সাখাওয়াত হোসেন মিথুনঃ
আধুনিক যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে এখনো টিকে আছে হাজীগঞ্জ উপজেলার গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা। আর এসব নকশিকাঁথার সাথে জড়িত গৃহবধূ ও ষাটোর্ধ বৃদ্ধরা সংসারের কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন রং-বেরঙের কাঁথা সেলাই করে তাদের সংসারের বাড়তি আয়ের উৎস তৈরি করেছে। কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ে ফোঁড়ে লুকিয়ে আছে ওদের সুখ দুঃখের ও হাসিকান্নার করুণ কাহিনী। আধুনিক যুগে যখন কাঁথার পরিবর্তে দেশী-বিদেশী কম্বল তৈরি হচ্ছে, দেশের মার্কেটগুলোতে সেগুলোর চাহিদারও কমতি নেই। তারপরও গ্রামগঞ্জের গৃহবধূদের হাতের তৈরি রং-বেরঙের নকশিকাঁথা যেন আজও মানুষের চাহিদার শীর্ষে। গ্রামগঞ্জের খেটে খাওয়া পরিবারের গৃহবধূরা ও ষাটোর্ধ বৃদ্ধরা আজও সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বসে শুধু আড্ডাই দেয় না, তারা তাদের গৃহকর্তার আয়ের পাশাপাশি বাড়তি সময়টুকু কাঁথা সেলাই করে সংসারে ফিরিয়ে এনেছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ। কথা হয় এমনি কয়েকজনের সাথে। হাজীগঞ্জ উপজেলার দোয়ালিয়া গ্রামের জোসনা বেগম জানান, জমিজমা বলে তাদের কিছু নেই। সংসারে স্বামী-স্ত্রীর পাশাপাশি ৪ কন্যা ও ২ পুত্র। সংসার নামের ঘানি টানতে তার গৃহকর্তা যখন ব্যর্থ, তখন জোসনা বেগম সংসারে হাঁস-মুরগি পালনের পাশপাশি কাঁথা সেলাই করে সংসার চালায়। প্রতি কাঁথায় সুতা ও কাপড় বাবদ ৭-৮শ’ টাকা খরচ হলেও সেই কাঁথা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে। মাতৈন এলাকার জরিনা বেগম (৬২), জাহেদা বেগম (৬৫), তারাভানু বেওয়া (৩৫) জানায় সংসারে আয় রোজগার করার মত কেউ নেই। বয়স্কভাতাও মেলেনি তাদের ভাগ্যে। কাঁথা সেলাই করে সংসার নামের ঘানি টানে তারা। এনায়েতপুর গ্রামের পার্বতী রাণী (৭২), নন্দ রাণী (৫৬), শেফালী বালা (৩২), স্বপনা রাণী (৩৫) জানায় সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাঁথা সেলাই করে ছেলেময়েদের পড়াশুনার খরচ ও নিজের জন্য তেল-সাবান কেনে তারা। প্রতিটি কাঁথা সেলাই করতে তাদের সময় লাগে এক থেকে দেড় মাস। খরচ হয় সুতা ও কাপড়ে ৮-৯’শ টাকা। কাঁথা বিক্রি করে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এরা জানায়, বাড়তি সময়টুকু যখন তাদের কাটে না, তখন তারা কাঁথা সেলাই করে। এ সময় পাড়া প্রতিবেশীরা তাদের সাথে এসে সংসারের সুখ-দুঃখের নানা গল্প গুজবের আড্ডা জমায়। এর মধ্য দিয়ে তাদের কাঁথা সেলাই সম্পন্ন হয়।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১৩ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।