মিজান লিটন=====
চাঁদপুরে ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ব্যাপক সহিংসতা, পত্রিকা অফিসে হামলা, সাংবাদিকের উপর হামলা, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও শতাধিক গণপরিবহন ভাংচুরের মধ্য দিয়ে চাঁদপুরের প্রথমদিন অতিবাহিত হয়েছে। পিকেটিংকালে চাঁদপুর শহরের আক্কাস আলী, কলেজ গেইটসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬ জন পিকেটারকে পুলিশ আটক করেছে। সকাল থেকে চাঁদপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে অবরোধকে কেন্দ্র করে ১৮ দলীয় জোট নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। সকাল ৭টায় চাঁদপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ১৮ দলীয় জোট নেতা-কর্মীরা আক্কাছ আলী রেলওয়ে একাডেমীর সামনে রেল লাইনে টায়ার আগুন ধরিয়ে দেয়। এমনকি পরিত্যক্ত রেল লাইন মূল লাইনের উপর ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। রেল লাইনের আগুন জ্বালানোর খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ অবরোধকারীদেরকে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় কয়েকজন পিকেটারকে ঐ স্থান থেকে আটক করা হয়।
অপরদিকে চাঁদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ড বাবুরহাট এলাকায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল যৌথভাবে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে । বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়কে অবরোধকারীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। বাকিলা বাজারে ভোর রাতে ১৮ দলীয় জোট নেতা-কর্মীরা চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় দেড়শতাধিক গাছের গুঁড়ি বিভিন্ন স’মিল থেকে নিয়ে রাস্তায় ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। এই গাছের গুঁড়ি দীর্ঘ সময় রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। সকাল ৯টায় জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুনবারজার এলাকায় গেলে মিছিল থেকে দৈনিক চাঁদপুর বার্তার সম্পাদক অ্যাডঃ আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন পাটওয়ারীর ‘ল’ চেম্বারে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। একই জায়গায় ক্যাফে ঝীল রেষ্টুরেন্টকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ২য় তলার বাউণ্ডারী গ্লাস ভাংচুর করা হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শরিফ মোঃ ইউনুস, যুগ্ম সম্পাদব দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান গাজী, যুব বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস আলম বাবু, জেলা যুবদলের সভাপতি শাহজালাল মিশন, শহর যুবদলের আহ্বায়ক আঃ কাদের বেপারী, জেলা ছাত্র দলের সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহারসহ ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীরা। সকাল থেকেই ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। তারা শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাসের সামনে খরকুটা কুঁড়িয়ে বিশালাকারে স্তুপ দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। পুলিশ আগুন নেভাতে গেলে তাদের লক্ষ্য করে বৃষ্টির ন্যায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া দিলে প্রফেসর পাড়ার ভেতর থেকে বিভিন্ন বোতলের মধ্যে চুনের পানি দিয়ে ককটেল তৈরি করে নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশের সাথে সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ধাওয়া পাল্টা চলে।
দুপুর ১২টায় চাঁদপুর শহরতলীর ওয়াপদা গেইট এলাকায় চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক আলোকিত চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জাকির হোসেন স্থানীয় বেশক’টি পত্রিকার বাণ্ডেল হাজীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে দিয়ে চাঁদপুর আসার পথে ঐ স্থানে আলম খানের নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট নেতা-কর্মীরা তার গতিরোধ করে। মোটরসাইকেলে প্রেস লেখা থাকলেও শিবিরপন্থী পিকেটাররা জাকির হোসেনের উপর হামলা চালায়। এতে জাকির হোসেনের ডান হাত ভেঙ্গে যায়। আত্মরক্ষার্থে জাকির হোসেন পেট্রোল পাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেয়; সেখানে গিয়েও তার উপর হামলা করা হয়। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেলটিতে তেল ঢেলে পিকেটাররা আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে কয়েক বালতি পানি ঢেলে মোটর সাইকেলটিকে রক্ষা করে । এসব ঘটনার মধ্যদিয়েই ১৮ দলীয় জোটের ৪৮ ঘন্টার অবরোধের প্রথমদিন অতিবাহিত হয়। অবরোধের কারণে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের চলমান সমাপণী পরীক্ষাগুলো গতকাল মঙ্গলবার স্থগিত করা হয়। চাঁদপুর থেকে নৌ-পথ ও সড়ক পথে তেমন একটা যানবাহন চলাচল করেনি। তবে দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন চাঁদপুর পৌঁছায়। আধা ঘন্টা পর তা পুনরায় চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে ছেড়ে যায়।
দুপুর ১২টায় প্রিন্স অব রাসেল নামে একটি লঞ্চ ইচলী থেকে ছেড়ে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে এসে স্বল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। মেঘনা রাণীর পরিবর্তে বোগদাদীয়া-৬ ঢাকা থেকে ফেরিঘাট-চাঁদপুর-ঢাকা রূটে আসা যাওয়া করে। দুপুর দেড়টায় বোগদাদীয়া-৯ ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর ঘাট না ধরে সরাসরি হাইমচর চলে যায়। নারায়ণগঞ্জ রূটে একতলা দু’টি লঞ্চ ও ঢাকা-চাঁদপুর-কোদালপুর রূটের এমভি লামিয়া নামে অপর একটি লঞ্চ চাঁদপুর ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। ময়ূর ও ঈগল লঞ্চের সুপারভাইজার আলী আজগর সরকার জানায়, অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে ঘাটে যাত্রীর সংখ্যা কমে যায়। ভয় ও আতঙ্কে রয়েছে নৌ-পথের যাত্রীরা। সেজন্য তেমন কোনো যাত্রী না থাকায় চাঁদপুর থেকে ২/৩টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। ভাংচুরের আতঙ্কে চাঁদপুর আন্তঃজেলা পৌর বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা,চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কচুয়া, সিলেট, দিনাজপুরসহ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেনি।
শিরোনাম:
শনিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।