প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
সম্প্রতি এলোপ্যাথিক কৃমির ঔষধ খেয়ে আমাদের দেশের অনেকগুলি নিষপাপ শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে মর্মে জাতীয় দৈনিকগুলোতে সংবাদ বেড়িয়েছে। সঙ্গত কারণেই এইমর্মানিতক খবরে সকল অভিভাবকদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছে। কৃমির ঔষধ খেলে কেনো প্রায়ই শিশুদের মৃত্যু ঘটতে দেখা যায়, তার কারণ আমাদের অনেকেই জানি না। প্রথমকথা হলো কৃমিও একটি প্রাণী, আবার শিশুরাও প্রাণী। কাজেই যে ঔষধের কৃমি হত্যা করার ক্ষমতা আছে, সে ঔষধ শিশুদেরকেও হত্যা করার ক্ষমতা রাখে। সুস’-সবল শিশুকে নাপারলেও অসুস’-দুর্বল শিশুকে খুন করার ক্ষমতা তার আছে। এই সহজ সত্যটি আমাদের বুঝতে হবে। দ্বিতীয় কথা হলো আসলে ঔষধ মাত্রই বিষ। ঔষধ এবং বিষের মধ্যে পার্থক্যহলো মাত্রা। মাত্রার মধ্যে থাকলেই ঔষধ আর মাত্রার চাইতে বেশী হলেই সেটি হয়ে যায় বিষ। আবার মাত্রা নিয়েও আছে মানুষ ভেদে পার্থক্য। একই মাত্রার ঔষধে একজন মানুষেররোগ সারাতে পারে আরেকজনের উল্টো ক্ষতি করতে পারে। এটা হয়ে থাকে ঔষধের প্রতি মানুষের সেনসিটিভিটির তারতম্য অনুযায়ী। একটি ঔষধের প্রতি কোন একজন মানুষ কমসেনসেটিভ হতে পারে আবার অন্য একজন বেশী সেনসিটিভ হতে পারে। এক্ষেত্রে যে ঔষধের প্রতি একজন মানুষ বেশী সেনসেটিভ, সেই ঔষধ সঠিক মাত্রায় খেলেও সেই ব্যক্তির বড়ধরণের সর্বনাশ হতে পারে ; এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
অধিকাংশ মানুষের ঔষধ খাওয়ার বদভ্যাস দেখলে মনে হয়, এ যেন ঔষধ নয় বরং পহেলা বৈশাখের পান্তা ভাত। এমনভাবে তারা ঔষধ খায় যেন, মনে হয় ঔষধ কেবল উপকারইকরে ; কস্মিনকালেও ক্ষতি করে না। ঔষধ যে ক্ষতি করতে পারে, এ যেন তাদের কল্পনার বাইরে। আর বিশেষ করে মাগনা পেলে তো কথাই নাই। ফ্রি বা মাগনা জিনিসের প্রতিআমাদের দুর্দমনীয় লোভ সামলানোর সময় এসেছে। এলোপ্যাথিক কৃমির ঔষধগুলি কিভাবে কৃমি হত্যা করে ? এসব ঔষধকে বলা হয় বলা হয় স্পিন্ডল বিষ (spindle poison) । এগুলো কৃমির শরীরকে অবশ বা প্যারালাইজড করে দেয়। ফলে কৃমিরা নড়াচড়া করতে পারে না। এমনকি তারা কিছু খেতে পারে না এবং যা খেয়েছে তাও হজমকরতে পারে না। ফলে কৃমিগুলো মরে পায়খানার সাথে বেরিয়ে যায়। একইভাবে এই ঔষধগুলো শিশুদের হৃৎপিন্ড এবং মস্তিষ্ককে প্যারালাইজড করে হত্যা করতে পারে। এজন্যডাক্তাররা গর্ভবতী মহিলাদেরকে কৃমির ঔষধ খেতে নিষেধ করেন। কেননা এগুলো গর্ভস’ শিশুকে হত্যা করতে পারে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো একজন সাধারণ মানুষও জানেযে, গ্রীষ্মকালে কৃমির ঔষধ খাওয়া ভালো না। অথচ আমাদের স্বাস’্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা সেটি জানেন বলে মনে হয় না। তারা গ্রীষ্মকালকেই বেঁছে নিয়েছেন শিশুদেরকে পাইকারীহারে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর উপযুক্ত সময় হিসেবে।
