মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারে নতুন করে আশ্রয় নেয় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। নানা কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভি-এইডস রোগী ছিল। চট্টগ্রাম কক্সবাজারের পাশর্^বর্তী জেলা। বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রামে চলে আসে অনেকে। বসবাস করছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ফলে এসব রোহিঙ্গা চট্টগ্রামে এইডসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজারে মোট এইডস রোগী ৭৮৩ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ৬৭৭ জন এবং বাঙালি ১০৫ জন। ইতোমধ্যে এইডস আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজারে মারা যান ১২১ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ৬৫ জন ও বাঙালি ৫৬ জন। অন্যদিকে, চট্টগ্রামেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে এইডস রোগী। ২০২১ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ৬১ জন, ২০২০ সালে ৩৯ জন, ২০১৯ সালে ৭১ জন এবং ২০১৮ সালে ৪৫ জন। আজ ২০২২ সালে আক্রান্তদের সংখ্যা সরকারিভাবে প্রকাশ করা হবে। তবে এ বছর ৬০ থেকে ৭০ জন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায়। চট্টগ্রামে সরকারিভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এইডস রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। চমেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল মাওলা বলেন, চট্টগ্রাম জেলাটি কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী জেলা। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বসবাস। ফলে চট্টগ্রামে এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যৌনবাহিত রোগ হওয়ায় এ শঙ্কাটা আছে। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। জানা যায়, চমেক হাসপাতালের চর্ম রোগ বিভাগের অধীন এন্টি রেট্রো ভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারে এইডস আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে রোগ নির্ণয়, ওষুধ, প্রয়োজন অনুসারে অপারেশনও করা হয়। তাছাড়া রোগের প্রয়োজনভেদে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে রেফার করা হয়। এ সেন্টারে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী এইডস শনাক্তে টেস্ট করতে আসে। এর মধ্যে ৪ থেকে ৫ জনের পজিটিভ আসে। দেশে সরকারিভাবে একমাত্র ঢাকার মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করে এ চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চমেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. দেব প্রতীম বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে এআরটির অধীনে চট্টগ্রামে ৪০০ রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের রোগ নির্ণয় ও ওষুধসহ সব ধরনের সেবা সরকারিভাবে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এর মধ্যে যারা হাসপাতালের কাছে অবস্থান করেন, তাদের একসঙ্গে দুই মাসের ওষুধ এবং যারা অপেক্ষাকৃত দূরে অবস্থান করেন তাদের চার মাসের ওষুধ একসঙ্গে দেওয়া হয়। এতে রোগীদের কষ্ট অনেকাংশে কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবাসীদের ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক-বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকা, বিদেশে যাওয়ার আগে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং না হওয়া, বিদেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরা ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
বন্ধ একমাত্র সেবা কেন্দ্র : চমেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলামের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হয় ‘এ সোসাইল কনসার্ন সোসাইটি ফর এইডস কেয়ার অ্যান্ড সাপোর্ট বাংলাদেশ’। সংস্থাটির উদ্যোগে এইডস রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসায় ২০১০ সালের জুলাই মাসে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ৭ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা হয় ‘হোপ কেয়ার সেন্টার’। পর্যায়ক্রমে এটি এইডস রোগীদের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠেছিল। স্বেচ্ছাসেবী কিছু মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় এটি পরিচালিত হতো। সেন্টারে সপ্তাহে পাঁচ দিন রুটিন চেকআপ, ডায়রিয়া, জ্বরসহ কিছু রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ব্যয়বহুল পাঁচটি রক্ত পরীক্ষা চমেক হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে করিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিত সেবা কেন্দ্রটি। কিন্তু অর্থ সংকটসহ নানা কারণে ২০২০ সালে সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়।