শওকত আলী, ঃ
চাঁদপুরে দলিত হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা ব্রিটিশ আমল থেকে বসবাস করে আসছে। এদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ থাকলেও এরা তা’ পাচ্ছে না। এরা সব বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সরকারের সব সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে কোন ফল পাওয়া যায়নি। এদের অভিযোগ জাতীয় সংসদে দলিতদের জন্য বাজেট পাস থাকলেও এরা সে বরাদ্দ পায় না। প্রতিটি জেলার ন্যায় চাঁদপুরে হিজড়াদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও দলিতদের জন্য নেই। দলিতরা সরকারের কাছে তাদের অধিকার পেতে চায়। তারা বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এদেশের নাগরিক হিসেবে ভোটের অধিকারে তারা রাষ্ট্রকর্তৃক সকল সুযোগ সুবিধা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-কর্ম-নিরাপত্তা ও মাথা উচু করে বাঙালির জাতি হিসেবে সকল সুবিধা পেতে সরকারের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
সরেজমিনে চাঁদপুর জেলা শহর অবস্থিত জেলা সমাজ সেবায় কার্যালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, চাঁদপুরে অবহেলিত নিপিরীত একটি গোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করছে দলিত সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ । এদের ২শ’ বছর পূর্বে পূর্ব পুরুষ এদেশে বসবাস করেগেছে। ব্রিটিশ সরকার এদেশের মানুষের নৃত্যদিনের প্রয়োজনে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সম্মত, জীবনের লক্ষে ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশ থেকে এদেরকে এনেছিল। তখনকার সময় সরকার এদের জন্য নির্ধারিত এক স্থানে বসবাসের উপযোগি করে দিয়েছিল। তখন তারা মানুষ হিসেবে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ও সুস্থ্য জীবন যাপনের নিশ্চয়তা পেত। এরা এদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের নৃত্যদিনের ময়লা আবর্জনায় পরিস্কার ও স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেটসহ সব স্থানে তাদের সেবা দিয়ে যেত। এদের জীবন জীবিকা সকল সুযোগ সুবিধা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-নিরাপত্তা পেত। অন্যের স্বাস্থ্য সেবার দিক এরা দেখলেও সরকার এদের সু-চিকিৎসা দিত। এদের সন্তানদের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করার জন্য নিজস্ব এলাকায় শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। সকল নাগরিকের মত এরাও নাগরিক সুবিধা ভোগের নিশ্চয়তা ছিল। কালের পরিবর্তনের ও এদের বংশবৃদ্ধির ফলে পূর্বের বাসস্থানে আর বসবাস যোগ্য হচ্ছিলনা। দিন দিন অবহেলিত জীবন যাপন করে যেতে হচ্ছে। রাষ্ট্র এদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকলে ও শুধু ভোটাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। এদেশের জনপ্রতিনিধি বানাতে এদের মতামত গ্রহণ করছে। এরপর এসব জনপ্রতিনিধিরা আর এদের খবর নেয় না। যার ফলে এরা দিন দিন অবহেলিত একটি গোষ্ঠিতে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-উপজাতি ও হিজড়াদের জন্য সরকারি সকল সেবা পাওয়ার বিধান থাকলেও এদের জন্য কোন সংবিধান অনুযায়ী সুবিধা পেতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে এরা শুধু অবহেলার যন্ত্রনা নিয়ে জীবন যাপন করছে।
স্বাধীনতার পর হতে এরা সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবামূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বিগত সরকার, বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের সরকার দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এদের জন্য জাতীয় সংসদে বাজেটে বরাদ্দ সৃষ্টি করেছে। তবু এরা বরাদ্দ না পেয়ে বঞ্চিত রয়েছে। এরা জানে মন্ত্রণালয় এদের জন্য যে বরাদ্দ পাশ হয় তা জেলা পর্যায়ে পাঠায়। কিন্তু জেলার স্ব স্ব কর্মকর্তারা চাঁদপুরের দলিতদের জন্য কোন নির্ধারিত বরাদ্দ নাই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এসব বরাদ্দ যায় কোথায়? তাই দলিত হরিজনরা চাঁদপুরে প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছে। এরা অধিকার আদায়ের লক্ষে নিজেরা একতাবদ্ধ হয়ে শহরের হরিজনদের তিনটি কলোনী একত্রিত হয়ে সম্প্রতি একটি কমিটি ঘটন করেছে সুবিধা পাওয়ার জন্য।
চাঁদপুরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিসেস জেবুন্নেছা জানিয়েছেন, আমাদের এখানে দলিতদের জন্য কোন বরাদ্দ নেই। স্থানীয় কাউন্সিলররা যে তালিকা দেয় সে তারিকা অনুযায়ী বিভিন্ন ভাতা দিয়ে থাকে। সেখানে নির্ধারিত দলিতের জন্য কোন বরাদ্দ নেই। সকলের জন্য এক নিয়মে ভাতা দেওয়া হয়। এখানে বিভিন্ন ট্রেনিংনের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। ইচ্ছা করলে তারা ট্রেনিং নিতে পারে, বাধা নেই। প্রতিদিন ট্রেনিংনের জন্য ২০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। এরা ট্রেনিংনের জন্য আসেনা। এসব ট্রেনিংনের তাদের প্রয়োজন হয়না। ওদের এমনিতেই আয় বেশি। যার ফলে আমাদের এ দপ্তরে যোগযোগ করে না। এদের জন্য ক্ষুদ্র ঋনের ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর মাধ্যমে মায়েদের ঘর তালিকায় এরা প্রতিবন্ধি ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা নিশ্চে বলে আমার ধারনা। এরা আসলে ভাতা পাবে। আসে না যার ফলে পায় না। জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোবারক হোসেন জানান, আমাদের এখানে দলিতদের জন্য কোন বরাদ্দ নেই। নাগরিক সুবিধা হিসেবে তাদের কেউ কেউ ভাতা নিচ্ছে। সরকারি কোন বরাদ্দ তাদের জন্য নেই। দলিতদের জন্য এ জেলায় বরাদ্দ আসে না। অন্যান্য জেলায় বরাদ্দ রয়েছে। হিজড়াদের জন্য প্রশিক্ষণ করেছে. ট্রেইলারিং, ফ্যাসিয়াল, হেয়ার কাটিংসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। তারা প্রশিক্ষণ নিতে আসে না। তাদের নেতারা তাদের নামে টাকা নিয়ে যায়। তারা দেহ ব্যবসায় উৎসাহী। গতবছর হিজরাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আসা ১৮ লক্ষ টাকা ফেরত গেছে।
যুব-উন্নয়ন অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপ-পরিচালক মোঃ সামছুজ্জামান জানান, দলিতদের জন্য এ ধরণের কোন বরাদ্দ নেই। কাউকেও এ পর্যন্ত কোন বরাদ্দ দেওয়া হয় নাই। এদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কেহ যোগাযোগ করে না। এছাড়া কোন সহযোগিতা চায় না। এরা কখনও যুব উন্নয়ন কার্যালয়ে কোন কাজ নিয়ে আসে নাই। জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ সফিউদ্দিন জানান, দলিতদের জন্য সরকার থেকে সরাসরী কোন বরাদ্দ নেই। এদের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে এবং বিনামূলে বই সরবরাহ করে থাকে। এরা আবেদন করলে কুমিল্লা থেকে এদের জন্য নিম্ন বর্ণের হিসাবে তফসিলই বরাদ্দ আসে। যা দেওয়া যেতে পারে।