ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার হয়েছে হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী ছোট বাজার দেবপুরের ছোট-বড় ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এলাকার যেসব মানুষ সকাল-বিকেল ঐ ছোট বাজারটিতে পাশাপাশি চায়ের আড্ডায় বসে, একজনের চায়ের বিল আরেকজন পরিশোধ করে সেই এলাকাবাসী এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে বিভক্ত হয়ে একে অপরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর করছে। এটাই ঘৃণ্য রাজনীতির উদাহরণ বলে আখ্যায়িত করলো স্থানীয় ক’জন মুরুব্বি।
গতকাল বুধবার সকালে দেবপুরে সরজমিনে গেলে দেখা যায়, সড়কের উভয় পাশে বেশ কিছু দোকানে ভাংচুর ও লুটপাটের চিহ্ন। আগের দিন মঙ্গলবার রাতে দু’ দফায় এখানে ঘটে এ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা। এর জন্য দেশের প্রধান দু�টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঘৃণ্য রাজনীতিকে দায়ী করেছে এলাকাবাসী। আর এ এলাকাটি আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর অংশ হাজীগঞ্জ এবং দক্ষিণ অংশ চাঁদপুর সদর উপজেলার অংশ। উভয় অংশেই ঘটে হামলার ঘটনা।
স্থানীয়রা জানায়, কিছুদিন পূর্বে একটি অবরোধের দিন চাঁদপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় দেবপুর এলাকার খান বাড়ির সিরাজ খানের ছেলে মহসিন খানের একটি ইয়ামাহা মোটর সাইকেল পুড়িয়ে পার্শ�বর্তী সড়কের খালে ফেলে দেয় দেবপুর এলাকার অবরোধকারীরা। সে সময় অবরোধকারীদের হামলায় মহসিন নিজেও মারাত্মক আহত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে জানায়, মহসিন খানের উপর হামলা ও মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্থানীয় ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরই সূত্র ধরে গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগ পরিচয়ে কিছু যুবক চাঁদপুর শহর থেকে মোটর সাইকেলযোগে দেবপুরে গিয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলার অংশে ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয় ও বিএনপি সমর্থিত কর্মীদের ক�টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দিয়ে দেবপুর ত্যাগ করে। এ ঘটনা তাৎক্ষণিক জানাজানি হলে বিএনপি সমর্থকরা রাত ১১টার দিকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে একত্রিত হয়ে দেবপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর চালায়। পরে হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো আঃ রহমানের চায়ের দোকান, কবিরের ফোন ফ্যাক্সের দোকান, কিরণ টেইলার্স, খান ট্রেডার্স, বিসমিল্লাহ ওয়ার্কস্, খালেকের ফলের দোকান ও ইউসুফের দোকান। আর বিএনপি সমর্থিত কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বিএনপি দলীয় কার্যালয়, কামালের সিলভার দোকান, সাইফুল গণির ঔষধের দোকান, কবির টেইলার্স, রণি স্টোর, ভাই ভাই স্টোর ও সুমী স্টোর।
দেবপুর এলাকার নৈশ প্রহরী দুলাল (৬০) জানান, রাতে হঠাৎ করে মহামায়ার দিক থেকে বেশ কিছু যুবক এসে হামলা চালানোর সময় ভয়ে আমি পালিয়ে যাই। আবার এর পরেই বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় ভাংচুর হয়। তবে আমি ঘটনাস্থলে না থাকায় কাউকে চিনতে পারিনি।
এ বিষয়ে মহসিন খান জানান, আমি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম। কারা কোথা থেকে এসেছে তা আমি জানি না। আমরা প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধের রাজনীতি করলে দেবপুরে অনেক কিছু ঘটতো। আর এ ঘটনা ছাত্রলীগ করেছে এটা বিএনপি প্রচারণা চালাচ্ছে। আসলে এ কথার কোনো প্রমাণ নেই। এতো নোংরা রাজনীতি আমরা কখনো করিনি।
বাকিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মমিন বেপারী জানান, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা বিএনপি করেনি। তারাই তাদের ক্ষতি করেছে। আর তারা আমাদের দলীয় কার্যালয় ও দলের সমর্থক ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে নোংরা রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।