গ্রীষ্মকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ থাকে বেশী। ফলে রোগ-জীবাণূর বংশবৃদ্ধিতে, বাতাসের মাধ্যমে ভেসে বেড়াতে, দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে সুবিধা হয় বেশী। বৃষ্টির পানি আরবন্যার পানি ইত্যাদির আধিক্যের কারণে চারদিকে উদ্ভিদ বা প্রাণী যাকিছুই মর”ক না কেন, তাতেই পচঁন ধরে এবং সেগুলো থেকে রোগ ছড়াতে থাকে। ফলে গ্রীষ্মকালে মহামারীজাতীয় রোগ বেশী হয়। এই কিছুদিন আগে মাত্র সিজনাল ভাইরাস জ্বর এবং কলেরার মহামারী গেলো। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত ঘামানোর কারণে সকলেরই শরীর দুর্বল হয়ে পড়েআর কে না জানে যে, দুর্বল শরীর সহজে রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এইসব কারণে গ্রীষ্মকালে খাদ্যের বিষক্রিয়াও (Food-poisoning) বেশী হয় এবং ঔষধের রিয়েকশানওবেশী হয়। ভিটামিন-এ এবং কৃমির ঔষধ দুটোই বমি, পেট ব্যথা, ডায়েরিয়া, আমাশয় প্রভৃতি পেটের অসুখ সৃষ্টি করতে ওস্তাদ। কাজেই এই দুটো ঔষধই একসাথে এই দুর্বল শিশুদেরখাওয়ানোর কি প্রয়োজন ছিল ? এগুলো কি আলাদা আলাদা সময়ে খাওয়ানো যেতো না ? তাহলে তো আর হাজার হাজার শিশুকে মারাত্মক মারাত্মক পেটের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালেভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতো না।
পরিশেষে সকলের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, কৃমির হাত থেকে নিজেকে এবং আপনার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য হোমিও ঔষধ খান। টিউক্রিয়াম (teucrium), স্যাবাডিলা(Sabadilla), নেট্রাম ফস (Natrum phos) প্রভৃতি হোমিও ঔষধগুলো কৃমি দূর করতে খুবই কার্যকরী এবং নিরাপদ ঔষধ। এমনকি এগুলো গর্ভবতীদেরকেও খাওয়ানো যায়; কোনো বিপদের সম্ভাবনা নাই। হোমিও ঔষধগুলো কৃমিকে প্যারালাইজড করে না, তাই আপনার শিশুকেও প্যারালাইজড করে মেরে ফেলার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নাই। হোমিও ঔষধেসম্ভবত কৃমিদের শরীরে জ্বালা-পোড়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে ; ফলে কৃমিরা মারা পড়ে না বরং জীবিতই পায়খানার সাথে বেরিয়ে যায়। এই ঔষধগুলোর যে-কোন একটিকে ৩০ (ত্রিশ)শক্তিতে খেতে পারেন এবং প্রতিবার এক ফোটা করে অথবা বড়িতে খেলে ১০ (দশ) টি বড়ি করে খাওয়া উচিত। প্রয়োজনে রোজ দুইবেলা করে দুই-তিন দিন খেতে পারেন।সাধারণত একমাত্রাই যথেষ্ট। হ্যাঁ, এই হোমিও ঔষধগুলোর তেমন কোন ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নাই ; কারণ এগুলোতে ঔষধের পরিমাণ থাকে খুবই কম। এমনটি ভুলবশত যদিনির্দিষ্ট মাত্রার চাইতে দশ গুণ বেশীও কেউ খেয়ে ফেলেন, তাতেও কোন ক্ষতির আশঙ্কা নাই। আবার অনেকে এমন আছেন যে, তাদের সারাজীবনই কৃমির সমস্যা লেগে থাকে এবংকিছুদিন পরপরই তাদের কৃমির ঔষধ খেতে হয়। এসব ক্ষেত্রে একজন হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা কিছু হোমিও ঔষধ আছে, যেগুলো রোগীর শারীরিক-মানসিক গঠন বুঝে প্রয়োগ করলে বেশী বেশী কৃমি হওয়ার টেনডেন্সী সারাজীবনের জন্য চলে যায়।
প্রেসক্রিপশান
Teucrium Marum verum : গুড়া ক্রিমি বা সুতা ক্রিমির সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ ঔষধ হলো টিউক্রিয়াম। পায়খানার রাস্তায় ভীষণ চুলকানি থাকে।
Spigelia anthelmia : হ্যানিম্যানের সময় স্পাইজেলিয়া কৃমির এলোপ্যাথিক এবং কবিরাজি ঔষধরূপে পরিচিত ছিল। হ্যানিম্যান যখন এটি দিয়ে হোমিও ঔষধ তৈরী করে পরীক্ষা করলেন, তখন দেখলেন যে কৃমির ঔষধ হিসাবে তার সুনামের বিষয়টি সঠিক। এটি সব ধরনের কৃমি, এমনকি ফিতাকৃমি পযর্ন্ত নিমূর্ল করতে পারে। অবশ্য কৃমির সমস্যা ছাড়াও হোমিওপ্যাথিতে এটি আরও অনেক রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। তার মধ্যে একটি বড় রোগ হলো মাইগ্রেন বা অর্ধেক মাথা ব্যথা।
