প্রতিনিধি=
চাঁদপুর জনতা ব্যাংক এরিয়া অফিসে কর্মরত সিনিয়র কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে আবারো নানা অনিয়ম ও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে বেশ ক�বার দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নেয়ায় তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি থেমে নেই। এ ব্যাপারে তার সহকর্মীরা ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইছে না। ভুক্তভোগী যে কেউ তার এই অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে তিনি নানাভাবে ভয়ভীতি ও হয়রানি করেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান।
চাঁদপুর জনতা ব্যাংকের এরিয়া অফিসের সুভাষ চন্দ্র সাহা এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ পদে (এইও) রয়েছেন যার মাধ্যমে চাঁদপুর জেলার সমস্ত শাখার যাবতীয় আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়ে থাকে। আর এসব আসবাবপত্র তিনি তার নিকট আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করে তাদের সাথে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। বিভিন্ন খাতে বছরে প্রচুর ব্যানার করে থাকে জনতা ব্যাংক। সুভাষ চন্দ্র সাহা ওই ব্যানারগুলো আর্টের প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে ইকরা মডেল একাডেমীর শিক্ষক শম্ভু চক্রবর্তীকে দেন। যার তুলি দ্বারা একটি অক্ষর লেখার ক্ষমতা নেই। তিনি প্রায়ই অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ করে এনে দিতেন এবং লভ্যাংশের অংশ নিজে নিতেন দিতেন সুভাষ চন্দ্র সাহাকেও।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মতলব উত্তর ছেংগারচর বাজার শাখার ৩/১৮ ফুটের ডিজিটাল সাইন বোর্ডের জন্য কুমিল্লা হেড অফিস থেকে নির্দেশ দেয়া হয় টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আর্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেয়ার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গোপন আঁতাত করে দুই প্রতিষ্ঠানের দুই মাদকাসক্ত ও জুয়াড়ি দোকান কর্মচারীকে কাজ দেন।
চাঁদপুর শহরের পাঁচটি ডিজিটাল সাইন ও প্রায় ১৫টি স্বনামধন্য আর্টের প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও কেউ সেই টেন্ডারের খবর জানেন না। বিজ্ঞাপন দেয়া হয়নি কোনো পত্রিকাতেও। এমনই অভিযোগ জানালেন চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি নামী দামী আর্টের প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে আর্ট হাউজ, সুচিত্রা আর্ট, রংলিপি, নূর সাইন, চৌধুরী আর্ট সহ ডিজিটাল সাইন প্রতিষ্ঠানগুলো। সুচিত্রা আর্টের মালিক নিমাই চন্দ্র সরকার জানান, আমার কর্মচারী স্বপন ঠাকুরকে লোভ দেখিয়ে নিয়ে গেছে চিত্রালয়ের কর্মচারী কালু। আর্ট হাউজের মালিক মাসুম জানান, আমার দোকান থেকে প্যাড নিয়ে জনতা ব্যাংকে জমা দিয়েছে স্বপন ঠাকুর। আমি ব্যাংকে গিয়ে প্রতিবাদ জানাবো। উল্লেখ্য, গত ২১ জুন ২০১২ মতলব উত্তরের সুজাতপুর বাজারস্থ নূতন শাখার জন্য ডিজিটাল সাইন বোর্ডের সর্বনিম্ন দরদাতা ছিলো চাঁদপুরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রংলিপি। তার দর ছিলো প্রতি স্কয়ার ফুট ২শ� ৮০টাকা। কিন্তু এইও সুভাষ চন্দ্র সাহা নিয়মনীতি উপেক্ষা করে যোগসাজশ করে প্রতি স্কয়ার ফুট ৪শ� টাকা দরে কাজ দেন চিত্রালয়ের দোকান কর্মচারী কালুকে।
ওই কর্মচারী জনতা ব্যাংকের কাজ পেয়ে তৎক্ষণাৎ চাকরি ছেড়ে দেন। এমনই অভিযোগ করেছিলেন চিত্রালয়ের মালিক শ্রীধাম চন্দ্র শীল, যিনি ক�মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর পর পরই কৌশলে দোকান দখল করে বসে চিত্রালয়ের সাবেক কর্মচারী কালু ও স্বপন ঠাকুর। সুভাষ চন্দ্র সাহা টেন্ডারের বিষয়ে কোনো আর্টের প্রতিষ্ঠান সমূহকে না জানিয়ে ইকরা মডেল একাডেমীর শিক্ষক শম্ভু চক্রবর্তী ও মাদকাসক্ত কালু-স্বপনকে মুঠোফোনে জানিয়ে দায় সারেন বলে জানান শিক্ষক শম্ভু চক্রবর্তী।
যেখানে ২শ� ৮০ টাকা প্রতি স্কয়ার ফুট দরে ৫৪ স্কয়ার ফুৃট বিশিষ্ট সাইন বোর্ড ১৫১২০ টাকায় তৈরি করা যায়, সেখানে ৪শ� টাকা প্রতি স্কয়ার ফুট দরে ৫৪ স্কয়ার ফুট বিশিষ্ট সাইন বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাপড়ের ব্যানার ২শ� ২০ টাকা দরে করা যায় অথচ ৩শ� ৬০ টাকা দরে ব্যানারের ভাউচার তৈরি করা হয়। এসব ব্যাপারে বক্তব্য বার যোগাযোগ করা হলে সুভাষ চন্দ্র সাহাকে পাওয়া যায়নি।