শওকত আলী ঃ
হতদরিদ্র মানুষদের জন্য শুরু হওয়া বিশেষ খাদ্য কর্মসূচিতে চাঁদপুরে নতুন ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। কার্ডধারীদেরকে দুই মাসের চাল দেওয়া হলেও কার্ডে উল্লেখ করা হয়েছে তিন মাসের কথা। আবার যে তালিকা করা হয়েছে, তার বদলে চাল দেওয়া হয়েছে অন্যদেরকে।
খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড তালিকা সাদা কালি (ফ্লুইড) দিয়ে মুছে অন্য জনকে চাল দেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিরাও।
দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো চাঁদপুরেও টাকার বিনিময়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে নাম তোলা, হতদরিদ্রদের বদলে স্বচ্ছলদের নাম তালিকাভুক্ত করা, ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। চাল বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবেশকরাও এখানে তালিকায় কারচুপি নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।
চাঁদপুরের বালিয়া ইউনিয়নের কুমুরুয়া গ্রামের ৪৪৯ জন পেয়েছেন খাদ্য কর্মসূচির কার্ড। এরা সবাই চাল পেয়েছেন দুই দফা। কিন্তু কার্ডে দেখানো হয়েছে তিনবার। একেকবার এদের পাওয়ার কথা ১৩ হাজার ৪৭০ কেজি। তাহলে এই পরিমাণ চাল কোথায়? সেই প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছে।
কার্ডধারী ইকবাল হোসেন শেখের মা আবেদা খাতুন জানান, তাদেরকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে দুইবার। কিন্তু তাদের কার্ডে সই রাখা হয়েছে তিনবার।
ওই এলাকার দেলোয়ার হোসেন শেখের পরিবারের লোকজন জানান, তারা কার্ড পেয়েছেন ১৩ নভেম্বর, এর আগে কার্ড পাননি। কিন্তু তাদের কার্ডেও তিনবার চাল দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। ওই কার্ডে সই না থাকলেও টিপ চিহ্ন রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বালিয়া ইউনিয়নের পরিবেশক মাসুদ হোসেন সোহাগ বলেন, ‘সরকারি চাল বিতরণের কোন অভিজ্ঞতা আমার নেই। এই প্রথম চাল বিতরণ করছি। বিতরণ করার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী অনেকেই আমাকে চাপপ্রয়োগ করে কার্ড ছাড়াও চাল নিয়েছেন। আমার ৪৪৯ জন কার্ডধারীর মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে অনেকেই চাল নেননি। কিন্তু আমি ৪৪৯ জনের মধ্যেই চাল বিতরণ হয়েছে দেখিয়েছি।’
খাদ্যবান্ধব কার্ডেও জালিয়াতি ঃ
এই ইউনিয়নে এছাড়া একই বাড়িতে চার কার্ডধারীর দুইটি কার্ডের সদস্য নম্বরে কাটাকাটি করা হয়েছে। কয়েকজনের সইয়েও গড়মিল রয়েছে।
পরিবেশক মাসুদ হোসেন সোহাগ বলেন, ‘যারা তালিকায় নাম তুলেছেন তারা অনেকে স্বজনপ্রীতি করে সম্পদশালীদের নাম তালিকায় দিয়েছেন।’
সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র জানান, চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেবেন।
কার্ড করতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ঃ
এক নং বালিথুবা (উ.) ইউনিয়নের ডিলার পয়েন্টে গেলে ডিলার মোজাম্মেল হোসেন ও পাঁচ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মহিবুল্লাহর উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদেরকে তাদের কার্ড দেখিয়ে বলেন, অন্যান্য ইউনিয়নে তৃতীয় কিস্তির চাল বিক্রি হলেও তারা পেয়েছেন দুইবার। এছাড়া ওয়ার্ড মেম্বাররা তিনশ থেকে পাঁচশ করে টাকা নিয়ে তাদের কার্ড দিয়েছে।
অনেক কার্ডের নাম ফ্লুয়েট (সাদা কালি) দিয়ে মুছে ফেলে অন্য নামে চাল উত্তোলনের কথা স্বীকার করে। এক নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান বলেন, ‘কার্ডে ও তালিকায় যাদের নাম এসেছে, পরবর্তীতে দেখা গেছে এদের অনেকেই স্বচ্ছল এবং তাদের তুলনায় অনেক হত-দরিদ্র রয়ে গেছে এজন্য আমরাপ্রথম কিমিÍর পর কার্ডের নাম পরিবর্তন ও সমন্বয় করে অন্যদের মাঝে বিক্রি করার জন্য বলেছি।’
কার্ড করতে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান বলেন, ‘এটা সত্যি যে, কিছু কিছু বিষয়ে অনিয়ম হচ্ছে। তবে আমরাও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বালিথুবা ইউনিনের কার্ডধারী বাবুল, রাবেয়া, ফাতেমা জানান, তাদেরকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হলেও বাড়িতে গিয়ে মেপে দুই কেজি করে কম পেয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে পরিবেশক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমরা আগে জানলে ডিলারশিপ নিতাম না। চাল নেয়া ও বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে বিক্রির কমিশন হিসাব করলে আমাদের প্রতিবারেই লস আসে। প্রতি টনে লোড খরচ ১৫০ টাকা, আনলোডের সময় প্রতি বস্তায় ১৩/১৪ টাকা, এ খরচগুলো হিসাবের বাইরে থাকে। প্রতি বস্তায় চাল কম থাকে অন্তত ছয়শ গ্রাম। আপনি বলেন এগুলো আমরা কিভাবে পোষাবো।’
দুই নং বালিথুবা (দ.) ইউনিয়নের কার্ড বিতরণে এমন একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবদীন বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমার কাছে দুই একটি অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাও নিচ্ছি। কিছু ঘটনা সত্য আবার কিছু ঘটনা মিথ্যা।
শিরোনাম:
সোমবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।