এম.এইচ.মাহিনঃ
১৬ মে শেষ বারের মত মাকে কদমবুচি করি উঠানের উপর একটা আম গাছের নীচে।পেটের দায়ে আপন করে ছিন্ন চলে আসি ঢাকায় প্রবাস জীবনে। মায়ের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়, অনেকটা দূরলাপন।যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠা , পরিবারের ছোট হওয়ায় সবার কা্ছ হতেই ভালোবাসা পেতাম।মায়ের সাথে আমার রোজ কথা হতো ,তা না হলে মা আমার উপর রাগ করতেন।প্রবাস জীবন দীর্ঘ ৩মাস কাটানোর পর ১১ আগস্ট নিয়মমাফিক আমার মুঠোফোন বেজে উঠে, আমার ধারণা আজ বুঝি মায়ের সাথে আলাপনটা দেরি হয়ে গেল,আজ আমার মা না, আমার কোন এক আত্নীয় আমাকে বলল তোমার মায়ের অবস্থা ভালো না বাড়ি ফিরতে হবে। তখন রাত্র ১০টা বাজে, আমি থাকি ঢাকার মিরপুরে , রাত্রেই রওনা সাড়ে এগারটার মধ্যে সদরঘাট ।লঞ্চ ছাড়বে রাত ১২টায় । আমার সাথে যাওয়া আপনজন কে কোথায় আছে জানি না আমি তাদের থেকে একটু দূরে সরে নীরবে আকাশেপানে সময় কাটালাম । আমি বিমর্ষ আমার ভিতর অবস্থানতো আর লঞ্চের লোক জানে না । নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি বাবা- মা দুজনকে হারিয়ে এখন আমি একজন অনাথ। নানা ভাবনার মধ্যেই ফযর নামাযের আযানের সময়ই লঞ্চ ঘাটে নোঙ্গর ফেলে। বাড়ির মাইল খানেক দূর হতেই বেদনার করুণ বাঁশির সুর লাগে আমার হৃদয়ে । আমার আর বুঝতে বাকী নেই, মা আমার পৃথিবী বিয়োজন।
গ্রামের বাড়ি অন্ধকার, রাত্রে দেখি লোকের আনাগোনা, যার সাথেই দেখা হয় কেউ আমাকে ভালো মন্দ কিছু বলছে না। বাড়িতে পা রাখার পর কিযে কান্নার আহাজারি। মাকে সাদা কাফনে ঢেকে রেখেছে। পাশে বসে লোকজন দোয়া-দরুদ পড়ছে। রাত্ পোয়াবার সাথে সাথে মসজিদ মাইকে ঘোষণা সাহেদের মার জানাজা সকাল ১০ ঘটিকার সময় অনুষ্ঠিত হবে এবং পারিবারিক কবরস্থানে মাটি দেওয়া হবে।মায়ের জানাজা পড়ার পূর্বে আমি উপস্থিত জনতার সামনে বললাম আমার মা যদি চলার পথে আপনাদের সাথে কোনরুপ অন্যায় করে থাকে তা হলে আমি তার সন্তান হিসাবে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি । আর কেউ যদি কোন লেনদেন পাওনা থাকেন তা হলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন আমি মায়ের দেনা শোধ করে দেব। মাকে এবার বিদায় বেলার পালকীতে করে চারজনা কাধেঁ করে নিয়ে চলছে। আমি ঠিক অন্তিম পর্যায় মায়ের মুখটা শেষবারের মত দেখতে চাইলাম বিধান অনুযায়ী নিষেধ আছে বলে মাকে আর দেখা হল না শেষবারের মত। তবে মাকে মাটির দেওয়ার সময় আমি নিজের কাছে মায়ের কবরের একটুকরা মাটি রেখে দেই।
মা হারানো বেদনা দ্রুত ভুলে থাকার জন্য আমি বাড়ি- ঘর দ্রুত ত্যাগ করি।আর সাথে করে নিয়ে আসি মায়ের কবরের কিছু মাটি , সে মাটি আমার সাথে দীর্ঘদিন ছিল তখনও মনে হয়নি মা আমি তোমাকে হারিয়েছি , কিভাবে যে সে মাটি আমার কাছ থেকে বিদায় নিল আমি টেরও পেলাম না। এখন আমার বাড়ি যাওয়া হয় খুব কম , বড়জোর দুই ঈদে দুবার বাড়ি যাই।আমার মা খুব পর্দাশালী ছিলেন এবং নামায রোজা ছাড়া তা কাছে বাজে কিছুর প্রশয় ছিল না। আমার বুনিয়াদ শিক্ষক বলতে মায়েই। পরিতাপের বিষয় যে আম গাছটার নীচে মায়ের চরন ছুঁয়ে সালাম করছিলাম, সে আম গাছে পূর্বে আম ধরতো এখন আর আম ধরে না । আমার ধারনা আমার মত কি প্রকৃতি ও মায়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করল। মা আমাকে পরান বলে ডাকত, আমি যদি মায়েরকাছে যুক্তি চাইতাম তুমি আমাকে পরান বলে ডাক কেন , মা বলত তুই যেদিন আমায় ছেড়ে চলে যাবি সেদিনই আমার দেহ নিথর হবে। আজ আমার প্রশ্ন মা , সে পরান ছাড়া তুমি কিভাবে দীর্ঘ ৭ টা বছর কাটায়ও , মা জানার খুব ইচেছ হয় ,তাই আমি উপরওয়ালার কাছে আরজি করেছি যদি আর একবার তোমাকে মা দেখার সুযোগ দেয়া হয তা হলে জানা হবে মা তোমায় ছাড়া আমি কতটা কষ্টে ছিলাম এবং তুমিও মা আমায় ছাড়া কতটা কষ্টে ছিলে। তাই আজ আমার মন বলছে আর কি পাব দেখা।