আজ মহান বিজয় দিবস। বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশের দিন। এদিনই অর্জিত হয়েছিল স্বাধীন জাতি হিসেবে ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেয়ার দিন। ঐতিহাসিক এই দিনে ভোর থেকেই সারা দেশের লক্ষ-কোটি প্রাণ আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পরিপূর্ণতায় নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের আজকের দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয় পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
বিনম্র শ্রদ্ধায় দিবসটি পালন করছে বাংলাদেশের আপামর মানুষ। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নেমেছে জনতার ঢল। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। রাজধানীতে সকালে শুরু হয়েছে তোপধ্বনির মাধ্যমে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারো বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে। সারা দিনই চলবে বীর শহীদদের স্মরণ।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরান বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ দেশের সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোয় প্রচারিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোয় পরিবেশন করা হবে উন্নত মানের খাবার।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকালে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। পরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সিনিয়র নেতারা ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হবে।