প্রতিনিধি
চাঁদপুর পৌর এলাকাসহ আশপাশের ইউনিয়ন গ্রামগুলো এবং উপজেলা সদর ও অন্যান্য পৌর এলাকায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। ঈদকে সামনে রেখে ইয়াবার চালান চাঁদপুরে ঢুকে পড়েছে। সম্প্রতি পুলিশ সুপারের নির্দেশে মাদক বিরোধী বেশ কিছু অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে চিহ্নিত অনেক মাদক বিক্রেতাকে আটকও করা হয়। কিন্তু আইনের ফাঁকে এবং পুলিশের দুর্বল এজাহারে আটক মাদক বিক্রেতা অনেকেই জামিনে বের হয়ে আবার মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে পড়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্তরাও এক/দেড় মাসের মধ্যে আপিল করে ছাড়া পেয়ে গেছে। এখন সবচেয়ে বেশি ছড়াছড়ি ইয়াবা। এর সাথে ফেন্সিডিল ও গাঁজাও থাকছে। যারা ইয়াবা সেবন করছে তারাও ইয়াবা বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ছে এমন তথ্য জানা যায়। মঙ্গলবার ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা বাজারের মাদক বিক্রেতা বাবলুকে ২০ পিচ ইয়াবাসহ আটক করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চান্দ্রা বাজারের পূর্ব মাথায় ফরিদ মার্কেটের আশপাশে ইউনুছ রাঢ়ীর মেয়ে নার্গিস (২৫) ও এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা কবির জমাদার দীর্ঘ দিন যাবৎ ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে আসছে। তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কবির আবু জমাদারের ছেলে। এছাড়া বাগাদী গ্রামের কালা মুনসুর, আবুল খায়ের, লিটন গাজী মাদক বিক্রি করছে। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন রেলওয়ে এলাকা, জামতলা, প্রফেসর পাড়া, কোড়ালিয়া নদীর পাড়, বাসস্ট্যান্ড, চক্ষু হাসপাতাল, চেয়ারম্যান ঘাট, কোর্ট প্রাঙ্গণ, ওয়্যারলেস বাজার, বাবুরহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় মাদক বিক্রির স্পট রয়েছে। চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ সোমবার শহরের স্বর্ণ মার্কেট এলাকায় এক সাইকেল আরোহীর দেহ তল্লাশি করে ৭ পিস ইয়াবাসহ তাকে আটক করে। সদর উপজেলার বালিয়া ও দুর্গাদী বাজার এলাকায় ইয়াবার বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে একটি সূত্র জানায়। এ এলাকার বোরকা রিপন, শুক্কুরসহ বেশ ক’জন মাদক বিক্রেতা চাঁদপুর শহর ও ফরিদগঞ্জে ইয়াবা সরবরাহ করছে। পুলিশের কতিপয় সদস্য এখান থেকে মাদক বিক্রির জন্য টাকা পায় এমন কথাও গ্রামবাসীর কাছে জানা।
পুরাণবাজার এলাকায় আবারও ইয়াবা, গাঁজা এবং বাংলা মদ বিক্রি চলছে। বৌ-বাজার এলাকার টগরী বেগম ও গাঁজা শুক্কুরার স্ত্রী বাড়িতে মাদক বিক্রি করছে। লোহারপুল এলাকায় আল-আমিন, টিন বাজার রাস্তার মাথায় সাইফুল ইয়াবা বিক্রি করছে। এখানে ধুনকার আলমগীর নামে এক যুবক শ্বশুর বাড়ি হাজীগঞ্জ বাকিলা থেকে ইয়াবা সরবরাহ করছে বলে একটি সূত্র জানায়। এছাড়া ম্যারকাটিজ রোড, রনাগোয়াল, জাফরাবাদ, বাবুর্চি ঘাট, পুরাণবাজার নতুন রাস্তায় নতুন নতুন অনেকে মাদক বিক্রি করছে। চাঁদপুর জেলার হাইমচর, মতলব উত্তর, দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, শাহ্রাস্তি ও কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে ইয়াবা ঢুকে পড়ছে। অন্যান্য মাদকের সাথে ইয়াবা বেশি বিক্রি হয়। ইয়াবা ও গাঁজার নেশায় হাবুডুবু খাচ্ছে এ জেলার যুব সমাজ। পরিবারের কারো সন্তানই এখন মাদকের ছোবল থেকে নিরাপদ নয়। আকারে ক্ষুদ্র হওয়ায় ইয়াবা ট্যাবলেটের বড় সিন্ডিকেট কাজ করলেও প্রশাসন সেই সিন্ডিকেট ধরতে পারছে না। বাংলা মদ দামে সস্তা হওয়ায় কাউন্টার থেকে রমজান মাসেও মদ বিক্রি হচ্ছে। এ মদ পান করে অনেককে পুরাণবাজারের রাস্তায় মাতলামী করতেও দেখা যায়। অবৈধভাবে অনেকে মদ বিক্রি করছে এবং নিয়ম-নীতি না মেনে কাউন্টারে মদ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটা ও যাত্রী সাধারণের নিরাপদ বাড়ি ফেরার কাজে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সুযোগে সক্রিয় মাদক সিন্ডিকেট। ডিবি পুলিশ ও ফাঁড়ি পুলিশকে কাজে লাগিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণে ঈদের এ ক’টা দিন অভিযান পরিচালনা অপরিহার্য বলে সচেতন মহল মনে করছে।