প্রতিনিধি
গতকাল ১৮ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ৮টায় চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী গেটে লোকের ভিড়। তখনও শিল্পকলার গেট খুলেনি। আয়োজকরাও তখন পর্যন্ত অনুপস্থিত। অনুষ্ঠান শুরু সকাল ৯টায়। কিন্তু সকাল ৮টার ভিড়ই বলে দিচ্ছিল অনুষ্ঠান নিয়ে সকল প্রাণে কী উদ্দীপনাই না ছিলো। ৯টা বাজতেই শিল্পকলা অডিটোরিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ। মুহুর্মুহু করতালি আর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ছড়া উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহন বাঁশি স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে চাঁদপুরের ইতিহাসে এই প্রথম আয়োজিত ছড়া উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহা। ছড়া উৎসব উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন, মতলব রয়মনেননেছা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মিসেস আফরোজা খাতুন এবং রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ মাহমুদা খানম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদের সভাপতি সামীম আহমেদ, উদয়ন সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ গৌরাঙ্গ সাহা, চাঁদপুর জেলা ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম মাসুদ ও স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন ছড়া উৎসবের আহ্বায়ক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উৎসবের সদস্য সচিব রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ।
এরপর দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু-কিশোর। প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিলো অটিজম শিশুদের প্রতিযোগিতা। মূলত উৎসবটি শিশু-কিশোরদের মিলন মেলায় রূপ নেয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। মোহন বাঁশি স্মৃতি সংসদের শিশু-কিশোর, শিশু একাডেমী এবং অন্যান্য সংগঠনের শিশুরা মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় সবাইকে মাতিয়ে রাখে। পুরো অনুষ্ঠানটি ছিলো ছড়াকে ঘিরে। ছড়া আবৃত্তি, ছড়া গান, ছবি আঁকা এসবই ছিল অনুষ্ঠানের মূল উপজীব্য।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব সান্ধ্যকালীন অধিবেশন শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টায়। সাড়ে ৭টা পর্যন্ত শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাতের সভাপ্রধানে এবং ছড়া উৎসব উদযাপনব কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মৃণাল সরকার ও সদস্য সচিব রাশেদ শাহরিয়ার পলাশের উপস্থাপনায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকে যেসব শিশু ছড়া পড়লো, গান গাইলো, আমরা স্বপ্ন দেখি আগামীতে তাদের মধ্য থেকে আমরা এক ঝাঁক খ্যাতিমান শিল্পী পাবো। শিশুরা কাদামাটির মতো। শিশুকে যেভাবে ইচ্ছা আমরা সেভাবে গড়ে তুলতে পারি। শিশুদের গড়ে তোলার জন্যে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে মননশীল মানুষ হিসেবে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। শিশুরাই একদিন বড় হবে। তারা দেশ ও জাতিকে আলোকিত করবে। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করি, তবে শিশু হবে আমাদের দেশের বোঝা। যে শিশু শিল্প-সংস্কৃতির মতো মননশীল কাজে যুক্ত থাকবে সে কখনো বিপথে যাবে না। সে নিজে যেমন আলোকিত হবে তেমনি অন্যকেও আলোকিত করবে। তিনি সুন্দর ও ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের জন্যে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মিলন, জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন নবী মাসুম, ছড়া উৎসব উদযাপনব কমিটির আহ্বায়ক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, বিশিষ্ট লেখক ও গীতিকার মুখলেসুর রহমান মুকুল ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সাব-এডিটর গাজী মনুসর আজীজ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মোহন বাঁশি স্মৃতি সংসদের সভাপতি অজিত দত্ত। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ৮০জন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এ সময় চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর উপস্থিত ছিলেন।