প্রতিনিধি
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানান দুর্নীতি আর অনিয়মের মধ্যে দিয়েই চলছে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। উপজেলার প্রায় ৪ লাখ জনসাধারণ সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পরিবেশের দুর্গন্ধে আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে বলে রোগীরা বার বার অভিযোগ করছে। খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বিজয় কৃষ্ণ সাহা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবদুল মান্নান প্রতিদিন নিজ চেম্বারে বসে প্রকাশ্যে টাকার বিনিময়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। আর এসব কাজের রোগীদের যোগান দিচ্ছে তাদের সাথে কন্টাক্ট করা কয়েকজন চিহ্নিত দালাল। ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরের দালাল মুক্ত হাসপাতাল রাখার কঠোর হস্তক্ষেপ ভেস্তে যাচ্ছে।
সরেজমিনে হাসপাতাল ও সাধারণ রোগীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কচুয়া উপজেলার প্রায় ৪ লাখ জনগণের একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উন্নত সেবা দিতে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করেছে সরকার। দীর্ঘ ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও বর্তমানে তা কাগজে কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। গ্রামের হত দরিদ্র রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তারদের ফি, এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটি প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। টাকার অভাবে কেউ কেউ ঔষধ কিনতে না পেরে ধুঁকে ধুঁকে মরছে । ডাক্তাররা অফিস সময়ে হাসপাতালের চেম্বারে ও বাসায় বসেই রোগীদের নিকট থেকে প্রকাশ্যেই ফি নিচ্ছে যা প্রতিনিয়ত ডাক্তারদের নিয়মে পরিণত হয়েছে। আবার অনেক ডাক্তার দিনের পর দিন হাসপাতালে না এসে ঢাকা, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ও নিজস্ব চেম্বার খুলে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কচুয়া সরকারি হাসপাতালে অতি মূল্যবান এক্স-রে মেশিন থাকলেও প্রায় এক বছর ধরে টেকনেসিয়ান না থাকায় রোগীরা বিভিন্ন এক্স-রে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে করে রোগীরা কচুয়ায় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে অধিক মূল্যে এক্স-রে করতে বাধ্য হচ্ছে। তাছাড়া গত ২ বছর ধরে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারটিও বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালের ২১ ডাক্তারের মধ্যে পদায়ন আছে ১১ জন, তার মধ্যে ২জন ডাক্তার ঢাকাতে ডেপুটেশনে রয়েছে। এরা বেতন ভাতা কচুয়া স্বাস্থ্য কমপে¬্রক্স থেকে উত্তোলণ করলেও ঢাকাতেই তারা কাজ করছে। স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সে প্রকৃতপক্ষে ২১ ডাক্তারের মধ্যে ৯ ডাক্তার রয়েছে। হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট, এনেসস্থেথিয়া কনসালটেন্ট, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ, ডেন্টাল অর্থপেডিক ও নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় প্রতিদিন শ’ শ’ রোগী এসব রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না। হাসপাতালে ১৪ নার্স এর মধ্যে আছে ৯ জন, তার মধ্যে প্রশিক্ষণে রয়েছে ৩জন। ৬ জন নার্স রোগীদের সেবা দিতে পারছেনা। ৫জন এম এল এস এর মধ্যে ৩জন রয়েছে। ২ জন দারোয়ানের মধ্যে রয়েছে ১জন। সম্প্রতি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি করতে সরকার এ হাসপাতালে ৫জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (চাকমু) নিয়োগ দেয়। টিএইচও ডাঃ বিজয় কৃষ্ণ সাহা তার পছন্দের দু’ব্যক্তি ব্রাদার হিসাবে কর্মরত (সহ সেবক) শংকর মজুমদার ও মাসুদকে দিয়ে জরুরি বিভাগে দীর্ঘ কয়েক বছর জোড়া তালি দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। দেখা গেছে মারাত্মক হাড় ভাঙ্গা ও রক্তক্ষরণ হলে এরা তার সঠিক সমাধান দিতে পারে না। এদিকে গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অপারেশনের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও এনেসস্থেথিয়া কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়। অজ্ঞাত কারনে তা আবার বন্ধ হয়ে যায় এবং চিকিৎসকরা অন্য হাসপাতালে বদলি হয়ে যায়। এতে করে গর্ভবতী মায়েরা সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, গর্ভবতী মহিলা রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসলে তাদেরকে নির্দিষ্ট প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন খোদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। এতে করে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো কমপ্লেক্স-এর ডাক্তারদের যোগসাজশে সিজারিয়ান রোগীদের নিকট থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে গুটি কয়েক রোগ নির্ণয়ক যন্ত্র থাকলেও দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারছেনা। কিছু রোগের ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারলেও ডাক্তাররা কমিশনের ভিত্তিতে ক্লিনিকে কাজ করার জন্য রোগীদের ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
হাসপাতালের পরিবেশ একেবারেই নোংরা, রোগীদের বিছানাপত্র, টয়লেট অপরিস্কার, গোসল খানা, ওয়ার্ডে বৈদ্যুতিক বাল্প না থাকা, বেসিনগুলোতে ও হাসপাতালের দেয়ালে ময়লা আবর্জনায় ভরপুর হয়ে আছে। রোগীদের খাবারের মান একেবারেই নিম্নমানের। দরজা ও জানালা ভেঙ্গে চৌচির হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যাবস্থা নিচ্ছে না।
আরো জানা যায়, হাসপাতালের ডাক্তার সঙ্কটসহ এক্স-রে মেশিন, প্যাথলজির সমস্যা সমাধান করলে হাসপাতালের ডাক্তাররা প্রাইভেট ক্লিনিকে কমিশনের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে তাদের কোন আগ্রহ নেই, এতে করে গুটি কয়েকজন ডাক্তার বা সুবিধাবাদীদের সুবিধা হলেও উপজেলার প্রায় ৪ লাখ জনগণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এব্যাপারে ডাঃ বিজয় কৃষ্ণ সাহা বলেন, সরকার ডাক্তার নিয়োগ দিলেও তারা মফস্বলে আসতে চায় না। এছাড়া জরুরি বিভাগে উপ-সহকারী পরিবর্তে ব্রাদার দিয়ে কাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, জরুরি বিভাগে লোক না থাকায় তাদের দিয়ে সাময়িক কাজ করা হচ্ছ্।ে তবে তা কত দিন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। অপর দিকে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবদুল মান্নানের বক্তব্য জানতে বার বার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিরোনাম:
সোমবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।