চাঁদপুরে সংখ্যা লগুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হলেও এর প্রতিকার পায়না তারা ঃ
প্রশাসন লিপিবদ্ব করা পর্যন্তই দায়িত্ব পালন
শওকত আলী-
চাঁদপুর শহরে ও উপজেলাগুলোতে সংখ্যালগুদের প্রচুর বসবাস রয়েছে।তারা অন্য ধর্মীয় লোকদের হাতে স্বাধীনতার পর থেকেই লাঞ্চিত হয়ে আসছে।তাদের ধমীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কারন ছাড়াই আক্রমনের স্বীকার হয়ে আসছে।তাৎক্ষনিক এসব ঘটনা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে কোন প্রতিকার পায়না তারা।প্রশাসন সংখ্যালঘুদের এই সব ঘটনার ব্যাপারে মামলা হামলা চালালেও এক পর্যায়ে নিস্কিয় হয়ে যায়। তাদের এ কার্যক্রম শুধু লিপিবদ্ব হয়ে পড়ে থাকে।এখানে তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছেনা। যার ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আক্রমন কমে না বরং বেড়েই চলে। চাঁদপুর সদর উপজেলা,কচুয়া,ফরিদগজ্ঞ ,মতলব দক্ষিন,শাহারাস্তি ও হাজীগঞ্জ এলাকায় হাজার হাজার ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের বসবাস রয়েছে।এসব উপজেলার মধ্যে বর্তমানে হাজীগঞ্জ,ফরিদগজ্ঞ,মতলব দক্ষিন ও চাঁদপুর সদরে এদের বসবাস বেশী।এছাড়া চাঁদপুর শহরে পুরান বাজার এলাকায় হিন্দু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বসবাস অত্যান্ত বেশী। পুরান বাজারের ব্যবসা বানিজ্য নিয়ন্ত্রন করে থাকেন এ সম্পদায়ের ব্যবসায়ীরা।এখানকার বৃহত ব্যবসায়ী সংগঠন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন বাবু সুভাষ চন্দ্র রায়। এছাড়া এ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব-গুরুত্বপূর্ন পদে রয়েছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাদা বাবুরা।এক জরিপে দেখা যায়,স্বাধীনতার পর থেকে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন,তাদের বাড়ী ঘর দখল,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখল,ধমীয় প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর,প্রতিমা ভাংচুর,অগ্নি সংযোগ ও অনেক সংখ্যালঘু ব্যাক্তিদেরকে হত্যা ও হত্যা করে তাদের লাশ গুম করার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে সংখ্যালঘু নেতারা জানায়।জেলা ও উপজেলায় সংখ্যালঘুদের সাথে ও তাদের নেতাদের সাথে আলাপ কালে জানাগেছে,যুগ-যুগ ধরে এদেশে বিভিন্ন জেলায় ও চাঁদপুর জেলায় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আঘাত হয়েছে অসংখ্যবার। এই সব আঘাতের কিছু কিছু ঘটনা প্রশাসনের কর্নগোচরে গিয়ে মামলা বা পরবর্তী তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আবার অনেক ঘটনা রাজনৈতিক কারনে প্রশাসনের কর্নগোচরে গিয়ে পোছলেও তা কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেক সময় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিমা ভেংগে অন্যকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করিয়েছে স্বার্থনিশি মহল। বর্তমান সরকারের ইউ,পি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।এক শ্রেনীর স্বার্থনেশী মহল ও অসাধু ব্যাক্তিরা নিজেদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ উদ্দারের জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা,প্রতিমা ভাংচুর,অগ্নি সংযোগ সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ব্যাক্তিকে হত্যা করার মতো ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।এসব ঘটনা স্থানীয় সংসদ সদস্য,প্রশাসনিক কর্মকর্তা ,রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও স্থানীয় ইউ,পি সদস্যরা অবগত রয়েছে বলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নেতারা জানান।অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করার চেষ্টা চালালেও রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে আর ঘটনাটি সামনে এগিয়ে আলোর মূখ দেখতে পায়না। যার সব অপরাধ এসে পড়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপর।
