চাঁদপুরে চট্র্রগ্রাম লৌহ বিতান কর্তৃক বাংলাদেশ রেলওয়ের ৯টি রেলবীট অবৈধভাবে চুরি করে বিক্রি করার অপরাধে রেলওয়ে পুলিশ এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূলহোতা মৃদুল চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করেছে। রেলওয়ে থানা পুলিশ তাকে আজ বৃহস্পতিবার(১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আদালতে পাঠালে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার(১৪ সেপ্টেম্বর) শেষ বিকেলে শহরের ৫নং ঘাট এলাকা থেকে চট্র্রগ্রাম লৌহ বিতানের মৃদুল চন্দ্র দাস ২৩ ফুট লম্বা ৭টি রেলবীট( রেললাইন) নতুন বাজার এলাকার ডগইয়ার্ডের মালিক মো: শাহজাহান বেপারীর নিকট ৯০ টাকা কেজি দরে ৯৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে। বিক্রিকৃত রেলবীট ব্যান যোগে নেওয়ার সময় স্থানীয় জনতা হাতেনাতে আটক করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জব্দ করে।
রেলওয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে চট্রগ্রাম লৌহ বিতান এর মৃদুল কান্তি দাস ও মালিক রতন কান্তি দাস ভুয়া রিসিট দেখিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার পায়তারায় লীপ্ত হয় বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান । এ ঘটনার আলোকে চট্রগ্রাম বিভাগীয় উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বুধবার লাকসাম ও কুমিল্লার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এসএসএ/ই(পথ) মো: লিয়াকতআলী মজুমদার রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মুরাদ উল্লাহ ও একদল পুলিশফোর্সসহ ঘটনাস্থলে সরোজমিনে এসে পরিদর্শন কালে জব্দকৃত ৭পিচ রেলবীট রেলওয়ের চুরি যাওয়া রেলবীট ও শহরের ৫নং ঘাটের চট্রগ্রাম লৌহ বিতানে পরিদর্শন কালে সেখানে থাকা আরো ২টি রেলবীট মোট-৯টি রেলবীট সনাক্তের মাধ্যমে জব্দ করেন। এ কর্মকর্তা চাঁদপুর এসে তদন্ত পূর্বক জানান,জব্দকৃত রেলবীট রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তি।
এ ঘটনায় চাঁদপুর এলসি-৯ এর দায়িত্বে থাকা মেইট মোনমহন চন্দ্র বাদী হয়ে রেলচুরি যাওয়ার একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ দীর্ঘদিন রেলবীট বিক্রির মূল হোতা চট্র্রগ্রাম লৌহ বিতানের মৃদুল চন্দ্র দাস(৫৮)কে বুধবার(১৫ সেপ্টম্বর) রাত ১০টায় শহরের নতুন বাজার পানামা ডগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে রেলওয়ে থানা হেফাজতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসা বাদের পর আজ বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে চাঁদপুর আদালতে প্রেরন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চাঁদপুর শহরের ৫নং ঘাট এলাকায় ২০০১৮ সালে রেলওয়ের নতুন করে ৫নং ঘাট ইয়ার্ডে রেললাইন স্থাপনকালে সেখানে পূর্বে ব্যবহার করা রেললাইন (রেল বীট) খুলে ফেলে রাখা হয়। সে লাইন দীর্ঘদিন রেলওয়ে গুডস্ অফিসের নিকট পড়েছিল। এ বিষয়টি স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও চাঁদপুরস্থ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা অবগত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিনভর এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, চাঁদপুর রেলওয়ে ৫নং ঘাট ও রেলওয়ের ইয়ার্ডের ভিতরে শুধু মাত্র ৭পিচ রেলবীট নয়, রেললাইনের পাশে গুডস্ অফিসের নিকটে বিগত দিনে প্রায় ৫০পিচেরও বেশী রেললাইন মজুতছিল।
সেখান থেকে স্থানীয় রেলওয়ের লাইনে কাজে নিয়োজিত আসাধু ব্যাক্তিরা বিভিন্ন সময়ে ব্যানগাড়ী যোগে এখান থেকে এসব রেললাইন (রেলওয়ে বীট) অন্যত্র ব্যবহার করার নাম করে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ৫নং ঘাটের ব্যবসায়ীদের ভুল বুঝিয়ে এ গুলো নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে, বলে ৫নং ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান। এছাড়াও নতুন করে ৭পিচ রেললাইন বিক্রি করার ঘটনা ফাসঁ হওয়ার পর তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।
