চাঁদপুরে বিদ্যুতের মহাদুর্যোগ চলছে
*ধার করে সরঞ্জাম এনে বিকল্প পন্থায় সাময়িক বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে
* সহসা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুরবাসী বিদ্যুতের এক দুর্যোগ সময় পার করছে। বজ্রপাত চাঁদপুর পিডিবির যে ক্ষতি করে দিয়ে গেছে তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যার কারণে বিদ্যুতের মহাবিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আর এতে করে চাঁদপুরবাসীকে এক দুর্যোগ সময় পার করতে হচ্ছে। সোমবার রাত ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত স্থানভেদে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ১৮ ও ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় ছিলো শহরবাসী। তবে দুপুর ২টার দিকে শহরের একাংশে বিদ্যুৎ দেয়া হলেও তা স্থায়ীভাবে নয়। অন্য সংস্থা থেকে সরঞ্জাম ধার করে এনে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে, তাও সেটা সাময়িক। এ বিকল্প পন্থায় বিদ্যুৎ দিয়ে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ চালু রেখে দেড়/দুই ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়। চাঁদপুর পিডিবির বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থার বিদ্যুৎ সরবরাহ এভাবেই চলবে। এমন তথ্য জানা গেলো বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে। তবে এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে আরো ২ দিন সময় লাগতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গত ১১জুন শনিবার রাতভর চাঁদপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ বজ্রপাতে চাঁদপুর পিডিবির মহা ক্ষতি হয়। বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়ার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। জানা গেছে, পিডিবির আওতাধীন গুণরাজদী এলাকাস্থ বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রের সার্কিট ব্রেকার দু’টির মধ্যে একটি শনিবার রাতের বজ্রপাতে ধ্বংস হয়ে যায়। এই দু’টি সার্কিট ব্রেকার দিয়েই চাঁদপুর পিডিবি তার গ্রাহকদেরকে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতো। এছাড়াও ডিভাইজসহ অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। বাদবাকি সার্কিট ব্রেকারটিও বজ্রপাতে সমস্যা হয়। সেটি মেরামত করে রোববার দুপুর ১টায় চাঁদপুর শহরের কিছু কিছু অংশ করে বিদ্যুৎ দেয়া হয়। এর আগে শনিবার রাত ১২টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। একটানা ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলো শহরবাসী। তবে একটি সার্কিট ব্রেকারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে লোডশেডিং আগের চেয়ে একটু বেড়ে যায়। রোববার দুপুর থেকে সোমবার সারাদিন বিদ্যুৎ সার্ভিস মোটামুটি চলছিলো। সোমবার রাত প্রায় পৌনে ৮টার দিকে অবশিষ্ট সার্কিট ব্রেকারটিও অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে পুরো চাঁদপুর শহর আবার বিদ্যুৎহীন অবস্থার মুখে পড়ে। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবির) নির্বাহী প্রকৌশলী আ ফ ম মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যে একটিমাত্র সার্কিট ব্রেকার ও ডিভাইজ দিয়ে চাঁদপুর শহরে এ ২ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়েছে, সেটিও অকেজো হয়ে গেছে। এখন আর আমাদের কাছে বিকল্প কোনো পথ নেই চাঁদপুর শহরবাসীকে বিদ্যুৎ দেবার। এখন টঙ্গী থেকে মালামাল এনে সমস্যার সমাধান করে এঙ্পার্টরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সব কিছু ঠিক থাকলে চাঁদপুর পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। আর বজ্রপাতে ঘটে যাওয়া বিপর্যয় পুরোপুরি কেটে উঠতে আরো ২/৩ দিন সময় লাগতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে সোমবার রাত প্রায় ৮টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর টানা ১৮ ঘণ্টা কোথাও ২০ ঘণ্টা চাঁদপুর শহরে বিদ্যুৎ ছিলো না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে চাঁদপুর শহরের কিছু কিছু অংশে হঠাৎ বিদ্যুৎ দেয়া হয়। ঘণ্টাখানেক থাকার পর সোয়া তিনটার দিকে আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘণ্টা দেড়েক পর আবার বিদ্যুৎ আসে। প্রায় এক ঘণ্টা থাকার পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। শহরে বিদ্যুতের ফিডার ভিত্তিক বিভাজনে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে সময়েরও হেরফের ঘটেছে। অর্থাৎ গতকাল দুপুর থেকে রাতভর চাঁদপুর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ এক ঘণ্টা দিয়েছে, দেড়/দুই ঘণ্টা বন্ধ রেখেছে। এভাবেই সাময়িক বিদ্যুৎ সার্ভিস দেয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বিকেলে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এখন ধার করে সরঞ্জাম এনে সাময়িক বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ থেকে একটি সার্কিট ব্রেকার চাঁদপুর পিডিবি ধার এনেছে। সেটি দিয়েই এখন চাঁদপুর শহরে সাময়িক বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। আর এটি কিছুক্ষণ চালিয়ে ও কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখলে দেড়/দুই ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হবে। সে জন্যই চাঁদপুর শহরের মানুষ এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে তো দুই ঘণ্টা পাচ্ছে না। পবিত্র রমজান মাসে মানুষের জরুরি প্রয়োজন অনুভব করে সার্কিট ব্রেকার অন্য সংস্থা থেকে ধার এনে এ বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে চাঁদপুর পিডিবির সাব-স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, পিডিবির চীফ ইঞ্জিনিয়ার সেখানে অবস্থান করছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত টঙ্গী থেকে প্রথম ধাপে এক ট্রাক মালামাল এনে সাব-স্টেশনে কাজ চলছে। আর চীফ ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্য কর্মকর্তাগণ তা তদারকি করছেন। এদিকে চাঁদপুর পিডিবির (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী আ ফ ম মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার রাত থেকে টঙ্গী অবস্থান করছেন চাঁদপুরের মালামাল লোডিং কাজ তদারকি করতে। গতকাল রাত ৯টার দিকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কিছুক্ষণ আগে চাঁদপুর এসে পেঁৗছেছি। দ্বিতীয় ধাপের মালামালও ইতোমধ্যে চাঁদপুর সাব-স্টেশনে পেঁৗছে গেছে এবং পুরোদমে কাজ চলছে। কাজ পুরোপুরি শেষ করে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে আরো দু’দিন সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান। আর এ সময় পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থার বিদ্যুৎ সরবরাহ এভাবেই আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকবে। জনগণকে এ সময় পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান তিনি।