শাহারিয়ার খান কৌশিক ॥ চাঁদপুরে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি চালে সয়লাব হয়ে গেছে রাইসমিল ও চালের আড়ৎগুলো। বেশি মুনাফার লোভে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সিএসডি গোডাউন থেকে টিআর, খাবিখা, জাটকা প্রকল্পের চাল কম দামে কিনে এনে বেশি দামে বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদপুর রাইসমিল গুলোতে খাদ্য অধিদপ্তরের চাল গুলো এনে কাজলা মোটা চালের সাথে মিশিয়ে গ্রাহকদের চোখে ধূলো দিতে মেশিনের মাধ্যমে ঝকঝকে করতে সিল্কি করে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সে এক জরুরী বৈঠকে রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি চাল মজুদ না করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়। এর পর থেকে রাইসমিলগুলোতে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি চাল পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন চেম্বার নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত পুরানবাজারের একটি সিন্ডিকেট খাদ্য অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকতাদের সাথে যোগসাজেস করে টিআর, খাবিখা, জাটকা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের সরকারি চাল কমদামে ক্রয় করে আসছে। বেশি লাভের আশায় সিএসডি গোডাউন থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয় করছে। তারা চাল সিল্কি করার নাম করে পুরানবাজারে বিভিন্ন রাইসমিলে মজুদ করছে। মজুদের পর রাইসমিলে লেবারদের দিয়ে মোটা কাজলা চালের সাথে এ চাল মিশিয়ে দিচ্ছে। পরে গ্রাহকদের চোখে আরো ধূলো দিয়ে আরো বেশি দামে বিক্রি করতে চালগুলো সিল্কি মেশিনের মাধ্যমে ঝকঝকে করে ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। পুরানবাজারের সিন্ডিকেট ব্যবসায়িদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পুরানবাজার বস্তাপট্রির ব্যবসায়ি আবুল বেপারীর ছেলে আলাউদ্দিন, ইসলামিয়া বানিজ্যলয়ের নুরুল হক মানিক,রিপন সাহা,মমতাজ বেপারী, প্রদিপ সহ বেশ কয়েকজন। এরা গভির রাতে ট্রাকে করে ২শ থেকে ৪শ বস্তা পর্যন্ত সরকারি চাল রাইসমিল গুলোতে এনে লেবারদের মাধ্যমে খুব দ্রুত মাল আনলোড করে। সরেজমিনে গিয়ে পুরানবাজারের খাজা বাবা অটো রাইসমিল,মেঘনা অটো রাইসমিল ও চাঁদপুর অটো রাইস মিলে দেখা যায়, সিএসডি গোডাউন থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের সীল মোহর খচিত বস্তা ভর্তি চাল গুলো রাইসমিলের এ্যালেমিনেটরের মাধ্যমে চায়না সিল্কি মেশিনে ঢুকিয়ে ঝকঝকে করে। পরে সেগুলো অন্য বস্তায় ঢুকিয়ে ১৬ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয় করে গুটি স্বর্না বলে ২০ থেকে ২২ টাকা বিক্রি করছে। এছাড়া কাজলা মোটা চালের সাথে ঐ গোডাউনের চাল মিশিয়ে তা হাতিয়া সন্দিপে চাল ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করে অবৈধ পন্থায় লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা আলাউদ্দিনের কাছে ন্যায্যমূলে কম দামে চাল বিক্রির লাইসেন্স থাকলেও সে ঐ চাল এনে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না করে অনন্ত্র বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, টিআর, খাবিখা, জাটকা ও অনান্য প্রকল্পের বরাদ্দকৃত চাল গুলো ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে বহিরাগত কয়েকজন রাঘববোয়াল সিএসডি গোডাউনের অসাধু কিছু কর্মকর্তারাদের সাথে যোগসাজেস করে কমদামে ক্রয় করে। পরে সে মাল ঐ অসাধু সিন্ডিকেট হোতাদের কাছে বিক্রি করার পর তার গাড়ি বোঝাই করে এনে মিলগুলোতে আনছে।
এ ব্যপারে আলাউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে সে বলেন, ন্যায্যমূল্যের চাল দোকানে বিক্রি করতে বিলম্ব হওয়ায় সেগুলো ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করি। এছারা সিএসডি গোডাউন থেকে চাল ক্রয় করি তা সত্য। সেগুলো অনান্য ব্যবসায়িদের মতো অল্প মুনাফায় বিক্রি করি।
এদিকে এ খবর জানতে পেরে গতকাল দুপুরে চাঁদপুর মিল মালিক সমিতির সাথে চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দের জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি চাল রাইসমিলগুলোতে মজুদ না করতে অনুরোধ জানান চেম্বার নেতৃবৃন্দ। এর পর থেকে কারো মিলে সরকারি চাল পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের হুসিয়ারি দিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠন চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স।
এ ব্যপারে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বাবু সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়িরা সিএসডির চাল এনে মোটা চালের সাথে মিশিয়ে ও সিল্কি করে বাজারে বিক্রি করায় ব্যবসায়িদের ভাবমর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ খবর জানতে পেরে রাইস মিল মালিক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোন অবস্থাতেই রাইসমিলে সিএসডির চাল ঢোকানো যাবে না। নির্দেশনা অমান্য করে যদি কেউ চাল মজুদ করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শিরোনাম:
শনিবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৩ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।