মাহফুজ মল্লিক:
মোবাইলে নিজেকে মাজার শরীফের খাদেম পরিচয় দিয়ে মতলবের এক মহিলার কাছ থেকে সোয়া লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক ভন্ড প্রতারক। নূরজাহান বেগম (৩৫) নামের ঐ মহিলা বিকাশের মাধ্যমে ভন্ড খাদেমের কাছে টাকা পাঠায়।
ভন্ড প্রতারকের কথায় বিভিন্নজনের কাছ থেকে সুদে ধারকর্জ করে ঐ টাকা তার দেয়া বিকাশ নম্বরে পাঠানোর পর কোন ফলাফল না পাওয়ায় এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে গৃহবধূ। এ ঘটনায় মতলবে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মহিলার ধারকর্জ করা টাকা নিয়ে এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে সালিসও হয়। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার নবকলস এলাকায়।
ঐ এলাকার সফিক প্রধানের স্ত্রী নূরজাহান বেগম জানান, গত মঙ্গলবার রাত ১২টায় মোবাইলে (০১৭৭৪১৪১৮৯৩ নম্বর) তার ছেলে আঃ রহমানের কাছে পরিচয় দেয় সে বাগেরহাট শাহসূফী মাজারের অলি। আঃ রহমানের পরিবারের পুরো পরিচয় জেনে আল্লাহ-রসূল ও নামাজ রোজাসহ ইসলাম ধর্মের কথা বলে তাকে দুর্বল করে পবিত্র মাজার শরীফে কোরআন শরীফ কেনার জন্য আড়াই শত টাকা পাঠানোর অনুরোধ করে। পরদিন সকালে ঐ একই নম্বর থেকে তাদের মোবাইলে ফোন করলে আঃ রহমানের মা রিসিভ করে। তার মাকেও নামাজ, রোজাসহ ইসলাম ধর্মের পালনীয় সব বিষয় সম্পর্কে প্রথমে সুষ্পষ্ট ভাষায় সুমধুর কণ্ঠে বুঝিয়ে কোরআন শপথ করায় এবং বলে যা কিছু বলছে তা যেন তার স্বামীসহ কাউকে না জানায়। কাউকে জানালে তার বড় ক্ষতি হবে। না জানালে এবং তার কথামত চললে বহু উপকার হবে। এরপর তাকে বলে মাজারের জন্য কোরআন শরীফ কেনার জন্য ২৫০ টাকা পাঠানোর জন্য। তার কথামত এবং তার দেয়া বিকাশ করা ০১৭৪৮০৪৮৩৮৯ নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। ২য় দিন রাত ১২টায় ঐ একই নম্বরে ফোন করে আঃ রহমানের মা নূরজাহান বেগমকে বলে মাজারে থাকা গরিব অসহায় দুঃস্থদের জন্য তাবাররুক খাওয়াতে হবে। তুমি দ্রুত ১১ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা পাঠিয়ে দাও। এতে তোমার বহু উপকার হবে এবং তুমি দ্রুত কোটিপতি হতে পারবে। ঐ ভন্ড প্রতারকের ফান্দে পরে মহিলায় তার মেয়ের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার এনে তা একজনের কাছে জমা দিয়ে সুদে টাকা সংগ্রহ করে বিকাশের মাধ্যমে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরপর দিন রাতে আবার ফোন করলে মহিলা তাকে বলে আমি স্বর্ণালংকার একজনের কাছে জমা দিয়ে সুদে টাকা এনে আপনার কথামতো পাঠিয়ে দিয়েছি। তখন ঐ ভন্ড প্রতারক মহিলাকে বলে এতে মা তোমার অনেক লাভ হবে। তুমি শীঘ্রই অনেক টাকার মালিক হতে পারবে। তুমি নিজেও টের পাবে না। ভন্ড প্রতারক মহিলাকে বৃহস্পতিবার রাতে ফোন করে বলে, মা তুমি জায়নামাজ বিছিয়ে কোরআন শরীফ নিয়ে বস। বসার পর তাকে বলে, মা তুমি ২ ভরি ১ আনা স্বর্ণ অথবা ঐ স্বর্ণের মূল্য টাকা দ্রুত বিকাশে পাঠিয়ে দাও। এতে তুমি কয়েকগুণ পাকা স্বর্ণ তোমার হাতে যথাসময়ে পৌঁছে যাবে। মহিলা তার কথাবার্তা ও আচরণে মুগ্ধ হয়েই তার কথা রাখতে গিয়ে এলাকার ৫ ব্যক্তির কাছ থেকে ২ ভরি ১ আনা স্বর্ণ সংগ্রহ করে মতলব বাজারের বশির বকাউল নামে এক স্বর্ণের দোকান মালিকের কাছে জমা দিয়ে ৮৮ হাজার ৭শ’ ২৫ টাকা এনে তার দেওয়া ঐ বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। শুক্রবার রাতে আবারও ঐ নম্বরে ফোন করে মহিলাকে বলে মা তুমি প্রথমে যে স্বর্ণগুলো জমা দিয়ে টাকা এনেছ ঐ স্বর্ণগুলো বিক্রি করে ঐ টাকা দ্রুত পাঠিয়ে দাও। পাঠানোর সাথে সাথেই তোমার কাছে বিপুল পরিমাণ পাকা স্বর্ণালংকার পৌঁছে যাবে। মহিলা তার কথামত স্বর্ণ বিক্রি করে ১৭ হাজার ৫শ’ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। টাকাগুলো পাঠানোর পর ঐ ভন্ড প্রতারককে মহিলা ফোন করে জানতে চায় আমি তো বাবা আপনার কথামত আমি আমার স্বামীসহ কাউকে না জানিয়ে টাকাগুলো পাঠিয়েছি। কিন্তু আপনার কথা মতো তো কিছুই পেলাম না। তখন সে বলে মা তুমি ধৈর্য্য হারিও না। এক সপ্তাহের মধ্যেই তুমি তোমার পাওনার কয়েকগুণ বেশি যথাসময়ে পেয়ে যাবা।
এদিকে মহিলা যেসব লোকজনদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার এনেছিল তাদের বলেছিল তার মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। পরে তারা তাদের জিনিস ফেরত চাইতে আসলে তখন তা ফেরত দিতে না পারায় এ ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। পরে এ নিয়ে এলাকায় সালিস বসে। সর্বস্ব হারিয়ে নূরজাহান বেগম আরো জানান, সে ঐ ভন্ড প্রতারক ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনে কান্নাকাটি করে টাকা ফেরত চাইলে তাকে বলে মা তুমি একজন ধনী লোকের একটি নম্বর দাও তুমি তোমার টাকা পেয়ে যাবে।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