চাঁদপুর:
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপ্সুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে চাঁদপুরে এক হাজারেরও অধিক শিশু অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বিকেল থেকে এমন শিশুর ভিড় হতে থাকে যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিড় সামলাতে হিমশিম খায়। কোনো কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ তলব করা হয়। তবে কর্মরত চিকিৎসকরা বলেছেন, এসব স্রেফ গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।
১২ মার্চ মঙ্গলবার ছিলো জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন। এদিন সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলায়ও ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী সকল শিশুকে ১টি করে নীল রংয়ের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল, ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লাল রংয়ের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ২৪ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে ১টি করে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। এই ক্যাম্পেইন চলাকালীন দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে এমনকি মারা যাবার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই গুজবে চাঁদপুর জেলাও আক্রানত্দ হয়। বিকেল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শিশুরা অসুস্থ হওয়ার খবর আসতে থাকে। জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজলা কমপ্লেক্সে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে ভিড় করতে থাকে। অভিভাবকরা জানান, শিশুরা ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং কৃমিনাশক বড়ি খাওয়ার পর বমি ও পাতলা পায়খানা করতে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ২শ’, হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই শতাধিক, শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন শতাধিক, ফরিদগঞ্জে শতাধিক, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় অর্ধশতাধিক, হাইমচরে ১০-১২ জন, মতলব উত্তরে ১০-১২ জন ও কচুয়ায় ৪-৫ জন শিশু চিকিৎসা নেয়। তবে সরজমিনে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে এবং কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খবর নিয়ে জানা গেছে, অল্প সংখ্যক শিশু বমি ও পাতলা পায়খানার কারণে হাসপাতালে আসলেও অধিকাংশ শিশুর অভিভাবকরা আতঙ্ক ও গুজবের কারণে শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসে। আর হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসকরা সান্ত্বনা স্বরূপ চিকিৎসা দিয়ে বিদায় করে দেয়।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম আবদুস সাত্তার মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি গুজব ও আতঙ্ক ছাড়া অন্য কিছুই না। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলটা খেলে কোনো কোনো শিশুর একটু বমি হতে পারে। এতে ভয় বা আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। বমি করলেও কিছুক্ষণ পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমার কাছেও সন্ধ্যা থেকে অনবরত ফোন আসতে থাকে। আমি সব উপজেলায় খোঁজ-খবর নিয়েছি। আমি নিজে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে অনেকক্ষণ অবস্থান করেছি। সব জায়গায় স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। মানুষ গুজবে আতঙ্কিত হয়েই মূলত এমনটি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চাঁদপুর জেলার দায়িত্বে থাকা ডাঃ শেখ মনিরুল আলম জানান, কোনো কোনো শিশু ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেতে পারে না। ক্যাপসুলের আবরণে তৈলাক্ত পদার্থ রয়েছে। তা মুখে দিলে বমির ভাব হয়। ২-১ ঘণ্টা পর ঠিক হয়ে যায়। ভয়ের কোনো কারণ নেই। কিছু কিছু ডাক্তার বলেছেন, খালি পেটে খেলে এই সমস্যা হতে পারে। এদিকে রোগী নিয়ে অভিভাবকদের ভিড় সামাল দিতে শাহরাস্তি ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।