Sabadilla officinarum : স্যাবাডিলাকে বলা যায় ক্রিমির সবচেয়ে উৎকৃষ্ট একটি ঔষধ। স্যাবাডিলা ঔষধটি ছোট মেয়ে শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়; কেননা সেবাডিলা ঔষধটি খাওয়ার পরে কৃমিরা পাগলের মতো দৌঁড়াতে শুরু করে এবং এসময় তারা মেয়েদের যোনী এবং জরায়ুতে ঢুকে পড়ে মারাত্মক বিপদের সৃষ্টি করতে পারে।
Natrum Phosphoricum : নেট্রাম ফস শিশুদের কৃমির জন্য সেরা ঔষধগুলোর অন্যতম। পাশাপাশি এটি শিশুদের অজীর্ণ, বদহজম, এলার্জি, চুলকানি, পেটে ব্যথা, সর্দি, চোখ ওঠা ইত্যাদি সমস্যার জন্যও একটি সেরা ঔষধ। এটি শিশুদের জন্য একটি ভিটামিন হিসেবেও কাজ করে থাকে। (এই ঔষধটিও ছোট মেয়ে শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়।)
Cina : বদমেজাজী শিশুদের ক্রিমির সমস্যায় সিনা একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। শিশুরা আঙুল দিয়ে নাক খোচাতে থাকে এবং ঘুমের মধ্যে দাঁত কটমট করে।
Santoninum : সেন্টোনিনাম গুড়া ক্রিমি এবং সুতা ক্রিমির সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ঔষধ।
Caladium seguinum : গুড়া ক্রিমি ছোট মেয়েদের যৌনাঙ্গে ঢুকে উৎপাত সৃষ্টি করলে ক্যালাডিয়াম খাওয়াতে ভুলবেন না।
Indigo : ইন্ডিগো কৃমির উৎপাতের ক্ষেত্রে একটি ভালো ঔষধ। কৃমির কারণে মৃগীর আক্রমণ, খিচুঁনি অথবা জ্বর হলে ইন্ডিগো ব্যবহার করতে পারেন।
Carcinosinum : যাদের ঘনঘন কৃমি হয় অর্থাৎ যাদের কৃমির সমস্যা খুব বেশী, তাদের কৃমি প্রবনতা দূর করার জন্য কার্সিনোসিন (শক্তি ২০০) পনের দিনে একমাত্রা করে চার বার খান। ক্যান্সারের ঔষধ কার্সিনোসিনে যেহেতু কৃমি নিরাময় হয়, সেহেতু বলা যায় মাত্রাতিরিক্ত কৃমির উৎপাত ক্যান্সারের একটি পূর্ব লক্ষণ।
Calcarea Carbonica : মোটা থলথলে শারীরিক গঠন, পা সব সময় ঠান্ডা থাকে, শিশুকালে দাঁত উঠতে বা হাঁটা শিখতে দেরী হয় থাকে, শরীরের চাইতে পেট বেশী মোটা, খুব সহজে মোটা হয়ে যায়, প্রস্রাব-পায়খানা-ঘাম সব কিছু থেকে টক গন্ধ আসে, হাতের তালু মেয়েদের হাতের মতো নরম (মনে হবে হাতে কোন হাড়ই নেই), মাথার ঘামে বালিশ ভিজে যায়, মুখমন্ডল ফোলাফোলা, ডিম খেতে খুব পছন্দ করে ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে ক্যালকেরিয়া কাব হবে তার সবচেয়ে উত্তম ক্রিমির ঔষধ।
Sulphur : সালফার একটি বহুমুখী ক্ষমতা সম্পন্ন ঔষধ। গোসল করা অপছন্দ করে, গরম লাগে বেশী, শরীরে চুলকানী বেশী, সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া, পায়ের তালু-মাথার তালুতে জ্বালাপোড়া, মাথা গরম কিন্তু পা ঠান্ডা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে কোন খেয়াল নাই ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে রোগীকে সালফার খাওয়াতে পারেন।
Terebinthina : টেরিবিনথিনা ক্রিমির একটি সেরা ঔষধ। পাশাপাশি এটি সর্দি, গ্যাসট্রিক আলসার এবং লো প্রেসারেরও চিকিৎসায় সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়।
প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর
01711-943435 // 01670908547
ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com
ব্লগ –www.zamanhomeo.com
★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন।
ফেসবুক পেইজে লাইক দিন https://www.facebook.com/ZamanHo