শওকত আলী, ঃ
চাঁদপুরে জাতীয় পর্যায়ে সবার জন্য শিক্ষায় দলিত জনগোষ্ঠি তাদের সন্তানদের শিক্ষা অর্জনের জন্য ব্যাপক ইচ্ছা ও উচ্চ চিন্তা রয়েছে। তারা তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাদের একটাই লক্ষ্য মাত্রা তাদের সন্তানরা তাদের বর্তমান পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পেশা বাদ দিয়ে উচ্চ আসনে বসার জন্য এবং এ পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় কাজ করে তাদের মান সম্মান অর্জন করার ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। দলিত জনগোষ্ঠি পূর্বের চাহিতে দিনদিন তাদের সন্তানদের শিক্ষা অর্জনের আগ্রহের প্রতি ফলন ঘটাচ্ছেন। সরকার দলিতদের জন্য তাদের নিজস্ব এলাকায় শিক্ষার পিরবেশ তরান্বিত করার ব্যবস্থা করলে তারা আরও অগ্রগামী হতে পারবে বলে তাদের দাবী। দলিতদের সন্তানরা শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে যেহেতু অনেক দুর এগিয়ে রয়েছে সে ক্ষেত্রে সরকারি পক্ষ থেকে তাদের জন্য বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেনা। যার ফলে তাদের শিশুরা শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।
চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে ও উপজেলা গুলোতে দলিতদের প্রচুর পরিমান বসবাস রয়েছে। এর স্বাধীনতার পূর্বে বৃটিশ শাষনামলে এদেশে তাদের আবির্ভাব হলেও তারা একটি সিমাবদ্ধ জায়গায় বসবাস করতে হয়। অন্য সব গোত্রের মানুষের মতো তাদের ইচ্ছামতো বসবাস করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে উঠেনা। যার ফলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসবাস করার কারনে তাদের সন্তানদের সবার জন্য শিক্ষা ও কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের মেধার বিকাশ করতে পারছেনা বলে দলিতদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়। বর্তমান সরকারের জাতীয় পর্যায়ে সবার জন্য শিক্ষা এ কর্মসূচি ঘোষণা করলে তারা বৈষম্যের কারনে বহু পুর্ব থেকে শিক্ষা অর্জনে পিছিয়ে রয়েছে বলে তাদের নেতারা জনান। এদেশ যখন শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে তখন দলিতরা তাদের শত বাঁধা পেরিয়ে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে চেষ্ঠা অব্যহত রেখেছে। তাদের ভাবনা তারা এদেশে যেমন অবহেলিত তেমনি শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে সরকারের শিক্ষা বিভাগের সহযোগীতা পাচ্ছেনা।
তাদের অনেকের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, তাদের মধ্যে অনেকে রয়েছে যারা অন্যত্রে গিয়ে দলিত পরিচয় গোপন রেখে শিক্ষা অর্জন করে সরকারি সকল পর্যায়ে সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চ পর্যায়ে গিয়েছে এবং যাওয়ার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। দলিত নারি-পুরুষ, যুবক-যুবতিরা জানান, তাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি জেলায় যেখানে দলিতদের বসবাস সেখানে শিক্ষা অর্জনের পরিবেশ সৃষ্টি করলে দলিত জনগোষ্ঠীর সন্তানরা শিক্ষা অর্জন করে নিজেদের পরিচয়ে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন রেলওয়ে হরিজন কলোনী, স্বর্ণখোলা হরিজন কলোনী, নতুন বাজার মুচি বাড়ি, কাচ্চা কলোনী, জেটিসি শ্রমীক কলোনী, নতুন বাজার এসবি খালের পাশে বসবাসকারী দলিত সহ অসংখ্য দলিত জনগোষ্ঠি বসবাস করছে চাঁদপুরে। তাদের জন্য কোন বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। শুধু