শহর প্রতিনিধি-
কন্দ্রীয়ভাবে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা তিন দিনব্যাপী হরতাল চাঁদপুরেও নজিরবিহীনভাবে পালিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও এ হরতালে বেশ চাঙ্গা ছিলো। সকলেই স্বতস্ফূর্তভাবে এ হরতাল পালনে অংশ নেয়। হরতালকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের সর্বত্র সহিংস ঘটনা ঘটে। বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি হাসপাতালও বাদ যায়নি হরতালকারী কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল কর্মীর হাত থেকে। দুঃখজনক হলো, এ হরতালে দীর্ঘদিনের শান্ত পুরাণবাজার এলাকা অশান্ত হয়ে উঠে। একটি নিরাপরাধ কিশোরকে ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার হতে হয়। সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যকার সংঘর্ষে আরজু ঢালী নামে এক কিশোর মারা যায়। এর ফলে চাঁদপুর শহরে দু’ দিন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। যদিও পুলিশ দাবি করেছে, সেদিন পুলিশ কোনো গুলি ছোঁড়েনি। আওয়ামী লীগ দাবি করেছে তারা এ ঘটনার সময় কাছে ছিলো না। কিশোর আরজু ইটের আঘাতে মারা গেছে। সে কীভাবে কার আঘাতে মারা গেছে সেটার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে চাঁদপুরে এ ধরণের নির্মমতা দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক। আরজু মারা যাওয়ার পর শুরু হয় তার লাশ নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি। বিএনপি দাবি করছে আরজু তাদের দলীয় কর্মী, যুবদল দাবি করছে সে যুবদল কর্মী, ছাত্রদল দাবি করছে আরজু তাদের ছাত্রদলের কর্মী ছিলো। আসলে আরজু বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল কোনোটিই করতো না। তার বাবা দরিদ্র রিক্সা চালক মকবুল ঢালী, তিনি বিএনপি সমর্থক। সে পুরাণবাজারে একটি জাল ফ্যাক্টরীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। দু’ দলের সংঘর্ষের বলি হলো দরিদ্র কিশোর আরজু। এ হত্যাকাণ্ডটি চাঁদপুরের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহাবস্থানে কলঙ্ক তিলক পরিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু আরজু ঢালী মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে এ কোন্ খেলা খেললেন জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একাংশের নেতা কাজী মোঃ ইব্রাহিম জুয়েল। তিনি বুধবার চাঁদপুর শহরে হরতালের ঘোষণা দিলেন। এ হরতালের ঘোষণায় চাঁদপুরবাসী হতবাক হয়েছে। খোদ জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ এ হরতাল সম্পর্কে কিছুই জানে না। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারী পরিচয়ে কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জুয়েল হরতালের ডাক দিতে পারে না। কেননা ২০০৮ সালে চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তাছাড়া চাঁদপুরে ১৮ দলীয় জোটের একটি সংগ্রাম কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির নীতি নির্ধারকরা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামের যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে। এর বাইরে কেউ তা পারে না।
অন্যদিকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল গাজী বাহার এ হরতাল সম্পর্কে বলেন, কোনো ব্যক্তির বেডরুম থেকে ব্যক্তি স্বার্থে যে কোনো কর্মসূচি দেয়া যায়। সামগ্রিকভাবে জনগণের অশানত্দি ও দুর্ভোগের মতো কিছু করা যায় না। ছাত্রদল সবসময় মাটি ও মানুষের পক্ষের দল। এরা সকলের কল্যাণে কাজ করে। তারা আরো বলেন, ছাত্রনেতা জুয়েল সব সময় আত্মপ্রচারে বিশ্বাসী। তিনি টানা ৪ দিনের নানা কর্মসূচিতে সকালবেলা রাস্তায় এসে ফটোসেশনের কাজ করে বাসায় ফিরেছেন। নিজের বাসায় হাতে গোণা ক’জন সংবাদকর্মীকে ডেকে এনে শুধুমাত্র আত্মপ্রচারের জন্য একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন যা ছাত্রদলের মূল আদর্শের সাথে সম্পূর্ণ প্রতারণার সামিল।
যার জন্য এ হরতালের ডাক দেয়া হলো সে আরজু ঢালী ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত বা তাদের কর্মী ছিলো না। এ হরতালের ডাক দিয়ে শহরের কিছু স্থানে সকালের দিকে জুয়েলের কিছু কর্মী সড়কে পিকেটিং ও মিছিল বের করে। শহরবাসীকে আতঙ্কিত করতে কোথাও কোথাও পিকেটাররা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। যদিও শহরবাসী এ হরতালকে ভালো চোখে দেখেননি। হরতালে সবই ছিলো স্বাভাবিক। তারপরও হরতালের ঘোষণা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজে দেখতে পেয়ে অনেকেই জরুরি কাজ থাকা সত্ত্বেও চাঁদপুর শহরে আসেননি। ডাক্তারের কাছে আসার প্রয়োজন হলেও আতঙ্কের কারণে আসেননি। যেখানে মূল দলের নেতারা এ হরতাল সম্পর্কে জানেন না, সেখানে ব্যক্তি বিশেষের এ ধরনের হরতাল আহ্বান করা চাঁদপুরবাসীর সাথে তামাশা করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। জুয়েলের মতো এ ধরনের হাস্যকর ও অযৌক্তিক হরতাল ঘোষণা আগামীতে অন্য কাউকে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় প্ররোচিত করাটা অসম্ভব কিছু নয়। তাই এ সকল ছাত্র নেতৃত্বের প্রতি সম্মান রেখে সচেতন মহল বলেছেন, দেশ ও জনস্বার্থের জন্য যখন রাজনীতি, তখন সে রাজনীতি যেনো জনগণের দুর্ভোগ ও ক্ষতি সাধন করে নিজের আত্মপ্রচারে না হয়। কেননা এ রাজনীতি সুফলের পরিবর্তে শুধু ধিক্কার পায় ও জনপ্রিয়তা হরাসে ব্যক্তির অস্তিত্ব বিলীন হয়।]
(