ঘাসের বীজের সঙ্গে ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়া মসলা। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর অসাধু ব্যবসায়ীরা মেতে উঠেছে এই অবৈধ ব্যবসায়।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের ভেজাল বিরোধী অভিযানে এরকম তিনটি কারখানার ৮ ব্যাক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও আর্থিক দণ্ড দেয়া হয়েছে।
র্যাব জানায়, গত কয়েক বছরে একই স্থানে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে একই অপরাধ বারবার ঘটতে দেখা যাচ্ছে। দোকানগুলোর শুধু মালিকানা পরিবর্তন হলেও ব্যবসার ধরন পরিবর্তন হচ্ছে না।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এ কে এম আনোয়ার পাশার নেতৃত্বে কাওরান বাজারের হাসিনা মার্কেটের মসলা পট্টিতে এই মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এসময় ভেজাল গুড়া মসলার তিনটি কারখানার মালিককে এক বৎসর করে কারাদণ্ডসহ মোট আটজনকে আট লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. সুমন মিয়া (২২), মো. গিয়াস উদ্দিন (৫০) ও মো. মনির হোসেন (৩২)। এছাড়া মো. কাউছার আলী (২৩), মো. আব্দুল জলিল (১৯), মো. খাজা মিয়া (৪৪), মো. মনির হোসেন (২৯) ও মো. দুলালকে (৪০) একলাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
র্যাব-২ এর অভিযান পরিচালনা করেন উপ অধিনায়ক মেজর সৈয়দ সালাহ্উদ্দিন মাহমুদ। এসময় বিএসটিআইএর পরিদর্শক সুরাইয়া পারভিনও অভিযানে অংশ নেন।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম আনোয়ার পাশা জানান, ঈদের সময় মসলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যক্তি ক্ষতিকর পদার্থ দিয়ে ভেজাল হলুদ, মরিচের গুড়া তৈরি শুরু করেছে। অভিযানের সময় রঙ মিশিয়ে ভেজাল মসলা তৈরির সময় হাতেনাতে তাদেরকে ধরা হয়।
তিনি জানান, ঘাসের বীজ বা ছোট কাওন যা পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় তা ভেজাল মসলার মূল উপকরণ। ঘাসের বীজ গুড়া করে ক্ষতিকর রঙ মেশানো হয়। লাল রঙ মেশালে মরিচের গুড়া হয়ে যায় এবং হলুদ রঙ মেশালে হলুদের গুড়া হয়ে যায়। তার সঙ্গে পঁচা কাঁচামরিচ শুকিয়ে (পটকা মরিচ) গুড়া করে মেশালে হালকা ঝাল হয় আর হলুদের গুড়ায় খানিকটা আসল হলুদের গুড়া মেশানো হয়। ফলে ভেজাল মসলা সহজে বোঝা যায় না।
অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন জানান, তিনি ১৫ বৎসর যাবৎ ভেজাল মসলা তৈরি করছেন। সাধারণত গভীর রাতে রঙ মেশানোর কাজ করা হয়। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে মসলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনের বেলায়ও ভেজাল রঙ মেশানোর কাজ করতে হচ্ছিল।
গিয়াস আরো জানান, তার এখানে তৈরি ভেজাল মসলার বেশীর ভাগই ঢাকার বাইরে সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। অধিক লাভের আশায় ঢাকায় বাইরে থেকে বিভিন্ন পার্টি এসে এসব ভেজাল মসলার অর্ডার দেয়। আসল হলুদ ও মরিচের গুড়া ২৫০ টাকা কেজি হলেও ভেজাল গুড়ার কেজি মাত্র ১৩০ টাকা। কাওরান বাজারের সব কারখানায় এই ভেজাল হয়। তিনি না করলে তার কারখানা চলবে না। কাস্টমার অন্যখানে চলে যাবে।
আরেক কারখানার মালিক মনির জানায় তারা তিনজন মিলে এই কারখানার মালিক এবং সারা বাংলাদেশ থেকে তারা ভেজাল মসলার অর্ডার নেন এবং ডিলারদের ঠিকানা মোতাবেক পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঈদ উপলক্ষ্যে তাদের বিক্রি বেশী বলে জানান।
সুমন এন্টারপ্রাইজ নামক কারখানার মালিক সুমন জানান তার বাবা গনি মিয়া তাকে এই ভেজাল মসলার কাজ শিখিয়েছেন। এখন তিনি নিজেই কর্মচারীদের দিয়ে এই কাজ করেন। তার বাবা গণি মিয়া বিক্রির কাজ তদারকি করেন।
সুমন স্বীকার করেন যে রঙ তারা মসলায় মেশান তা কাপড় তৈরির রঙ। কাওরান বাজার কিচেন মার্কেটের দোতলা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি হিসেবে কিনে এনেছেন। যেখানে মানসম্মত খাবার রঙ এর দাম নূন্যতম পাঁচ হাজার টাকা।