শওকত আলী *
দলিত হরিজনরা তাদের সঠিক এবং সংবিধান অনুযায়ী আইনী সহাযতা পেয়ে থাকে, সঠিকভাবে বলে তাদের মত প্রকাশ করেছেন। দলিতরা জানায়,তারা তাদের সমাজ প্রধানকে মান্য করে যান সব ক্ষেত্রে । যার ফলে নিজেদের মধ্যে ভূল বুঝাবুঝি বা কোন ঘটনা ঘটে গেলে নিজেদের পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে বসে তাৎক্ষনিক সমাধানের লক্ষমাত্রায় পৌছে যান। যার ফলে মারাত্মক কোন জটিল কিছু না হলে নিজেরা বসে সমাধান করে নেন। কোন ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়াবার সুযোগ দেন না তারা । চাঁদপুর দলিতরা দেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মত যে রায় আদালত দেয় তারা সে রায় মেনে নেন বলে জানিয়েছেন। তারা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার কার্যের প্রতি আস্থাশীল বলে জানিয়েছেন,দলিত জনগোষ্ঠির নেতারা । এক সময় সমাজ ব্যবস্থা ছিলনা। তখন দলিতরা বিচ্ছিন্নভাবে যার যার ইচ্ছানুযায়ী চলাচল করত। বর্তমানে সে অনিয়ম এখন আর নাই। তাই দলিত হরিজনরা নিজেদের মর্যাদা ধরে রাখতে একও অভিন্ন বলে জানান।
চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার হরিজন কলোনী,নতুন বাজার বড় ষ্টেশন রেলওয়ে হরিজন কলোনী ও তালতলা স্বর্নখোলা হরিজন কলোনীতে এ সম্প্রদায়ের প্রায় ৪ হাজার দলিতরা বসবাস করে যাচ্ছে। এতগুলো মানুষ ১টি স্থানে বসবাস করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা শান্তি-শৃংখলার অবনতি হওয়া স্বাভাবিক। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে যে পরিমান হত্যা,মারামারি,সংঘর্ষ,দখল সহ বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। সেই পরিমান ঘটনা দলিত হরিজনদের মধ্যে তেমন একটা লক্ষ করা যায় না। তারা মামলা মোকদ্দমা সহ সব ঘটনা থেকে বিরত থাকতে দেখা যায় । তারা বলেন,আমরা সংখ্যায় এদেশের মানুষের তুলনায় অনেক কম। যার ফলে কোন ঘটনা ঘটিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করা থেকে নিজেরাই বিরত থাকছেন। দলিতদের নিজস্ব কোন বড় ধরনের সমস্যা বর্তমানে চাঁদপুরে নেই। এরা জানে তারা সংখ্যালঘু। যার ফলে কোন ঘটনা যদি ঘটে যায় অন্যদের জানার আগেই নিজেরা সমাধান করে ফেলেন পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে । খবর নিয়ে জানা যায়,গত কয়েক বছর পূর্বে জেলাধীন হাজীগঞ্জ উপজেলায় দলিত হরিজণ কর্তৃক অপর হরিজনকে হত্যা করে । সে ঘটনাটি ঘটেছিল চাঁদপুর রেলওয়ে হরিজন কলোনীর অশোক হরিজন (জীবন) এর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অশোককে রাধেসাম হরিজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। সেই ঘটনায় হত্যাকারী রাধেসাম গ্রেফতার হয়। এ হত্যাকান্ডটি আইনী প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে পরিচালিত হয়ে রায় হয়। হত্যাকারীর ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। বর্তমানে হত্যাকারী কারাগারে রয়েছে। যে কোন সময় তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন দলিত জনগোষ্ঠির নেতারা । তারা আদালতের রায়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এটি সঠিক রায় হয়েছে,এতে আমরা অত্যন্ত খুশি।
অপরদিকে শহরের স্বর্নখোলা হরিজন কলোনীর সফিক হরিজন কে নারী গঠিত কারনে একই এলাকার সুমন ডোম হত্যা করে রাতের আধাঁরে । হত্যারপর দিন লাশটি একটি বিলে পাওয়া যায়। সে হত্যার ঘটনায় মামলা হলে তদন্তে সুমন ডোম গ্রেফতার হয়। আইনী সহায়তা পেয়ে মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়ে রায়ও হয়। সুমন ডোমের যাবত জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত। দীর্ঘ কয়েক বছর জেলা কারাগারে থাকার পর সুমন ডোমের পক্ষে হাইকোর্টে আপিল করে, হাইকোর্ট থেকে সে জামিনে মুক্তি পান। এখন প্রকাশ্যে পূর্বের ন্যায় সুমন ডোম কার্যক্রম করে যাচ্ছেন বলে দলিত পরিবারের লোকেরা জানান। এ হত্যাকান্ডটি সঠিক বিচার কার্য হয়েছে বলে হরিজনরা তাদের মত প্রকাশ করে জানান।
নতুন বাজার মুচিবাড়ী এলাকায় দলিত সম্প্রদায়ের কিছু লোকের বসবাস রয়েছে। এরা হচ্ছে ঃ রবি দাস সম্প্রদায়ের একটি বর্নের মানুষ। এখানে ১৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে,যার মালিকানা ৫ জনের নামে । এখানে ১২টি পরিবারের ৬০ জন মানুষের বসবাস । তারা তাদের পূর্ব পূরুষের ২শ’ বছরের বসতি হিসাবে এখানে বসবাস করে যাচ্ছেন বলে তারা জানান। স্থানীয় ১টি প্রভাবশালী গোষ্ঠি তাদের এই জায়গা নিয়ে মামলায় জড়িয়ে তাদের অনেক হয়রানী করেছেন বলে তারা জানান। তারা জানান সরকারের বা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আইনী সহায়তা পেয়ে আদালতের বিচার বিভাগীয় সঠিক রায় তাদের পক্ষে এসেছে। ঐ চক্রটি ভূঁয়া দলিল সৃষ্টি করে তাদের হয়রানী করেছে বলে তাদের অভিমত। এছাড়া সরকারীভাবে আইনী সহায়তা তারা পেয়ে যাচ্ছেন বলে মত প্রকাশ করেন। বর্তমানেও তাদের এ জায়গাটি নিয়ে আবারও হয়রানি করার পায়তারা করা হচ্ছে বলেও তারা জানতে পেরেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
রেলওয়ে হরিজন কলোনীর পঞ্চায়েত কমিটির কোষাধ্যক্ষ বিধান চন্দ্র হরিজন (জনি) জানান, ৩টি কলোনী নিয়ে ৪ হাজার মানুষের এখানে বসবাস। আমাদের নিজস্ব কোন বিরোধ নেই। মাঝেমধ্যে নিজেদের সমস্যা হলে সমাজ প্রধান ও পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে সে ঘটনার সমাধান করা হয়। আইনী সমস্যা তাদের এখানে খুবই কম। নিজেদের সামাজিক ব্যবস্থা ভালো এবং সর্চ্চার । এরপরও বিভিন্ন বড় ধরনের কোন সমস্যা হলে নিজেরা আইনী প্রক্রিয়ায় সমাধান করে নেই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাংবিধানিক আইনী সমাধানের ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট সহায়তা পান বলে জানান। আইনী সহায়তার ব্যাপারে দলিত হরিজনরা খুবই সচেতন । আইনের কাঠগড়ায় পৌছার আগেই, তাদের সামাজিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই সহজেই সমাধান করা হয় তাদের সমস্যাগুলো ।