মিজানুর রহমান রানা
চাঁদপুরের বেসরকারি হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর নানা অনিয়মের চিত্র
১৫ টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে চিঠি দিয়েছি : সিভিল সার্জন
কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। যে যার মতো করে চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুরে স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার দালালদের ৫০% কমিশন দিয়ে রোগীদের ভাগিয়ে এনে যাচ্ছে তাইভাবে বিভিন্ন পরীার নামে রোগীদের পকেট কাটছে নির্দ্ধিধায়। এসব বিষয় নিয়ে সরেজমিনে গত এক সপ্তাহ ধরে চাঁদপুরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে এক অরাজকতমায় নানা অনিয়মের চিত্র।
চাঁদপুরের বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারি কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সেবার নামে অবাধে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে চাঁদপুরের বিভিন্ন হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবাদানের চিত্র পর্যবেণের মাধ্যমে এসকল চিত্র ফুটে উঠেছে।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলায় মোট সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৫২টি। এর মধ্যে জেলা শহরে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫২টি, অনুমোদিত ৫০, অননুমোদিত রয়েছে স্টেডিয়াম রোডস্থ এপোলো ডেন্টাল কিনিক ও জোড়পুকুরপাড়স্থ ওরো ডেন্টাল কিনিক নামের ২টি প্রতিষ্ঠান। অনুমোদনের আবেদন রয়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠানের, এগুলো হচ্ছে শহরের কবি কাজী নজরুল সড়কের (সাবেক স্ট্র্যান্ড রোড) গ্রীণ ভিউ এক্সরে এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বাবুরহাট বাজারের গ্রীণ ভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মতলব উত্তরের মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল, ছেঙ্গারচর জেনারেল হাসপাতাল, হাজীগঞ্জের সেন্ট্রাল হাসপাতাল, সেবা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কচুয়ার সাচার বাজারের রেনেসাঁ মেডিকেল সেন্টার (হাসপাতাল), ফরিদগঞ্জের মা ডেন্টাল কেয়ার। অন্যদিকে লাইসেন্সের জন্য আবেদনবিহীন বেআইনীভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে স্টেডিয়াম রোডস্থ একটি প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদনের জন্যে সরকারি নিয়ম মোতাবেক যে সকল শর্ত পূরণ সাপেে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এমন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কাগজে কলমে আইন মানা হলেও বাস্তবে তা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আবেদন ফরম অনুসারে কোনো প্যাথলজি ল্যাবরেটরি/ডেন্টাল কিনিকের জন্যে ৫৮০ বর্গফুট মেঝে প্রয়োজন থাকলেও সরজমিনে অনেক প্রতিষ্ঠানেই তা পাওয়া যায়নি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের ছাদ রয়েছে টিনের তৈরি, যা রেডিয়েশনের প্রভাব ফেলবে রোগীর শরীরে। অন্যান্য সার্বণিক কর্মচারীদের মধ্যে একজন ডিপ্লোমা ল্যাব. টেকনিশিয়ান এবং সহকারী ল্যাব. টেকনিশিয়ান থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই তা পাওয়া যায়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান সহকারী ল্যাব. টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালিয়ে যাচ্ছে ডিপ্লোমা ল্যাব. টেকনিশিয়ানের কার্যক্রম। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে সহকারী ডিপ্লোমা ল্যাব. টেকনিশিয়ানও পাওয়া যায়নি। অন্যত্র রয়েছে বলে তারা জানালেও বাস্তবে তাদের কোনো ডিপ্লোমা ল্যাব. টেকনিশিয়ান এবং সহকারী ডিপ্লোমা ল্যাব. টেকনিশিয়ানই নেই। অদ লোকেরাই প্যাথলজির কার্যক্রম চালিয়ে নিজেরা কোনো ডিপ্লোমা ল্যাব. টেকনিশিয়ান-এর স্বার করে দিচ্ছে। এই অনিয়মের ফলে সেবাগ্রহীতা মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে প্রাইভেট হাসপাতালের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মেঝের পরিমাণ ৭২০০ বর্গফুট এবং প্রতি রোগীর জন্য ৩৮০ বর্গফুটের কথা উল্লেখ থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানে আদৌ তা পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মধ্যে সার্জারি, গাইনী, শিশু, এনেসথেসিয়া, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কমপে ৩ জন ডাক্তারের কথা উল্লেখ থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই নামকাওয়াস্তে একজন, দু’জন আনাড়ি ডাক্তার দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা নার্স ৬ জন ও সহকারী নার্স ৬ জন, ম্যানেজার ২ জন, ওয়ার্ড বয় ৬ জন, আয়া ৬ জন, সুইপার ৬ জন, দারোয়ান ৩ জন এবং ওইসব প্রতিষ্ঠানে পানি সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালি, আলো-বাতাস এবং স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ থাকার কথা থাকলেও এসব নিয়ম-কানুন শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন এএসএম আবদুস সাত্তার মিয়া হাসপাতালের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যে সুবিধা থাকার কথা তা সম্পর্কে তিনি বলেন, যেগুলো লাইসেন্স আমরা দিয়েছি সেগুলো ভালোভাবে চলছে, কিন্তু যে হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম রয়েছে তা সম্পর্কে ডিসি অফিসে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে নিকট এ ব্যাপারে নোট দেয়া হয়েছে এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, ১৫ টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে চিঠি দিয়েছি এবং এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপ ও জেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় আমরা চাঁদপুর জেলা প্রশাসকসহ কর্মকর্তাদের বিষয়গুলো জানিয়েছি। তারা এ বিষয়ে কার্যকরী পদপে নেবে বলে আমি আশা করছি।