মাত্র রেলওয়ে হরিজন কলোনীর নিকট স্কেভেঞ্জাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে বিগত দিনে শুধু দলিত সম্প্রদায়ের শিশুরা শিক্ষা অর্জন করতো। বর্তমানে সে বিদ্যালয়ে অন্য শ্রেণী পেশার মানুষের সন্তানরা পড়াশুনা করায় দলিত সম্পদায়ের শিশুরা সঠিক ভাবে পড়াশুনা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে বিধান চন্দ্র দাস জনি হরিজন জানান। এক জরিপে দেখা গেছে, বিগত প্রায় ১৫-২০ বছর পূর্বে দলিত সম্প্রদায়ের শিশু কিশোরদের শিক্ষা অর্জনে তেমন আগ্রহ তাদের মধ্যে ছিলোনা। বর্তমানে পূর্বের চাইতে দলিত জনগোষ্ঠির অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেকগুন আগ্রহ বেড়েছে। তারা তাদের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাতে অধির আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তাদের শিক্ষার প্রতি পূর্বের চাইতে আগ্রহ অনেকগুনে বেড়েছে।
এক্ষেত্রে অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, দলিতদের প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ বর্তমানে বেড়েছে। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার আকতার হোসেন জানান, চাঁদপুরে দলিতদের জন্য সরকারি ভাবে বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধার বরাদ্ধ নেই। এ জেলায় এদেরে জন্য ভিন্ন কিছু আছে না। তবে বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর রেলওয়ে হরিজন কলোনীর শ্রীশ্রী মহাবীর ও রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক বিধান চন্দ্র হরিজন জনি জানায়, হরিজনরা সকলেই শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য অনেক আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু তাদের ইচ্ছা থাকলেও দরিদ্রতা এবং আর্থিক কারনে শিক্ষা সম্পূর্ন করতে কষ্ঠ হচ্ছে। অভিভাবকদের শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক হরিজনরা এখন চেষ্টা করছে। সরকারি ভাবে উপবৃত্তি এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যদি হরিজনদের দেওয়া হয় তাহলে আরো দ্রুত শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষিত হবে আমাদের সন্তানরা। সরকার হরিজনদের জন্য আলাদা শিক্ষা বরাদ্ধ রাখলে হরিজনদের শিশুরা আরো ঝড়ে পড়া থেকে রক্ষা পাবে। তবে পূর্বের চাইতে বর্তমানে দলিত জনগোষ্ঠির শিক্ষার প্রতি আগ্রহ অনেক গুন বেড়েছে। চাঁদপুর রেলওয়ে হরিজন কলোনীর সামনে একটি ১শ’ বছরের পুরনো প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এখনও চাঁদপুরের হরিজনরা ভিন্ন ভাবে শিক্ষা বিভাগ থেকে বরাদ্ধ পায় না। জাতীয় ভাবে যা হচ্ছে তাই পাচ্ছি। ১শ’ বছর পূর্বের যে বিদ্যালয়টি রয়েছে সেটি রেলওয়ে হরিজন কলোনীর হরিজনরাই নিয়ন্ত্রন করতো। বর্তমানের সেটিও তাদের নিয়ন্ত্রনে নেই। বহিরাগতরা সে বিদ্যালয়টি নিয়ন্ত্রন করছে। সেখানে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূল্যায়ন করছে না। তাতে এ কলোনীর হরিজনরা ক্ষব্ধ অবস্থায় রয়েছে। হরিজনরা যখন নিয়ন্ত্রন করতো তখন তাদের গোত্রের লোকেরাই এ বিদ্যালয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন পদে ছিলেন।
