পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে নভেম্বরে এসএসসি-সমমান এবং ডিসেম্বরে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে পরীক্ষা হবে কেবল গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক এবং তিন বিষয়ে। পরীক্ষার নম্বর ও সময় কমে অর্ধেক হবে। একই সঙ্গে প্রশ্নপত্র থেকে উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন বাছাইয়ে বেশি সুযোগ পাবে। বাকি বিষয়ের মূল্যায়ন ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে হবে। আর পরীক্ষা না হলে মূল্যায়নে যুক্ত হবে অ্যাসাইনমেন্ট। তবে দেশের চলমান স্থবিরতায় পরীক্ষা না হওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান।
তিনি বলেন, করোনো পরিস্থিতি অনুকূলে এলে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির আলোকে গ্রুপভিত্তিক শুধু তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর পরীক্ষার সময় ও পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া হতে পারে। এসএসসি ও সমমান এ বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। পরে পরীক্ষার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা থেকে দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, ১৮ই জুলাই থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ১২ সপ্তাহে মোট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর সপ্তাহে দু’টি করে। এইচএসিতে একইভাবে ২৬শে জুলাই শুরু হয়ে ১৫ সপ্তাহে ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ৬ পত্রের ৫টি করে ৩০টি অ্যাসানইনমেন্ট।
শিক্ষার্থীকে আবশ্যক ও ৪র্থ বিষয়ের কোনো অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করা হবে না। এসএসসি, এইচএসসি ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অবশ্যিক বিষয়সমূহ যেমন বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি ও ধর্ম বিষয়সমূহে অধ্যয়ন করেছে। এই বিষয়গুলো জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সার্বিক বিবেচনায় পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর পূর্ববর্তী জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এবং অ্যাসাইনমেন্ট এর মাধ্যমে অথবা শুধুমাত্র সাবজেক্ট ম্যাপিং এর মাধ্যমে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।
ঈদুল আজহার পর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২১ এর ফরম পূরণ অনলাইনে শুরু হবে।
ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নেহাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন শিক্ষার সংকট বিশ্বব্যাপী। ইউনিসেফ-ইউনেসকো অতি সমপ্রতি বলেছে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে, শিক্ষার সংকট বিপর্যয়কর হতে পারে। তারা আরও বলেছে, স্কুল খুলে দিলে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সবকিছু বিবেচনায় খুলে দেওয়া দরকার। কিন্তু দেশে এখন সংক্রমণের যে হার এবং এখন মৃত্যুর সংখ্যাও যা, তাতে এই মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এটি নিশ্চয়ই সবাই মনে করেন। আর এখন করোনার ডেল্টা ধরনের পর অনেক শিশুও আক্রান্ত হচ্ছে। এটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা তখনই খুলে দিতে পারবো, যখন মনে করবো এখন আশঙ্কা অনেক কম। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও মোটামুটি একটি অবস্থায় নিয়ে আসতে পারি, যখন তাদের মাধ্যমে পরিবারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না। সংক্রমণের হার কিছুটা কমে গেলে হয়তো প্রস্তুতি নিয়ে খুলতে পারবো।
দেশে পরীক্ষা না হওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষাগুলো নেয়া উচিত। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে হবে। প্রয়োজনে সব বোর্ডের পরীক্ষা একসঙ্গে পরীক্ষা না নিয়ে এক কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী তিনটি কেন্দ্রে বসিয়ে পরীক্ষা নেয়া হোক। অন্যান্য বোর্ডের শিক্ষকদের এনে পরীক্ষাগুলো নেয়া হোক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আউয়াল খান বলেন, পরীক্ষা না হওয়ায় প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। পরীক্ষা না হওয়ার কারণে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থী বের হচ্ছে না। প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থী বের না হওয়ার কারণে মেধার লড়াইয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। এই পরীক্ষা ছাড়া কিংবা স্বল্প পরিসরে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় পিছিয়ে যাবো আমরা।
পরীক্ষা না হওয়াটা অবশ্যই বড় ক্ষতি। আমাদের যেভাবেই হোক পরীক্ষাগুলো নিতে হবে, নেয়া উচিত। কারণ পরীক্ষা না হলে সঠিক মূল্যায়ন না হলে সঠিকভাবে শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠতে পারবে না। ফলে এই ভোগান্তি দীর্ঘ সময় ধরে ভোগ করতে হবে। পরীক্ষা সব থেকে গুরুত্বপূণ তবে শুধু পরীক্ষা নয় ক্লাস, ব্যবহারিক ক্লাস, পরীক্ষাসহ সামগ্রিক সবকিছু্ই বাধাগ্রস্ত হয়েছে পরীক্ষার কারণে। আমাদের বিকল্প ভেবে দেখতে হবে তবে বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো না হওয়ায় ঘাটতি পূরণ করতেই হবে বলে মন্তব্য করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলন অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন।