প্রতিনিধি=
যথাযোগ্য মর্যাদায় উৎসব মুখর পরিবেশে চাঁদপুরে ৪৩তম মহান বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন নিজস্ব উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবস উদযাপনব করে। তবে এবারের বিজয় দিবসের পূর্বে একাত্তরের একজন যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি কার্যকর হওয়ায় বিভিন্ন দল ও সাধারণ মানুষের মাঝে অন্য রকম এক উৎসবের আমেজ ছিলো। একই সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করার যে কোনো ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা রুখে দেয়ার দৃঢ় মনোবল দেখা গেছে জনগণের মাঝে।
চাঁদপুর শহরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছাড়াও জেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতে আলোচনা সভার কর্মসূচি থাকলেও এবার তা করা হয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিজয় মেলা মঞ্চে একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আলোচনা সভা করার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে এটি করা হয়নি। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। প্রতি বছর আলোচনা সভা হয়ে থাকলেও এবার না হওয়ায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে অঙ্গীকারের সামনে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির সূচনা করা হয়। এরপর শুরু হয় শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে �অঙ্গীকার� বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। প্রথমে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফরের নেতৃত্বে পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা পরিষদের কর্মকর্তাবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এমনিভাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, চাঁদপুর পৌর পরিষদ, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাসদ, গণফোরাম, চাঁদপুর রোটারী ক্লাব, সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক চাঁদপুরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে �অঙ্গীকার� বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পরদিন অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে যথাযথ মর্যাদার সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন। এ সময় পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফরসহ সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপর পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, রোভার স্কাউটস্, স্কাউটস্, গার্লস গাইড ও কমিউনিটি পুলিশসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিশু-কিশোর সংগঠন কুচকাওয়াজ ও সালাম প্রদর্শন করে। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের শিশু-কিশোররা শরীরচর্চা, ডিসপ্লে প্রদর্শন ও ক্রীড়া প্রদর্শন করে। এসব অনুষ্ঠানশেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সকাল ১১টায় চাঁদপুর সার্কিট হাউজে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসক একাদশ বনাম চাঁদপুর পৌরসভা একাদশ এবং একই সময় চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ মাঠে নারীদের ক্রীড়ানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। রাতে বিজয় মেলা মঞ্চে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ব্যবস্থাপনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন বিকেল থেকে বিজয় মেলায় মানুষের ঢল নামে। এ ছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শহরের শপথ চত্বর ও ইলিশ চত্বর আলোকসজ্জা করা হয়।