ঘিয়ের নামে ভোক্তাদেরকে অখাদ্য খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পণ্য উত্পাদন করে যার মধ্যে ‘কুকমি’ ব্র্যান্ডের পাঁচ ধরনের ঘি রয়েছে।
ভেজাল খাদ্য উত্পাদনের দায়ে বারবার জরিমানা, দণ্ড, লাইসেন্স বাতিল ও মামলা দেওয়া সত্ত্বেও কারখানাটি ভেজাল ঘি উত্পাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে। কারখানাটির বিষয়ে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক বরাবরে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেছেন রাশু কান্তি বিশ্বাস নামে চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকার এক বাসিন্দা। তিনি জনস্বার্থে অবিলম্বে উক্ত কারখানা সিলগালা করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএসটিআই চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, মহাপরিচালক মহোদয়ের কার্যালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। পাওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস-এর ব্যবস্হাপনা পরিচালক অজিত কুমার দাশ ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস শুরু থেকেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত উপকরণ বাজার থেকে ক্রয় করে খাদ্যসামগ্রী উত্পাদন করে আসছে। আমরা সরকারি যাবতীয় লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে বিএসটিআই কর্তৃক আরোপিত মান বজায় রেখে পণ্য উত্পাদন করি। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা গ্রহণ ও চাকরি থেকে অপসারণ করার পর থেকে ঐ কর্মকর্তারা ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্ররোচনায় বিভিন্ন হয়রানিমূলক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে।’
বিএসটিআই মহাপরিচালক বরাবরে রাশু কান্তি বিশ্বাসের অভিযোগে বলা হয়েছে, অজিত কুমার দাশ ইতিপূর্বে শাহজালাল ফুড অ্যান্ড কেমিক্যাল ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন যেখান থেকে ‘তাজা ঘি’ নামের ভেজাল ঘি উত্পাদন ও বাজারজাত করা হতো।
পাম অয়েলের সঙ্গে রং ও ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা এই পণ্যের উত্পাদন ২০০৭ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারখানাটি সিলগালাসহ মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০০৮ সালে একই ব্যক্তি বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করেন যেখান থেকে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই ‘কুকমি’ ব্র্যান্ড নাম দিয়ে পাঁচটি ব্র্যান্ডের ঘি উত্পাদন ও বাজারজাত শুরু করেন। ভেজাল ঘি উত্পাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে অজিত কুমার দাশ ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। এসব ঘিয়ের কৌটার গায়ে যেসব উপাদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বাস্তবে তার কোনোটাই নেই। কৌটার ভেতরে যে পণ্যটি পাওয়া যায় তা মূলত পাম অয়েল, ডালডা, শুকরের চর্বি, বিষাক্ত পোড়া তেল, সুতার রং ও কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
গত ১৪ জানুয়ারি বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ৩৬০ কেজি ভেজাল ঘি ও ভেজাল ঘি তৈরির উপাদান জব্দ করেছে র্যাব। কারখানার ব্যবস্হাপককে গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় এই কারখানায় অভিযানের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা জরিমানা ও বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্হা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালের অক্টোবরে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অজিত কুমার দাশের বিরুদ্ধে ভ্যাট, ট্যাক্স ফাঁকির একাধিক মামলা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।