কচুয়া প্রতিনিধি-
সবাইকে কাঁদিয়ে চিরদিনের জন্যে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সকলের আপনজন, প্রিয় স্যার ও কচুয়া আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আলহাজ্ব আবুল হাছনাত (৭০)। গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে কিডনিজনিত জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লার মুন (প্রাইভেট) হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না—–রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৫ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের প্রথম জানাজা গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লাস্থ নিজ বাসভবন ঠাকুরপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায়, দ্বিতীয় জানাজা কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ মাঠে বেলা সাড়ে ১১টায় ও তৃতীয় জানাজা দুপুর ২টায় নিজ গ্রাম কচুয়ার শ্রীরামপুর মোহাম্মদীয়া আলিম মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরহুমের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মরহুমের প্রথম জানাজায় কুমিল্লায় অংশগ্রহণ করেন কচুয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহসানুল হক মিলন।
মরহুমের দ্বিতীয় জানাজায় কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মরহুমের প্রাক্তন ছাত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেন, কচুয়ার মাটি ও মানুষের সাথে সদ্যপ্রয়াত অধ্যক্ষ আবুল হাছনাতের নিবিড় সম্পর্ক ছিলো। সুদীর্ঘ ৩৬ বছরে শিক্ষকতার জীবনে তিনি মানুষের সুখ, দুঃখে, আপদে-বিপদে ছায়ার মতো পাশে থাকতেন। কচুয়ায় তাঁর মতো একজন মহান শিক্ষকের চলে যাওয়ার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন কচুয়া পৌরসভার মেয়র হুমায়ুন কবির প্রধান, কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহ মোঃ জালাল উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক মোঃ সোলেমান, মরহুমের চাচা তাজুল ইসলাম, পুত্র তানজির আহমেদ বাবু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্যাহ বিএসসি, পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শহীদ উল্যাহ বিকম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল প্রধান, আওয়ামী লীগ নেতা তরিকুল ইসলাম মুন্সি, মোতাহের হোসেন দুলাল, আলী হোসেন ঢালী, মরহুমের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ কাউছার হোসেন, জামাত নেতা খন্দকার মাওঃ হারুনুর রশিদ, অধ্যাপক শেখ কামরুল ইসলাম, অধ্যাপক খলিলুর রহমান, আনোয়ার মেমোরিয়াল মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ মজুমদার, কচুয়া কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব মাওঃ মাহবুবুর রহমান, কচুয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন প্রমুখ। এ সময় কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান হাতেম, মুক্তিযোদ্ধা ও কচুয়ার বাজার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন সিকদার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবু মুছাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও কচুয়া বাজার ব্যবসায়ীসহ অসংখ্য মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যক্ষ আলহাজ্ব আবুল হাছনাতের সংক্ষিপ্ত জীবনী
অধ্যক্ষ আলহাজ্ব আবুল হাছনাত চাঁদপুর জেলাধীন কচুয়া উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে ১৯৪৩ সালের ১৯ আগস্ট সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মরহুমের পিতা আলহাজ্ব আব্দুল মতিন। ৫ ভাই- বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি ১৯৬১ সালে কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশান, ১৯৬৪ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে তিনি এ পদ থেকে অবসরগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। ছাত্র জীবন সমাপ্তির পর ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে যোগদান করেন এবং দীর্ঘ সময় কচুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে সততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ শিক্ষকতা ও রাজনৈতিক জীবনে কচুয়াবাসীর কাছে হাছানাত স্যার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।