স্টাফ রিপোর্টার
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ দেহ-মন শিহরিত ও দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হওয়া এই গানটি যে দিবসকে ঘিরে সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। বাঙালির মায়ের ভাষা ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার দাবিতে ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছিলো সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর ও জব্বারসহ বাংলার আরো বহু দামাল ছেলে। এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে আলোকিত সড়ক তারা নির্মাণ করে গেছেন, সেই পথ ধরেই একাত্তরে এসেছে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা। আর বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভাষার জন্যে কোনো জাতি প্রাণ দিয়েছে এই দৃষ্টান্ত শুধু বাঙালিরই। প্রতি বছর এই দিবসটি প্রাণের উচ্ছ্বাসে উদ্যাপন করে থাকে বাঙালি। শুধু বাঙালিই নয়, বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ বাঙালির এই দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ১৯৯৯ সাল থেকে। এবারো এই দিবসটি ঘিরে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও দিবসটি যথাযথভাবে উদ্যাপন করবে। তবে এবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় বইমেলা হচ্ছে না।
দিবসকে ঘিরে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসের প্রথম প্রহর গতকাল ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শহরবাসী পালন করে জাগরণী অনুষ্ঠান। এ সময় থেকে চাঁদপুর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদীতে ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ শুরু হয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পৌর পরিষদ, স্বাস্থ্য বিভাগ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
আজ ভোর ৬টায় শহীদ দিবসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সংগীত পরিবেশন সহকারে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রভাতফেরি বের করা হবে। স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতিসহ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে প্রভাত ফেরিতে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও প্রভাত ফেরি বের করবে। জেলার সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা, ভাষা শহীদদের স্মরণে সকল স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা এবং সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হবে।
আজ বিকেল ৩টায় চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে ছবি অাঁকা, সঙ্গীত, কবিতা ও সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসন কর্তৃক এবং আলোচনা উপ-কমিটির ব্যবস্থাপনায় ভাষা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে। রাত সাড়ে ৭টায় সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির ব্যবস্থাপনায় এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়েও অমর একুশে স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। আর এবারই প্রথম চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে পাঁচ দিনব্যাপী মহান একুশের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া দিবসটির স্মরণে চাঁদপুর পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় শহরের নতুনবাজার মোড়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর, পৌর ভবন, শপথ চত্বর, ইলিশ চত্বর, চিত্রলেখার মোড়, সড়ক দ্বীপ ও বাস স্ট্যান্ডসহ অন্যান্য সড়ক বাংলা বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। চাঁদপুরের স্থানীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা বের করেছে।
পুরাণবাজার
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন পরিষদ পুরাণবাজার, চাঁদপুর পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করে। একুশের মূল অনুষ্ঠান শুরু ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে। রাত ১২টা ১ মিনিটে জাগরণী অনুষ্ঠান এবং একুশে ফেব্রুয়ারির সূচনা। আজ ভোর সাড়ে ৬টায় প্রভাত ফেরি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শহর প্রদক্ষিণ, সকাল সাড়ে ৭টায় শহীদ বেদীতে শপথ গ্রহণ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ, দুপুর দেড়টায় প্রত্যেক মসজিদে দোয়া ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা, বিকেল ৩টায় উদয়ন কচি-কাঁচার মেলার শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে নৃত্যানুষ্ঠান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও অনুষ্ঠান আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক নাছির উদ্দিন আহাম্মেদ।
রাত ৯টায় স্বদেশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পরিবেশনায় বিশেষ গণ সংগীতের অনুষ্ঠান। রাত সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপনী। উক্ত অনুষ্ঠানে সকল সংগঠন, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন পরিষদ পুরাণবাজারের সভাপতি ফয়েজ আহমদ মন্টু এবং মহাসচিব ব্যাংকার ও মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান।
জেলা আওয়ামী লীগ
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসের প্রথম প্রহর তথা গতকাল রাত ১২টার পর চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে নেতা-কর্মীরা জাগরণী মিছিল বের করে। আজ ভোর ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং বিকেল ৩টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল। এসব কর্মসূচিতে দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল।
জেলা বিএনপি
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা বিএনপি নিম্নলিখিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সকাল ৬টায় জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা ও কালো পতাকা উত্তোলন, সাড়ে ৬টায় দলীয় কার্যালয় থেকে প্রভাত ফেরি বের হবে। উক্ত প্রভাত ফেরি সফল করার জন্য জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আনোয়ার বাবলু।