চাঁদপুর জেলা হিন্দু সম্প্রাদায়ের নেতা জীবন কানাই চক্রবর্তী বলেন,যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আঘাৎ করে তারা রাষ্ট্রের শত্রু।ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আঘাৎ মানবতা বিরোধী অপরাধ।যারা এধরনের ঘটনা ঘটায় তারা কোন ধর্মেরই মঙ্গল চায়না।তারা সকলের জন্যই বিপদ জনক।এদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি কামনা করি।ধর্মীয় বেদাবেদ বলতে কিছু নেই। সকলেই এদেশের নাগরিক।সকলেই শান্তিতে বসবাস করুক এইটাই আমাদের কাম্য।
এই ব্যাপারে চাঁদপুর শহরে স্বর্নখোলা হরিজন কলোনীর নেতা নন্দ কিশোর হরিজন বলেন,চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে হরিজন কলোনী,পুরান বাজার হরিজন কলোনী ও স্বর্নখোলা হরিজন কলোনীর ধমীয় প্রতিষ্ঠানে কখন হামলা হয় নাই। আমরা স্বাভাবিক ভাবে সকলের সাথে মিলে মিশে বসবাস ও চলাচল করে থাকি।এদেশে তথা চাঁদপুরে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদেরকে তাদের পরিবারের লোকজন মনে করে।সব সময় ডাক খোজ দিয়ে পাশে রাখে।সারা দিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। রাতে এসে বিশ্রাম ও ঘুম যাই।কখনও কোন ধর্মীয় কোন ঘটনার খবর নেওয়ার সময় পাইনা। ববে চাঁদপুরের হাজীগজ্ঞ,ফরিদগজ্ঞ,মতলব,কচুয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যে হামলা হয়েছে তা শুনেছি। এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়।এসব ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাধান করে দিয়ে সংখ্যালঘুদের বসবাস যোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তানা হলে এভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হবে। তাকেহ আশা করে না।ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার,এদেশের দাদা বাবুদের মঙ্গল কামনা করি।আমাদের প্রতি ভাল দৃষ্টি দেওয়ার জন্য।
এই ব্যাপারে ফরিদগজ্ঞ পুঁজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক লিটন চন্দ্র সরকার জানান আমাদে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কিছু অসাধু রাজনৈতিক লোক রাজনৈতিক ভ্যানার ব্যবহার করে কয়েকটি ধর্মীয় মন্দিরে হামলা করেছে।১১নং আলোনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কালী মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করে। এই ব্যাপারে মামলা হয়। ১২নং চরদুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ শীল বাড়ীতে একদল দূর্বৃত্ত পেট্রোল ঢেলে মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়।তাৎক্ষনিক এলাকাবাসী টের পেয়ে নিজেরা আগুন নিবিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে ঐ এলাকার চেয়ারম্যান আঃহাই আশ্বাস দিয়ে ও এপর্যন্ত কিছুই করেন নাই। ঐ মন্দিরের পার্শ্বে মুক্তিযোদ্ধা হিন্দু পরিবার গণেশ চক্রবর্তীও .১৫ শতাংশ জায়গা দূর্বৃত্তরা দখল করে এবং গাছপালা কেটে নিয়ে যায়। এই ব্যাপারে মামলা হয়। চেয়ারম্যান আঃহাই এই ঘটনার শালিশ করার আশ্বাস দিয়েও কিছু করেন নাই। ঘটনা পর পর চাঁদপুরের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল তদন্ত করেছেন। ১নং বালুথুবা ইউনিয়ন পরিষদের দাস পাড়ায় গত প্রায় ৩ মাস পূর্বে শুকরজ্ঞন দাস নামে এক ব্যাক্তিকে খুন করে লাশ নদীতে পেলে দেয়। এই ঘটনায় মামলা হয়। আসামী ধরা পড়ে এবং পরবর্তীতে জামিন পায়।মামলাটি চলিতাবস্থায় রহিয়াছে।পাশাপাশি আরো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, যা পুঁজা পরিষদের সহযোগীতায় সংসদ সদস্য ইউ,এন,ও থানার অফিসার ইনচার্জ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি সুদৃষ্টি দিয়ে সমাধান করেন।বিগত দিনে ৫/৬টি ঘটনা ঘটে ছিল।তাও পুলিশ সুপার ও প্রশাসনের সহযোগীতায় সমাধান হয়।
এই ব্যাপারে স্বর্নখোলা হরিজন কলোনীর শ্যামল চন্দ্র হরিজন বলেন যে কোন ধর্মের উপর আঘাৎহানা সঠিক না।এইটি অমানবিক কাজ। যারা করে তারা মানুষের মধ্যে পড়ে না। তারা মানুষের কাতারে আসে না। কিছু দিন পূর্বে হাজীগজ্ঞ লক্ষী নারায়ন জিও আখড়ায় একটি হামলা হয়েছিল । সে ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়। এধরনের কাজ করা বিধি সম্মত নয়। যার যার ধর্ম সে পালন করবে।সেখানে হস্তক্ষেপ করা ঠিক না। রাষ্ট্রের শৃংখলার মধ্যে পড়ে না। যা রাষ্ট্র বিরোধী কাজ। এধরনের কাজ যারা করে ,এদের শাস্তি দাবী করি। এদেরকে রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।আগামীতে শান্তিতে বসবাস করতে চাই, এদেশের একজন নাগরিক হিসাবে।