মিজান লিটন
দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে বন্যায় উজান থেকে বিশাল জলরাশি চাঁদপুরের মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে ধাবিত হচ্ছে। গত ক’দিন যাবৎ চাঁদপুর জেলার প্রধান ৩টি নদী মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদার পানি জোয়ারে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জোয়ারে মেঘনার পানি বিপদসীমার ২৪ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাটায় অবশ্য সেই পানি নেমেও যায়। চাঁদপুর বন্যা হবার আশঙ্কা নেই বলে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে। জোয়ারে মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ছে। চাঁদপুরে সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল, মেঘনার পশ্চিম পাড় চরাঞ্চল, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ এবং হাইমচর উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে । মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলন স্থলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ঘূর্ণি স্রোত। শহরের ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণবাজার ঠোঁডার পরিস্থিতি ভয়ংকর। এখান দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের নৌযানগুলোকে উপরে উঠতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। স্রোতের তীব্রতায় এ স্থানে নৌ-দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত ক’দিন আগে ১৩ শ’ মে.টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল সহকারে চিতলমারি নামক একটি কোস্টার জাহাজ ডুবে গেছে। বালারহাটের ট্রলারের চালক ঘূণি স্রোতে তলিয়ে গেছে।
স্বাধীন নামে যুবকের লাশ দিয়ে গত ৪ দিনেও পাওয়া যায়নি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর বড়স্টেশন ঠোঁডা সংলগ্ন পুরাণবাজার এলাকায় আরেকটি ট্রলার নিমজ্জিত হয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে পুরাণবাজার থেকে হরিণা পর্যন্ত মেঘনার তীরবর্তী এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে নদীতে ব্যাপক গভীরতা। তাই নদী-ভাঙ্গনের আশঙ্কা রয়েছে। চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ক’টি গ্রাম পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে গতকাল দেখা যায়, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ সড়ক, ১০ নম্বর ঘাট জোয়ারে হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত। রহমতপুর কলোনী এলাকার অনেক সড়কে পানি উঠেছে। চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী। বিআইডাব্লিউটিএ চাঁদপুর কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানিয়েছেন মেঘনার মিলনস্থলে প্রবল বেগে ঘূর্ণি স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় সেখান দিয়ে নৌযানগুলো সাবধানে চলাচলের জন্য সতর্ক করা হয়েছে। পানির তীব্র স্রোতের বিপরীতে উপরে উঠতে গিয়ে জ্বালানি, ভোজ্য তৈলসহ অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ-কার্গো হিমশিম খাচ্ছে। অনেক সময় দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং ইঞ্জিন অকেজো হচ্ছে।