স্টাফ রিপোর্টার:
পাঁচ টাকা, দুই টাকা ও এক টাকার ধাতব কয়েন এবং পাঁচ টাকা ও দুই টাকার কাগুজে নোট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর কাছে লাখ টাকার এসব মুদ্রা জমে আছে। সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যাংকই গ্রহণ করছে না এসব কয়েন ও নোট। এমনকি দশ টাকার নোটও ব্যাংকগুলো নিতে চাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা যাদের কাছ থেকে মালামাল কিনেন, সেসব কোম্পানিও নেয় না এ ধরনের মুদ্রা। এ অবস্থায় শতকরা ১২ থেকে ১৫ টাকা ‘বাট্টা’ দিয়ে জমে থাকা মুদ্রা চালানোর চেষ্টা করছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্ডারও মানছে না তফসিলি ব্যাংকের শাখাগুলো। ফলে লেনদেন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঝামেলা পোহাতে হয় ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে বেশি ধাতব মুদ্রা ও খুচরা কাগুজে নোট জমা পড়ে আছে স্টেশনারী, মুদি, বেকারী ও কনফেকশনারী দোকানে। অন্যান্য ব্যবসায়ী যারা আছেন তাদের কাছেও হাজার হাজার টাকার কয়েন রয়েছে বলে জানা যায়।
গতকাল সোমবার চাঁদপুর শহর এলাকার বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে সবার কাছেই কম-বেশি ধাতব মুদ্রা এবং কাগুজে মুদ্রা জমে আছে। এসব মুদ্রা সিনথেটিক ব্যাগ, বস্তা এবং কাগজের কার্টুনে ভর্তি করে রেখে দিয়েছেন। কেবল বড় ব্যবসায়ী নয়, ছোট পুঁজির ব্যবসায়ীরাও আছেন এই সমস্যায়। তারা জানান, সবাই দেয়, কেউ নিতে চায় না। এমনকি সকল শাখা ব্যাংকগুলোতে যাদের লেনদেন আছে, ১/২ থেকে পাঁচ টাকার কয়েন ও কাগুজে নোট নিবে দূরে থাক দশ টাকার নোটও নিতে অপরাগতা প্রকাশ করছে।
পুরাণবাজারের বিসমিল্লাহ পেপার হাউজের ব্যবসায়ী হাজী আঃ কাদের শেখ জানান, সরকার ব্যাংকগুলোকে লিখিত নির্দেশ দেয়ার পরও ব্যাংক কয়েন গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। যার দরুণ হাজার হাজার টাকার কয়েন ব্যবসায় না খাটাতে পেরে ব্যবসায়িকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি আরও জানান, এমনকি স্থানীয় একটি ব্যাংক (অগ্রণী ব্যাংক) অনলাইনে টাকা পাঠাতে গেলে দশ টাকা মূল্যমানের কাগজের নোট গ্রহণ করতে চায় না। এ নিয়ে প্রায়ই ব্যাংকের সাথে গ্রাহকদের বাদানুবাদ করতে হয়।
মসজিদ পট্টি মুদি ব্যবসায়ী জালাল বেপারী জানান, তার কাছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো কয়েন রয়েছে। ২ ও ৫ টাকার কাগুজে নোট আছে ৮৪ হাজার টাকা। তার লেনদেন জনতা, সোনালী, অগ্রণী ও উত্তরা শাখা ব্যাংকে রয়েছে। এসব ব্যাংকে দশ টাকা, বিশ টাকার নোটই নিতে চায় না। ট্রাঙ্কপট্টির ব্যবসায়ী শেখ শরীফ জানান, তার কাছেও লাখ টাকারও বেশি কয়েন ও কাগুজে নোট জমে রয়েছে। কেউ নিতে চায় না বলে এগুলো এক জায়গায় রেখে দিয়েছেন। অগ্রণী ব্যাংক শ্রীরামদী শাখার ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, আমরা কয়েন ও খুচরা টাকা নিচ্ছিতো। ব্যাংকের ভোল্টে বহু টাকা জমে আছে। গ্রাহকরা কেবল দিতে চায়, তারা নিতে চায় না। আমরা জমা নিবো, গ্রাহকরাও টাকা উত্তোলনের সময় কিছু খুচরা টাকা ও মুদ্রা যদি নেয় তাহলে এ সমস্যা কেটে যাবে। সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর ট্রেজারী শাখায় অনেক মুদ্রা ও খুচরা টাকা জমা পড়ে আছে বিধায় তারা নতুন করে কয়েন নিচ্ছে না বলে একটি সূত্র জানায়।
সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সী ম্যানেজমেন্ট বিজ্ঞপ্তির মাধমে জানিয়েছে, জনসাধারণ নিজেদের মধ্যে যেমন ধাতব মুদ্রা লেনদেন করতে পারেন তেমনি তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকের শাখা হতে ধাতব মুদ্রা গ্রহণ এবং ব্যাংকগুলোতে জমাদান করতে পারেন। সুতরাং ধাতব মুদ্রা ব্যবহারে আতঙ্কিত হওয়ার আদৌ কোনো কারণ নেই।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা (কয়েন) ও কাগুজে ছোট টাকার নোট নিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এ ব্যাপারে চাঁদপুরের সকল ব্যাংকের সহযোগিতা কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।