এদিকে দেখা যায়,চট্রগ্রাম লৌহ বিতান ভুয়া রিসিট প্রদর্শন করে। যার কোন ভিত্তি নেই। মৃধুল কান্তি দাস জানু স্টীল ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদপুরস্থ চট্টগ্রাম লৌহ বিতানের নামে ৫৫৬৬ কেজি রেল লাইন ক্রয়ের একটি রিসিট দেখিয়ে রেললাইন গুলো বৈধ বলে দাবী করেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বরাতদিয়ে একটি সূত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ২ হাজার কেজি রেললাইন বিক্রি করার এমন কোন নিয়ম রেলওয়ের প্রচলিত নেই। রেলওয়ের অব্যবহারকৃত রেললাইন বিভিন্ন স্টীল মেইলের কাছে টনেটনে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রির বিধান রয়েছে।
এ ছাড়া রেলওয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ জানান, রেলওয়ে যে অব্যবহৃত লাইন বিক্রি করবে, সে লাইন টেন্ডারের মাধ্যম ক্রয় করার তারিখ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে গালিয়ে রড বা অন্য কিছু প্রস্তুত করতে হবে।
রেলওয়ে থেকে ক্রয়কারী অব্যবহৃত রেললাইন খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারবেনা। এখন স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, রেলওয়ের পরিত্যাক্ত রেললাইন কি করে চাঁদপুরস্থ চট্টগ্রাম লৌহ বিতান বিক্রি করলেন এবং তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা পর্যন্ত একটি ব্রডগেজ লাইনের ২০ ফুট লম্বা রেললাইন (রেলবিট) পড়ে থাকতে ও দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম লৌহ বিতানের মালিক মৃদুল চন্দ্র দাস ঘটনার সম্পর্কে বলেন, সে চট্রগ্রাম থেকে বৈধভাবে এ লাইন ক্রয় করেছে এবং সে রেললাইনগুলো শহরেরর নতুন বাজার পানামা ডগইয়ার্ডের পাশে নতুন আরেকটি ডগইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। সেখানে ৭পিচ রেললাইন বিক্রি করেছি। আমার কাছে রিসিট আছে।
চাঁদপুরস্থ গ্যাংয়ের এলসি-৯এর মেইট মোনমহন চন্দ্র এ বিষয়ে জানান, এ রেললাইন গুলো দীর্ঘ বহু বছর যাবৎ এখানে পড়ে ছিল। সেখান থেকে মৃদুল বাবু রেললাইন চুরি করে বিক্রি করেছে। আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি রেললাইন উদ্ধারের জন্য মামলা দিয়েছি রেলওয়ে থানায়।
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এসএসএ/ই (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, এই বিষয়ে চাঁদপুরে দািয়ত্বরত মেইট মোনমহনের কাছে জানতে পেরেছি। রেলওয়ের ৭টি লাইন অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন চট্টগ্রাম লৌহ বিতানের মালিক। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আমি নিজে চাঁদপুরে এসে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে জানতে পারি এ রেলবীট গুলো চাঁদপুরস্থ রেলওয়ের কাজ শেষে এখানে রাখা ছিল।
এ ব্যাপারে বুধবার চাঁদপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মুরাদ উল্যাহ্ বাহার জানান,রেলবীট চুরির ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৯টি রেলবীট উদ্বার করা হয়েছে। চাঁদপুর রেলওয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মনমোহন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কারনে মৃদুল কান্তি দাসকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এখন তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। রেললাইর গুলো থানা হেফাজতে রয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি রিপোট গতকাল বুধবার আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য,চাঁদপুরে দীর্ঘ বহু বছর যাবত শতশত টন রেলবীট চুরি করে যাচ্ছে,চাঁদপুর শহরের বকুলতলা রোডস্থ একটি বড় সিন্ডিকেট চক্র। তাদেরকে পুলিশ ব্যাপক চেস্টা চালিয়ে আটক করতে পারেনি। অবশেষে জনতা আটক করতে সক্ষম হয়েছে। যা’নিয়ে চাঁদপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়েছে।