আবদুল্লাহ আল মামুন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা পরিষদ প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। তৃণমূল পর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে নীতিগত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা থেকে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাদ দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে। এর ফলে নির্বাচনে আগ্রহী বেশ কিছু জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত জেলা পরিষদ প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাদ পড়বেন। বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া জেলা পরিষদ প্রশাসকদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় পর্যায়ের নেতা। আবার অনেকে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছেন। নীতিগত এ সিদ্ধান্তের পর আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ) সংশোধনের জন্য প্রস্তাব তৈরির উদ্যোগ নেয়। কয়েক দফা বৈঠক করে প্রস্তাবে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাইরে রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রবল বিরোধিতায় এ প্রস্তাব এখনো নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়নি।
শাসক দল আওয়ামী লীগ অবশ্য দুটি আসনের উপনির্বাচনে দুজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে মনোনয়ন দিয়েছে। এদের একজন নওগাঁর আবদুল মালেক, অন্যজন বরগুনার শওকত হাসানুর রহমান রিমন। আবদুল জলিল ও গোলাম সবুর টুলুর মৃত্যু হলে শূন্য ঘোষিত ওই দুটি আসনে দুই উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। নির্বাচনে দুজনই জয়ী হয়েছেন।
সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি এ সরকারের আমলে একযোগে ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩৪৭টি উপজেলায় জয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরা। বিএনপি জয়ী হয় ৮১টি উপজেলায় এবং জামায়াত ২০টি উপজেলায়। আগামী এপ্রিলে তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। ৬৪ জেলার ৬১টিতে জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পান আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগের এ নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও কৃৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তাই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে তিনি জানান। হাওলাদার দাবি করেন, সংসদ সদস্যদের অনেকেই এলাকায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। মনোনয়ন অনিশ্চিত জেনে তারাই দলের নীতিনির্ধারকদের ভুল বুঝিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করছেন।
হারুনার রশিদ হাওলাদারের এ অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক নীতিনির্ধারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসক দলের ওই নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণেই এবার কমপক্ষে শতাধিক এমপি দলের মনোনয়ন পাবেন না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল প্রভাবিত হলে জনবিচ্ছিন্ন এমপিরা মনোনয়ন পেতেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি গণভবনে দেশের বিভিন্ন জেলার নেতাদের যে পরীক্ষা নেয়া হয়, তার মূল্যায়ন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। খাতা মূল্যায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তৃণমূল নেতাদের সুপারিশ করা তিন প্রার্থীর তালিকায় জেলা পরিষদ প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের নাম থাকলে তা বাদ দেয়া হচ্ছে।