মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায়। আগের ঘোষণা থেকে সরে এসে ভর্তি কমিটি এবার বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনতে চাইছে। বিশেষ করে সেশনজট কমাতে এবং ভর্তি সংক্রান্ত কাজে ভোগান্তি কমাতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এসব বিষয়ে আজ সোমবার সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ, পরীক্ষার ফি, পরীক্ষাকেন্দ্র বাছাই, ভর্তি কার্যক্রমসহ একাধিক বিষয়ে পরিবর্তন আসতে চলেছে। সেশনজট কমাতে এগিয়ে নিয়ে আসা হবে পরীক্ষার সময়। এ ছাড়া কিছুটা বাড়তে পারে পরীক্ষার ফি। বারবার ভর্তি ফি দেয়ার ভোগান্তি থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় গুচ্ছ ভর্তিতে মাইগ্রেশনের ব্যবস্থাও করা হবে। দূর-দুরান্তে পরীক্ষা দেয়ার ভোগান্তি কমাতে শিক্ষার্থীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র হিসেবে পছন্দ দিতে পারবেন, শিক্ষার্থীর পছন্দের কেন্দ্রেই তার পরীক্ষা হবে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার এসব বিষয়ে আজ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত সপ্তাহে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। গত শুক্রবার জবি ভিসির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের অংশগ্রহণে ওই সভায় এসব বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জবি ভিসি ও গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মো: ড. ইমদাদুল হক সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, গুচ্ছ ভর্তি বিষয়ে আমাদের একটি প্রস্তুতিমূলক মিটিং হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এ দিকে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তিসংক্রান্ত কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব করার জন্যই গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিশেষ করে অনেক সময়েই দেখা যায় (উদাহরণস্বরূপ) একজন শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র পছন্দ দিলেও তাকে দূরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেটি যাতে না হয় তাই কমিটি এবার চাইছে শিক্ষার্থীরা আবেদনে একটি কেন্দ্র চয়েজ দেবে এবং সেই কেন্দ্রই তার ব্যবস্থা করবে। গত বছর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্র বাছাই দিতে হয়েছিল অনেক। কিন্তু এবার কেন্দ্র হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করতে বলা হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র পছন্দ থাকবে, সেই বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে তাদের ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেয়া যায়। একটি কেন্দ্রের অধীনে আশপাশের স্কুল-কলেজেও সিট পড়তে পারে। নিজ এলাকার বাইরে গিয়ে ভোগান্তি নিয়ে যেন পরীক্ষা দিতে না হয়, সেটাই এবারের সংস্কারের উদ্দেশ্য।
এগিয়ে আনা হচ্ছে পরীক্ষা : সূত্র জানায়, গত ৮ এপ্রিল গুচ্ছের সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে, সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ৩ সেপ্টেম্বর, ১০ সেপ্টেম্বর মানবিক আর সবশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষা নেয়া হবে। কিন্তু এখন আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পরীক্ষা কিছুটা এগোচ্ছে। সেশনজট কমাতে পরীক্ষা এক থেকে দেড় মাস এগিয়ে নিয়ে আসা হতে পারে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
অন্য দিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: শাহ আযম গণমাধ্যমকে জানান, আগে শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ পদ্ধতির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে তার পছন্দক্রমের ওপরের দিকের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে তাদের পুনরায় ভর্তি হতে হতো। তাই তাদের আলাদা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য টাকা দিতে হয়েছে। তারা যেন একবার ফি দিয়েই সেই টাকাই স্থানান্তর করতে পারেন সে জন্য মাইগ্রেশনের কথা ভাবা হচ্ছে।
বাড়ছে ভর্তির আবেদন ফি : গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি ফি কিছুটা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মো: ড. ইমদাদুল হক। তবে কত বাড়ছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। গত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির আবেদন ফি নেয়া হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। যা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে কিছুটা অসন্তোষ ছিল। কারণ এর আগে ফি ছিল ৬০০ টাকা।