চাঁদপুর শহরের রহমতপুর আবাসিক এলাকার ঢালী বাড়িতে কোহিনুর বেগমকে হত্যার নেপথ্য ছিল টাকা আত্মসার্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করা। মঙ্গলবার রাত ৩ টায় জিটি রোড়ে নয়নের মামার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ঘাতক নয়ন বেগমকে আটক করে পুলিশ। আটক ২ আসামীকে আদালতে পাঠানোর পর তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়। ঘাতক নয়ন বেগম শনিবার রাত ৮টায় কোহিনুর বেগমের বাসার সামনে এসে মোবাইলে ফোন করে তাকে তার পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ঢেকে এনে তার বাসায় নিয়ে নৃশংশভাবে কুপিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে নয়ন বেডরুমে কোহিনুরকে হত্যা করে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে শরীরে রক্তমাখা অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় শহীদ জাবেদ স্কুলের মাঠ দিয়ে নিহত কোহিনুর বেগমের ছোট ছেলে তানজিলের সামনে দিয়ে বিমস্ব অবস্থায় পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
তানজিল জানায়, ঢাকা থেকে ময়ূর-৭ লঞ্চ যোগে চাঁদপুর এসে বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেয়। মা কোহিনুর বেগমকে খাওয়া দেওয়ার জন্য বললে ৮টার দিকে ঘাতক নয়ন বাসার সামনে এসে ফোন করে ঢেকে নিয়ে এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। মা কোহিনুর বেগম আসার দেরি হওয়ায় বাসা থেকে বের হয়ে শহিদ জাবেদ স্কুলের মাঠে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টায় ঘাতক নয়ন সামনে দিয়ে বের হয়ে যায়। নয়ন অনুরোধে মা কোহিনুর বেগমের কাছ থেকে বাবার বিদেশ থেকে পাঠানো প্রায় ৩ লক্ষ টাকা হাওলাত নেয়। কয়েকদিন পূর্বে নয়ন বাসায় এসে মা কোহিনুর বেগমের স্বর্ণলংকার অনুষ্ঠানে যাওয়ার করা বলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। তার কথায় দিতে অস্বীকর করায় ঘটনার দিন রাতে ঢেকে নিয়ে নয়নের বাসায় কুপিয়ে হত্যা করে শরীরে থাকা ৭ ভরি স্বর্ণ লুট করে পালিয়ে যায়। ঘাতক নয়নের বড় মেয়ে স্বপ্না আক্তার তিশা জানায়, ঘটনার দিন রাতে তারা ভূইয়া বাড়ির আব্দুর রশিদ ভুইয়ার ছেলে ধেন্দা রফিক এর সাথে পাশের ফ্লাটে টিভি দেখছিল। রাত ৮টায় মা নয়ন বাসায় এসে টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে রফিককে ইশারা দিয়ে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাশের ফ্লাটে চিৎকারের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এসময় ইশরাত জাহান তন্নী ঘর থেকে বের হয়ে মায়ের রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকে। মা নয়ন বেগম রুম থেকে বের হয়ে কিছু হয়নি বলে জানিয়ে যার যার ঘরে যাওয়ার জন্য বলে। তার কিছুক্ষণ পরেই তন্নী মা নয়নকে রক্ত মাখা শরীরে বেরিয়ে যেতে দেখে। পরোক্ষণই মায়ের মোবাইলে ফোন করলে তিনি লাইনটি কেটে দেয়। এর কিকছুক্ষণ পরেই মা নয়ন বেগম পুনরায় তার মোবাইল থেকে ফোন করে জানায়, আমি শেষ তোরা যেদিকে পারোছ চলে যা। তারপর থেকেই তার কোন সন্ধান মেলেনি। চাঁদপুর মডেল থানার এসআই ওমর ফারুক, এএসআই আহসানুজ্জামান লাভু, এএসআই আওলাদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিটিরোডে তেতুলতলা নয়নের মামা ধনু ও কুদ্দুছ পাটওয়ারী বাড়িতে মঙ্গলবার রাত ৩ টায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক নয়ন বেগমকে আটক করে। এসময় পুলিশ তার মামার বাড়ি ঘেরাও করে অবশেষে ঘাতক নয়ন বেগমকে গ্রেপ্তার করে। এসময় নয়ন বেগম পুলিশকে জানায় ঘটনার দিন শনিবার রাতে কোহিনুর বেগমের কাছ থেকে নেওয়া ৩ লক্ষ টাকার মাসিক ৩০ হাজার টাকা সুদ না দেওয়ায় কোহিনুর বেগম মুঠোফোনে গাল মন্দ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টাকা দেওয়ার নাম করে কোহিনুর বেগমকে বাড়ি এনে দা দিয়ে আঘাত করলে সে মারা যায়। এসময় ধেন্দা রফিক সাথে ছিল। এদিকে ঘাতক নয়ন বেগমকে আটকের পর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্স শেষে তাকে আদালতে নেওয়ার পর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়।