বছরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৬শ� ৬৬ জন। ২০১১ সালে জেলায় প্রাথমিক সমাপনীতে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৪৬ হাজার ৮শ� ৬৪ জন। যা ২০১২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৭শ� ২৪ জনে। ২০১৩ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ৫২ হাজার ৯শ� ৮১ জন। আর গত বছরের চেয়ে এবার ৫শ� ৪৯ জন শিক্ষার্থী বেড়ে মোট পরীক্ষার্থী দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৫শ� ৩০ জনে। এর ফলে একদিকে যেমন কমে এসেছে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী সংখ্যা, তেমনি প্রায় সব শিশুই পাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় চাঁদপুর সদর থেকে ৯ হাজার ৯শ� ৫৬ জন, কচুয়া থেকে ৮ হাজার ৫শ� ৩৫ জন, হাজীগঞ্জ থেকে ৭ হাজার ৫শ� ৭৭ জন, হাইমচর থেকে ২ হাজার ৪শ� ২০ জন, শাহ্রাস্তি থেকে ৪ হাজার ৬শ� ৫৭ জন, ফরিদগঞ্জ থেকে ৮ হাজার ৭শ� ৯৫ জন, মতলব দক্ষিণ থেকে ৪ হাজার ৬শ� ১৬ জন এবং মতলব উত্তর থেকে ৬ হাজার ৯শ� ৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। ইবতেদায়ীতে অংশ নিচ্ছে চাঁদপুর সদর থেকে ১ হাজার ১শ� ৪৯ জন, কচুয়া থেকে ১ হাজার ৬শ� ৭৫ জন, হাজীগঞ্জ থেকে ১ হাজার ২০ জন, হাইমচর থেকে ৩শ� ৫ জন, শাহ্রাস্তি থেকে ৭শ� ৪৯ জন, ফরিদগঞ্জ থেকে ১ হাজার ৬শ� ৭ জন, মতলব দক্ষিণ থেকে ৬শ� ৯৮ জন এবং মতলব উত্তর থেকে ৩শ� ৩৩ জন পরীক্ষার্থী।
উপজেলাভিত্তিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত দু� বছরে কোনো কোনো উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। ২০১২ সালে মতলব উত্তর থেকে এ সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো ৮ হাজার ৯শ� ৯ জন পরীক্ষার্থী। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে এ বছর এ উপজেলা থেকে ১ হাজার ৯শ� ৩৫ জন শিক্ষার্থী কমেছে। এ বছর এখানকার পরীক্ষার্থী ৬ হাজার ৯শ� ৭৪ জন। গত দু বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থী বেড়েছে কচুয়া, হাজীগঞ্জ, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। কমেছে চাঁদপুর সদর, শাহ্রাস্তি ও মতলব উত্তরের পরীক্ষার্থী সংখ্যা। ইবতেদায়ী পরীক্ষায় গত দু বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী বেড়েছে কচুয়া, শাহ্রাস্তি, মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। চাঁদপুর সদর উপজেলায় ২০১২ সালে পরীক্ষার্থী ছিলো ১ হাজার ২শ� ৫৮ জন, যা এ বছর থেকে ১শ� ৯ জন পরীক্ষার্থী কম, হাজীগঞ্জে একই বছর পরীক্ষার্থী ছিলো ১ হাজার ১শ� ৬১ জন যা এ বছর থেকে ১শ� ৪১ জন কম, ফরিদগঞ্জে ২০১২ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ৭শ� ৭৫ জন যা এবার থেকে ১শ� ৬৮ জন কম।