চাঁদপুর প্রতিনিধি : প্রজন্মের উচ্ছ্বাস জয়ীতা তোমার মুখরতায়- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ২২ মার্চ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় সিডিএম নারী বিতর্ক উৎসব-২০১৩। চাঁদপুর ডিবেট মুভমেন্ট (সিডিএম)-এর আয়োজনে ও বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সহযোগিতায় দিনব্যাপী চাঁদপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে সদ্য প্রয়াত সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। উৎসব রূপান্তরিত হয় শোক সভায়।
এর পূর্বে শোক বার্তা পাঠ করেন পুরাণবাজার কলেজের উপাধ্যক্ষ ও সিডিএম উপদেষ্টা রতন কুমার মজুমদার।
পরে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তফা জব্বার। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, চাঁদপুর সুন্দর শহর, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সমৃদ্ধ এ শহর আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। এ শহরে বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়। গণতান্ত্রিক সমাজে বিতর্কের কোনো বিকল্প নেই। বিতর্ক যেমনি করে নিজের মতো প্রকাশ করার ক্ষমতাকে উজ্জ্বীবিত করে তেমনি করে অন্যের বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করার দক্ষতা প্রদান করে। নারীদের জন্য আজকের এ বিতর্ক উৎসব একটি মহৎ উদ্যোগ।
একজন পুরুষ শিক্ষিত হয়ে একটি চাকুরি করে। আর একজন নারী শিক্ষিত হয়ে শুধু চাকুরিই করে না, সে একটি পরিবারকে সাবলম্বী করে গড়ে তোলতে চেষ্টা করে। সমাজের উন্নয়নে নারীদের অবদান অনেক বেশি। আমার মা যদি আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা না করতেন, তাহলে আজকের এ অবস্থানে আমি আসতে পারতাম না। কোনো এক সময় ছিলো, যে সময় নারীদের শিক্ষায় সামাজিকতায় এগিয়ে আসার সুযোগ ছিলো না। আজ সেই ক্ষেত্রে নারীরা অনেক ভাগ্যবান। তাদের পূর্ব পুরুষরা তাদের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে গেছেন। যেখানে তারা নির্ভয়ে শিক্ষা অর্জন করতে পারছেন। নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের হাতে রয়েছে এখন প্রযুক্তিগত জ্ঞান। তারাই গড়ে তোলবে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে সে শুধু এখন সামনে এগিয়ে যাবে। বর্তমানে আমাদের তরুণীরা এগিয়ে যাচ্ছে সর্বক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার ছাপ রেখে। বিতর্কের মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞান, ব্যক্তিত্ব কলা-কৌশল, উপস্থাপনা দক্ষতা, বার্ষিক উৎকর্ষতা নারীদের যোগ্য করতে সহায়তা করে। মেয়েদেরকে সাহসী, যুক্তিবান ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার জন্য বিতর্ক প্রতিযোগিতা অসামান্য অবদান রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, সিডিএম নারী বিতর্ক উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী। চাঁদপুর বিতর্ক আন্দোলনের (সিডিএম) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মনোহর আলী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, সিডিএমের উপদেষ্টা প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
সিডিএম নারী বিতর্ক উৎসবের চেয়ারম্যান এবং চাঁদপুর ডিবেট মুভমেন্টের সভাপতি নাজিয়া আহমেদ পিকসীর সভাপ্রধানে ও সিডিএম নারী বিতর্ক উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী হাবিবুর রহমান পাটওয়ারী পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর ডিবেট মুভমেন্টের (সিডিএম) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইবনে আজম সাবি্বর, সিডিএম উপদেষ্টা কল্পনা সরকার, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ মোঃ শুকরানা এবং সিডিএম-এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন। অনুষ্ঠানে সিডিএম গুণীজন সম্মাননা গ্রহণ করেন স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী। এ ছাড়াও অতিথিবৃন্দ সিডিএম নারী বিতর্ক উৎসব ২০১৩-এর বিশেষ প্রকাশনা ‘মুক্তির ধারাপত’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন। এ ছাড়াও এহতেরামুল রাকিব সম্পাদিত ভেষজ দাওয়াই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই অনুষ্ঠিত হয় সনাতনী ধারার প্রদর্শনী বিতর্ক। ‘নারী উন্নয়নের একমাত্র অন্তরায় নারীরাই’-এই বিষয়ে মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ অংশ নেয়। এরপর আমার দেশের নারীরাই সেরা-বিষয়ের উপর অনুষ্ঠিত হয় আঞ্চলিক বিতর্ক। সিডিএম-এর উপদেষ্টা রাধেশ্যাম কুরীর সঞ্চালনায় নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং চাঁদপুর অঞ্চলের প্রতিনিধিরা বিতর্কে অংশ নেয়।
মধ্যাহ্ন ভোজের পর ছাত্র-শিক্ষকের অংশগ্রহণে ‘শক্তি দিয়াছে, প্রেরণা দিয়াছে, বিজয়া লক্ষ্মী নারী’ বিষয়ের উপর বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ প্রদর্শনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় সংসদীয় ধারার। সংসদে প্রস্তাবনা করা হয় আত্নোপলদ্ধি নারী উন্নয়নের মূল মন্ত্র। সরকারি দল এবং বিরোধী দলের সুচিন্তিত যুক্তি, তত্ত্ব ও যুক্তির খণ্ডন সংসদকে করে তোলে কার্যকর। সমাপনী ক্ষণে সিডিএম উপদেষ্টা এবং বাবুরহাট কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেন অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এবং আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সিডিএম-এর কর্মশালা সম্পাদক মোঃ আব্দুস সালাম খান এবং গীতা পাঠ করেন সিডিএম-এর উপদেষ্টা রাধেশ্যাম কুরী।