প্রতিনিধি
কচুয়ায় এক পাষ- স্বামীর পৈচাশিক নির্যাতনে জীবন গেল চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার ১০নং গোহট উত্তর ইউনিয়নের আইনগিরী কামার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার জানায়, গত ১০ বছর পূর্বে ওই গ্রামের নুরুল ইসলামের (৬০) ছেলে মিলন হোসেনের (৩৫) সাথে শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের ঢালী বাড়ির মৃত রুস্তম আলীর বড় মেয়ে তাছলিমার (২৮) বিয়ে হয়। ওই থেকে দম্পতি যুগলের সংসার চলছিলো বেশ ভালোভাবে। এর মধ্যে তাছলিমার কোলজুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। কিছুদিন যেতেই স্বামী মিলন তাকে অবহেলা করতে শুরু করে। যার জন্যে গত ৫ বছরের বেশির ভাগ সময় তাছলিমা থাকতো তার বাপের বাড়িতে। বাপের বাড়িতে থাকা অবস্থায় আশ-পাশের বন্ধু, ভাবীদেরকে স্বামীর অবহেলার গল্প বলতো। তখন সে বলেছিল আমার স্বামী আমার সাথে ঘুমায় না, ঠিকমতো কথা বলে না, আমার নারীত্বে তার মন ভরে না। এভাবে কিছুদিন যেতে গত ৭ মাস পূর্বে দুই পরিবারের সম্পর্কে ব্যাপক ফাটল দেখা দেয়। তখন ওই সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সোহাগ নিজ উদ্যেগে তাছলিমাকে বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। তারপর তাছলিমা তার প্রচেষ্টায় ভালোবাসা দিয়ে স্বামী থেকে গর্ভে আরেকটি সন্তান কেড়ে নেয়। ওই আগন্তুক শিশুকে ভূমিষ্ঠের লক্ষ্যে প্রহর গুণতে থাকে সে। এদিকে স্বামী মিলন পার্শ্ববর্তী গ্রাম নুরপুরের জনৈক প্রবাসী তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী হাছিনার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ পরকীয়া সম্পর্ক ক্রমেই গভীর থেকে গভীরে গড়িয়ে গেলে শুরু হয় তাছলিমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যার ফলে গত ২০ এপ্রিল বুধবার বিকেল ৫টায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ত্রী তাছলিমাকে প্রচ- প্রহার করে স্বামী মিলন। ওই সময় তাছলিমার শরীরের অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে থাকলে সুচতুর মিলন তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে কেটে পড়ে। তাৎক্ষণিক এ অবস্থা সামাল দিতে ননদ নুরজাহান (৪০) ও শাশুড়ি হনুফা বেগম (৫৫) তাছলিমাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কর্মরত চিকিৎসক তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ওই রাতে ৪টার সময় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পরে মিলনের পরিবারের সদস্যরা তাছলিমার লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলে স্থানীরা তাছলিমার বাপের বাড়ি শাহরাস্তিতে খবর দেয়। এ সংবাদ পেয়ে নিহতের বড় ভাই মোঃ মনির হোসেন তার পরিবারের লোকজন নিয়ে উপস্থিত হন। এরপর কচুয়া থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম-১ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুরে প্রেরণ করেন। ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার রাত ১০টায় তার পিত্রালয় শাহরাস্তির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
কচুয়া থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম-১ জানান, এ ঘটনায় চার জনকে বিবাদী করে নিহতের ভাই মোঃ মনির হোসেন একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং- ৯। ইতোমধ্যে এজাহারভুক্ত ২নং আসামী মোঃ নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার বাদী নিহতের ভাই মোঃ মনির হোসেন জানান, আমার নিরপরাধ, সহজ সরল বোনকে পৈচাশিক কায়দায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করছি।