প্রতিনিধি
চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই চাঁদপুর জেলায় নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে- কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এমন ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ও হিসেব-নিকেষ অনেকগুণ বেড়ে গেছে। মাঠে-ময়দানে বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরই বিচরণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির ব্যাপারে এখনো পরিষ্কারভাবে কোনো কিছু শোনা যাচ্ছে না। তবে তারা চাঁদপুরে এককভাবে নির্বাচন করবে কি করবে না সেটি কয়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২য় দফা ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চাঁদপুর সদরসহ এ জেলার পাঁচ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন দলীয় ব্যানারে এবং দলের প্রতীক ব্যবহার করার বিধান না থাকলেও দলের প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকে। শুরু থেকে এ নির্বাচন অঘোষিতভাবে দলের ব্যানারেই হয়ে আসছে। এবারো তেমনটাই হবে। চাঁদপুর সদরে বড় দু’ দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন পুরোদমে মাঠে। তারা দলের একক প্রার্থী হিসেবে সমর্থন আদায়ের চেষ্টার পাশাপাশি মাঠেও জনগণের সমর্থন পেতে দিন-রাত গণসংযোগ করছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও দলের সমর্থন আদায়ে স্থানীয়ভাবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে লবিং চালাচ্ছেন। তারা দলের শীর্ষ নেতাদের বাসা-বাড়ি ছাড়ছেন না। তবে খুব সহসা অর্থাৎ ২-৩ দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে বলে উভয় দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে জানা গেছে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২ ফেব্রুয়ারি রোববার। আর প্রত্যাহারের শেষ দিন ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার।
২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে চাঁদপুর সদরে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে। আওয়ামী লীগের ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ ইউসুফ গাজী। আর বিএনপির ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান। নির্বাচনে ইউছুফ গাজী ৮০ হাজার ৬শ’ ১ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। আর দেওয়ান সফিকুজ্জামান পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৯শ’ ৪৪ ভোট। এবারো এ দু� দলের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে এরা দু� জনই থাকছেন বলে দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া উভয় দলের চেয়ারম্যান পদে আরো ক�জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জহিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান এবং জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আফজাল হোসেন ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল। এঁদের মধ্যে অ্যাডঃ জহিরুল ইসলাম গত নির্বাচনেও দলের সমর্থন পেতে প্রার্থিতা উপস্থাপন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, এবারো তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার জন্য সমর্থন চাইবেন। দল তাকে মূল্যায়ন করবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন। এ দিকে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান জানান, তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন না। নির্বাচন করলে চেয়ারম্যান পদে করবেন। এ ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই দলের সমর্থন চাইবেন। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই তিনি মানবেন বলে জানান।
চাঁদপুরে বিএনপির গ্রুপিং প্রকাশ্যে। আন্দোলন-সংগ্রাম সবই বিবদমান দু’ গ্রুপ পৃথকভাবে করেছে। এক গ্রুপ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে। আর অপর গ্রুপ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি জিএম ফজলুল হক, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান শাহীনের নেতৃত্বে। মমিন-মানিক গ্রুপ থেকে চেয়ারম্যান পদে দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান ও আফজাল হোসেনের নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত দেওয়ান সফিকই দলের সমর্থন পাবেন বলে অনেকটা নিশ্চিত। আর জিএম ফজলুল হক গ্রুপের ‘বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন চাঁদপুর জেলা�র ব্যানারে চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল। জুয়েল চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, ২-১ দিনের মধ্যে তারা চাঁদপুর প্রেসক্লাবে দলের ব্যানারে প্রেসব্রিফিং করে এ বিষয়ে পরিষ্কার করবেন।
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন : সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আরশাদ মিয়াজী ও সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাজমুল পাটওয়ারী। আর বিএনপি থেকে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান গাজী ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা বিএনপির সদস্য ও সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মানিকুর রহমান মানিকের নাম শোনা যাচ্ছে। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে গতবারের দু’ প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াও আরো ক’ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে সব কিছুই চলতি সপ্তাহে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে।