হাসানুজ্জামান,
দেশ স্বাধীনের মাত্র ২২ দিন পূর্বে দুঃসাহসিক এক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং সেদিনই তাঁকে মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু মহান স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও ওই পরিবার পায়নি কোনো সুবিধা, পায়নি কারো সহযোগিতা। ৩ ভাই মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহণ করেও পায়নি বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য। এমন এক অসহায় শহীদ পরিবার তাদের হৃদস্পর্ষি আকৃতি প্রকাশ করেছে। ঘটনাটি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চক্রার তালুকদার বাড়ির। জানা যায়, ওই বাড়ির আব্দুল লতিফ ও মালেকা বেগমের ৫ পুত্রের মধ্যে ৩ পুত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তারা হলেন, আব্দুল মতিন, আব্দুল বারেক ও আব্দুস সাত্তার। এদের মধ্যে বর্তমানে আব্দুস সাত্তার জীবিত রয়েছেন।
এ ব্যপারে আব্দুল সাত্তার বলেন, আব্দুল বারেক আমার ভাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আমরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সে সময় আব্দুল বারেক ভারতে দু’বার প্রশিক্ষন দিতে যায়। সে অত্যন্ত এক সাহসী যুবক ছিলো। তখন তার বয়স ছিলো ২৬ বছর। প্রশিক্ষন শেষে দেশে ফিরে যুদ্ধের ময়দানে ফিরে যায়। দেশ স্বাধীনের মাত্র ২২ দিন আগে জগতপুর বাজার থেকে অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর বুধবার বিকেল অনুমানিক ৪টার দিকে পাক-হানাদার বাহিনী আব্দুল বারেককে বন্দি করে নিয়ে যায় মুদাফ্ফরগঞ্জ বাজারে। সেখানে ওই দিনই রাত সাড়ে ৭টায় কাঠের লাক্ড়ি দ্বারা বেদম প্রহার শেষে কাতরানো অবস্থায় জীবন্ত মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করে তাকে। ২২ দিন পর দেশ স্বাধীন হলো। লাল-সবুজের পতাকা উড়তে লাগলো স্বাধীন দেশের মাটিতে। আর ওই মাটিতেই চির ঘুমন্ত আমার ভাই আব্দুল বারেক। বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর আমার বাবা আব্দুল লতিফ ও মা মালেকা বেগম স্বশরীরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে স্বাক্ষাত করেন এবং ওনার নির্দেশে স্বাধীনের দীর্ঘ ৭মাস পর মুদফ্ফরগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে মাটি খুঁড়ে আব্দুল বারেকের লাশের দেহবাশেষ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় উদ্ধার কাজে যারা অংশ নেন তাদের মধ্যে এখনও জীবিত রয়েছেন, চক্রা গ্রামের আসমত আলীর পুত্র হাকিম আলী ও আব্দুল আজিজ, কেরামত আলীর পুত্র, আরব আলী, আব্দুল লতিফের পুত্র আব্দুর রহিম তাদের সঙ্গী আমিন উদ্দীন।
ক্ষতি গ্রস্থ ও শহীদ পরিবারের সাহায্যর্থে স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক অন্যান্য শহীদ পরিবারের সাথে ১৯৭২ সালে ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার তৎকালিন স্থানীয় মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকার চেক গ্রহন করেন আমার পিতা আব্দুল লতিফ তালুকদার। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হৃদয় নিংরানো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা বর্তমানে জীবিত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার পরিজন পাচ্ছেন। অথচ আমরা মাত্র একটি পরিবার দেখভালের অভাবে অবহেলিত এবং সরকারী সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। তাই সকল স্বাক্ষ প্রমাণাদির আলোকে আমাদের পরিবারটিকে শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
এলাকাবাসী বলেন, পাক-হানাদার বাহিনী গোপন সূত্রে জেনে যায় আব্দুল বারেক একজন মুক্তিযোদ্ধা। তখন চারদিক ঘেরাও করে তাকে আটক করে নিয়ে যায় এবং নিঃসংশ ভাবে হত্যা করে। যা উক্ত এলাকার শত শত লোক এখনও জানেন। অথচ এই অসহায় পরিবারটি সরকারী যে কোনো দান-অনুদান অথবা পৃষ্ঠপোষকতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও জেলা নেতৃবৃন্দ উক্ত পরিবারটির খোঁজ খবর নিয়ে তাদের যথাযথ সম্মান দেয়ার অনুরোধ জানান তারা।