এম.এইচ.মাহিন
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে বেশ চওড়া রাস্তা রয়েছে। রাস্তার দু’পাশ জুড়ে বসবাস করে বিভিন্ন জেলা হতে আগমনী কিছু ছিন্নমূল মানুষ। তেমনি একজন মানুষের সাথে কথোপকথন হয় তার ছবিসহ আলোচনা করা হল।
প্রথমে দূর হতে দেখছিলাম ,তারপর সন্নিকটে গিয়ে বললাম খালা কেমন আছেন,খালা জবাব না দিয়ে বলল আমাগো খবর লয় কে,পরক্ষনে উত্তর দিল বাপুরে– ভালা আছি , তুমি কেমন আছো বাপু। খালা আমারে প্রথমেই বলল তোমার বাবা-মা কি বেঁচে আছে । আমি বললাম না খালা আমার বাবা-মা দু’জনই মৃত্যু। খালা একটা দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে বলল দয়ালচানের এ কেমন খেলা। আমি বললাম খালা কেন একথা বললেন , বলল বাপু, সে বড় কষ্টের কথা তোমার হাতে কি বাপ সময় বেশী আছে তাহলে বস বাপু।
আমি বললাম খালা বলেন।খালা শুরুতেই বলল রশিদের বাপ বড় ভালা মানুষ ছিলরে বাপু । আমারে ছোডবেলা বউ কইরা আনছিল। আবার আমার যৌবনকালে আমারে ছাইড়া চইলা যায় না ফেরার দেশে। আমি ছোড ছোড পোলাপানগুলো বুকের উপর আগলে রেখে মানুষ করি। একসময় আমি সবাইরে নিয়া বড় ভালা আছিলাম।
খালা এখন কি হইছে,ছেলেরা বিয়ে-সাদী করে যে যার যার মত চলছে । আর আমি পোড়া কপালনি হলাম তাদের পথের কাঁটা। এদের মাঝে ছোড পোলাডা আমারে দেখলাম করত। পোলাটা আমার, মাটির কাটার কাজ করত । আমি দেখলাম আমার কারনে পোলাটার সংসারে অশান্তি , তাই দিশেহারা হয়ে আজ আমি এ পথে। দেশের বাড়ীর কথা জিজ্ঞাসা করলাম বলতে নারাজ। বললাম সামনেতো ঈদ খালা বাড়ী যাবেন না । বাপুরে আমার একটা নাতীন, অয় আমারে বেশ আদর করত । ওর কথা মনে পড়লে মনডায় কয় বাড়ী যাই আবার যখন পোলার বউ’র মুখটা ভাইশা উটলে আমি বাড়ীর কথা সব ভুলে যাই।
এবার আমি বললাম খালা আপনার একলা সংসারে কেমন আছেন, কথার ফাঁকে খালার দু’চোখ গড়িয়ে জল পড়ছিল তা নিজের আচঁলে ডেকে আলতো করে একটা হাসি দিয়ে বলল বাপু এখন আমারে দয়ালচান পোলাই-কোরমেই খাওয়ায় ।এটা আবার কেমন , ধর এখন আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাই মেহমান হয়ে না গরিব হিসাবে। যাওয়ার পর কিছু দাড়িয়ে থাকি তারপর আমাকে দেখে অনেকে দয়ামায়া হয় , তখনি আমাকে কিছু খেতে দেয়। খালা আজকে কি রান্না করতেছেন। বাপুরে রান্না না, আমি যে খাবার আনছি তা ঝাল দিতাছি বাপু। বয়স হইছে বেশ ,খেয়াল রাখতে সমস্যা হয় তাই দেখা গেল পলিথিনসহ চুলার উপর ঝাল দিতে।
খালা রাত্রে থাকেন কই, বাপু আমিতো একা না আমার মত আরও আছে কপালপোড়া। সব কপালপোড়া এক জাযগায় হয়ে বাপু রজনী শেষ করি। খালা বেশী রাতে শীত লাগে না, লাগেগো বাপু লাগে বাড়ী থেকে আসার সময় একটা মালসি কাথা নিয়া আইছিলাম। ঐডাই দেহের উপর জড়াই। আমি বললাম খালা আপনি যেখানে আছেন , সে জায়গার ব্যাপারে কিছু কি বলতে পারবেন। বাপুরে আমি কি আর অত কিছু জানি তয় আমাগো লগের একজন কইছিল আমাগো দেশটা নাকি এইখান থিইকা চলে। হ, খালা আছা কথাই।
বললাম খালা আমিতো এখন চলে যাবো যাওয়ার আগে আমি জানতে চাই আপনার শেষ ইচ্ছটা কি । বাপু বয়স হইছে মরনের কথা বার বার মনে পড়ে। তয় তোমারে কইয়া যাই আমাদের মত লোকদের যেন মাটি দেওয়া হয় ,ফাইলা যেন না দেয় । খালা আপনি ভালো থাকেন, বাপু তোমারেও দয়ালচান ভালা রাখুক বাপু।
অবশেষে বলতে চাই আমার মত বাবা-মা হারানো যারা আছেন জীবনের প্রতিটি ধাপে গিয়ে হারে হারে উপলদ্ধি করতে পারেন মা হারানোর অভাবটা । তাই আমার অনুরোধ এরূপ অবস্থায় বাবা-মাকে দুরে ফেলে দিবেন না। আর আমরাও সরকার পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি মানুষ এরূপ মানুষদের প্রতি মানবতার দৃস্টিকোন থেকে সাহায্যের হাত বাড়াই। কারন সেও কারও না কারও দশমাস দশদিন গর্ভধারণী মা।