পুরান বাজার হরিজন যুব ক্লাবের সভাপতি শ্যমল দাস হরিজন বলেন, পূর্বে পুরান বাজারের শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্ন বৈষম্য ছিলো। বর্তমানে এখন তা নেই। এখন শিশুরা ভালো মতো শিক্ষা অর্জন করতে পারছে। হরিজন ঐক্য পরিষদের পক্ষথেকে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম দেখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সামান্ন পরিমানে শিক্ষা সুযোগ দেওয়া হয়। চাঁদপুরে হরিজনদের হরিজন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা রয়েছে। যা সরকার কর্তৃক সমাজ কল্যান বিভাগ থেকে রেজিষ্ট্রিকৃত। বিভিন্ন সময় সরকারের সমাজ কল্যান বিভাগ থেকে হরিজনদের পড়াশুনার পাশাপাশি সেলাই, কম্পিউটার, ড্রাইভিং সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। এসব সুযোগ সুবিধা পেয়ে হরিজন শিশুরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। এসব সুযোগ সুবিধা পূর্বে ছিলোনা তবে বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে। দলিত জনগোষ্ঠির শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে পূর্বের চাইতে বর্তমানে অনেকগুন আগ্রহ বেড়েছে। অভিভাবকদের পাশাপাশি শিশুরাও শিক্ষা অর্জনের জন্য আগ্রহ হচ্ছে। শিক্ষা অর্জন করে বিভিন্ন সরকারি, বে-সরকারি দপ্তরে নিয়মিত কাজ করছে। তারা সুইপিং পেশা বাদ দিয়ে তাদের সন্তানদের অন্য পেশায় কাজ করার চিন্তা ভাবনা করছে।
তিনি আরো জানান, চাঁদপুর পৌর সভায় দলিত হরিজনদের শিক্ষিত ছেলেদের চাকুরী দেওয়া হলেও তাদেরকে চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেনা এখানকার কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা ট্রাকে ও ড্রেনের কাজ দিচ্ছে শিক্ষিত যুবকদের। এসব যুবকরা ট্রাক ও ড্রেনে কাজ করতে আগ্রহী না। তাই তারা তাদের শিক্ষা অর্জনের মর্যদা সাচ্ছে। ট্রাকে ও ড্রেনে কাজ না করায় তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাদেরকে পৌরসভায় পিয়নের চাকুরীও দিচ্ছে না। তাহলে তাদের শিক্ষা অর্জন করে তার কি পেলো। দলিত হরিজনদের যারা শিক্ষিত না তাদেরকে ড্রেনে বা ট্রাকে কাজ করার জন্য বললে চলে। কিন্তু যারা মোটামোটি শিক্ষিত তাদেরকে সঠিক মর্যাদা পূর্ণ কাজ দেওয়ার জন্য তারা পৌর মেয়রের কাছে দাবি করছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর শহরের কোর্ট স্টেশনের ফ্লাট ফর্মে বসে জুতো সিলাইর কাজ করা জগন্নাথ বনিঋশি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জুতো সিলাইর কাজ করে ৩-৪শ’ টাকা উপার্জন করে থাকি। সে টাকা দিয়েই বাসা ভাড়া, সংসারের খরচ মিঠিয়ে ৩টি সন্তানকে লেখা পড়া করাচ্ছি। ১টি সন্তান নবম শ্রেনী, ১টি সপ্তম শ্রেণী ও ১টি পঞ্চম শ্রেনীতে পড়া শুনা করে। এদেরকে প্রাইভেট বিদ্যালয়ে পড়া শুনার খরচ ছাড়াও প্রতি মাসে প্রাইভেট শিক্ষক খরচ ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। সরকারি ভাবে কোন সুযোগ সুবিধা পাইনা সন্তানদের শিক্ষার জন্য। তবে বিগত দিনে আমাদের দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়াশুনার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিলোনা। বর্তমানে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ অনেক গুন বেড়েছে। চাঁদপুরে দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য কোন বিদ্যালয় সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। তাই আমাদের সন্তানদের শিক্ষার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাঁদপুরের শিক্ষা বিভাগ থেকে শিশুদের শিক্ষার জন্য বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধা নেই।
শিরোনাম:
বুধবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।