শাহরিয়ার খান কৌশিক ॥
চাঁদপুরে নৌ পুলিশের উপস্থিতিতে হাজীগঞ্জের এক স্বর্ন ব্যবসায়ীর ৪৭ ভরি স্বর্ন ছিনতাই করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্বর্ন ব্যবসায়ী রতন সেন বাদী হয়ে নৌ পুলিশকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দাযের করেছে। স্বর্ন উদ্ধারে গত শনিবার রাতভর অভিযুক্ত নৌ পুলিশের এসআই মোশারফের নাটকীয় অভিযানে ব্যপক গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হাজীগঞ্জ নোয়ারদা গ্রামের মনোরঞ্জন সেনের ছেলে খাজা মার্কেটের নিচ তলার শ্যাম শিল্পালয়ের মালিক রতন সেন (৪৫) ৪৭ ভরি স্বর্ন নিয়ে শনিবার সকাল ৯ টায় ঢাকাগামী ঈগল-১ লঞ্চে রওনা হয়। স্বর্ন ব্যবসায়ী রতন সেন হাজীগঞ্জ থেকে রওনা হওয়ার পরই খবর পেয়ে জনৈক ব্যক্তি ঘটনাটি চাঁদপুরের কোড়ালিয়া রোডের রাজনৈতিক নামধারী নেতা ছিনতাইকারীর হোতা চিহ্নিত ২ সন্ত্রাসকে জানায়। স্বর্ন ব্যবসায়ী রতন সেন ঈগল লঞ্চের ৩য় তলায় সৌখিনে গিয়ে বসে। সকাল ৯টায় লঞ্চ ছাড়ার পূর্বে ঐ ২ চিহ্নিত সন্ত্রাস তাদের সহযোগীদের নিয়ে ব্যবসায়ী রতন সেনকে স্বর্ন চোরাকারবারী অপবাদ দিয়ে তাকে লঞ্চ থেকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে। সে ডাক চিৎকার করলে নিচে গিয়ে নৌ পুলিশের ইনচার্য মোশারফের সলাপরামর্শ করে তাকে নিয়ে পুনরায় লঞ্চের ৩য় তলায় যায়। স্বর্ন ব্যবসায়ী রতন সেন সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীদের ভয়ে সাথে থাকা ৪৭ ভরি স্বর্ন ঐ লঞ্চের যাত্রী তার প্রতিবেশী হাজীগঞ্জের বিএনপি নেতা ইমাম হাজীর কাছে রক্ষিত রাখে। ঠিক ঐ সময়ে নৌ পুলিশ ও সোর্স পরিচয়ে ঐ ২ সন্ত্রাসী ভিতরে প্রবেশ করেই ব্যবসায়ী রতন সেনকে পাচারকারী বলে ব্যপক মারধর করে। নৌ পুলিশের ইনচার্য মোশারফের সামনেই তার সোর্সরা ইমাম হাজীর কাছ থেকে স্বর্ন ছিনিয়ে নিয়ে মোশারফের ইশারায় লঞ্চ থেকে নেমে পরে। পরে ব্যবসায়ী রতন সেনকে স্বর্ন পাচারকারী অপবাদ দিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে নৌ ফাড়িতে এনে বেধম মারধর করে। শারিরীক নির্যাতনের পর এসআই মোশারফ তার মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে স্বর্নের কথা স্বিকার করলে সাংবাদিকের মাধ্যমে পত্রিকায় পাচারকারী আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করবে বলে ভয় দেখায়। শুধু তাই নয় স্বনের কথা কাউকে বললে ও ছিনতাই হয়েছে স্বিকার করলে মামলা দিয়ে রিমান্ডে এনে নির্যাতনের হুমকি দেয়।
স্বর্ন ছিনতাই হওয়ার খবর শুনে রতন সেনের ভাই সুসেন ও স্বজনরা নৌ ফাড়িতে ছুটে আসে। এ সময় ইনচার্য মোশারফ তাদেরকে জানায় স্বর্ন পাচারকারী সন্দেহে রতন সেনকে আটক করা হয়েছে। তার সাথে থাকা স্বর্ন আরেক জনের মাধ্যমে সে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। স্বর্ন ছিনতাই হওয়া কথা স্বিকার করলে তাকে পাচারকারী হিসেবে কোর্টে চালান করা হবে এমনটি জানিয়েছেন রতন সেনের ভাই সুসেন। তারা আরো জানায়, এসআই মোশারফ রতন সেনকে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে প্রায় ৯ ঘন্টা নৌ পুলিশ ফাড়ির একটি কক্ষে লুকিয়ে রেখে ব্যপক নির্যাতন করে। তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা দাবী করে। এ ঘটনা কোন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক দলের নেতাকে জানালে মামলা দিয়ে হয়রানী করবে বলে হুমকি দেয়।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টায় আটক রতন সেনকে নৌ পুলিশ চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে ছিনতাই হওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ প্রায়। রতন সেনের স্বজনরা চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জ স্বর্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দরা থানায় আসে। স্বর্ন ছিনতাই হওয়ার ঘটনা জেনে নৌ পুলিশের ইনচার্য মোশারফকে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। নৌ পুলিশের এএসপি ফারুক, ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন খবর পেয়ে ছুটে আসেন। স্বর্ন উদ্ধার করার কথা বলে ইনচার্য মোশারফ ৯ এসআইকে সাথে নিয়ে কোড়ালিয়া, প্রফসার পাড়া ও মাঝি বাড়ির এলাকায় মেঘনা নদীর পারে বালুর মাঠে নাটকীয় অভিযান চালায়। অবশেষে কোড়ালিয়ার মান্নান কোম্পানীর ৪ তলা বাড়িতে গিয়ে তার ছেলেকে আটক করতে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
এদিকে রাত ৩টায় নাটকীয় অভিযান শেষে বাদী পক্ষকে এসআই মোশারফ মামলা না করার জন্য ১০ লক্ষ টাকার অফার করেছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যপারে নৌ পুলিশের ইনচার্য জানায়, সোর্সের তথ্য মতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে। যে স্বর্ন ছিনতাই হয়েছে তা অচিরেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
নৌ পুলিশের এসপি শাহারিয়ার জানান, স্বর্ন ছিনতাইয়ের সাথে যদি নৌ পুলিশের কোন লোক জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্বর্ন উদ্ধার করা হয়নি বলে জানা যায়।