চাঁদপুরের বাজারগুলোতে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু এবারও পাটের আশানরূপ মূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে। জেলায় এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪হাজার ২শ’ ২৬ হেক্টর জমি। চাষ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬শ’ ২০ হেক্টর জমিতে। চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ১১ জুলাই ২০১৩ তারিখের প্রতিবেদনের আলোকে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩শ’ ৯৪ হেক্টর জমিতে বেশী চাষাবাদ হয়েছে।
দেশী পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২হাজর ২শ’ ৩৮ হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ২ হাজার ৪শ’ ৯০ হেক্টর, তোষা লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩শ’ ৮৫ হেক্টর, চাষাবাদ করা হয়েছে ১হাজর ৪শ’ ৪৫ হেক্টর, কেনাফ পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হেক্টর, চাষাবাদ হয়েছে ৪শ’ ৯৫ হেক্টর, মেছতা লক্ষমাত্রাছিল ৫শ’ ৯৯ হেক্টর চাষবাদা হয়েছে ১শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দেশী ও তোষা সদর, মেস্তা ফরিদগঞ্জ ও কেনাফ হাইমচরে বেশী চাষাবাদ হয়েছে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে দেশীয় পাট প্রায় ৪৫মন এবং তোষা পাট প্রায় ৫০মন উৎপাদন হয়েছে। বতর্মানে বাজারে দেশী পাট প্রতিমন ৯শ’ ৫০ টাকা, তোষা ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর, শাহমাহমুদপুর, আশিকাটি, কল্যানপুর, তরপুরচন্ডী, বাগাদী ও চান্দ্রা ইউনিয়নে এ বছর পাটের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ক্ষেতের পাট কেটে জাগ দিয়েছে। আবার অনেক স্থানে কৃষাণীরা পাটের আঁশ তুলতে ব্যস্ত দেখা যায়। এদিকে বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু পাটের আশানরূপ মূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে হাসি নেই।
এ বছর সময়মত বৃষ্টি হওয়ায় পাট অপেক্ষাকৃত লম্বা হয়েছে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী পাট উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু পাট উৎপাদনে প্রতিদিন একজন শ্রমিককে মজুরী হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দিতে হয়। বীজ, কৃষকের মজুরী ও সারসহ সব খর মিলিয়ে যে পরিমান টাকা খরচ হচ্ছে, সে তুলনায় পাটের বর্তমান মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা বর্তমান পাটের মূল্য ২হাজার থেকে ২হাজার ৫শ’ টাকা নির্ধারণ করলে খরচ পুসিয়ে আসবে বলে জানান। দাবীকৃত মূল্যে যদি পাট বিক্রি না করা যায়, তাহলে আগামীতে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের কৃষক আঃ রাজ্জাক খুব ধীর কন্ঠে জানান, তিনি এ বছর প্রায় ১একর জমিতে দেশীয় (সুতলি পাট) পাটের চাষ করেছেন। তিনি এখনো বাজারে পাট নেননি। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী বাড়িতে পাট ক্রয় করতে এসে ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকার বেশী দাম বলছে না। তিনি আরো জানান, পাটের সঠিক মূল্য না পেলে অনেকেই চাষাবাদে আগ্রহ থাকবে না।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফয়েজ উদ্দিন জানান, এবছর পাট উৎপদানে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশী পাট উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে পাটের মূল্য বেশ ভালো থাকলেও এখন প্রায় ৩শ’ থেকে ৪শ টাকা কমেছে। তবে কিছুদিন পর মূল্য আরো বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।