চাঁদপুর: ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’এ ধরনের শ্লোগান চাঁদপুর জেলা কারাগারের ফটকে লেখা থাকলেও কারাগার অভ্যন্তরেই ভিন্ন চিত্র যা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেন না। কারাগারের ভিতরে জেলার ও সুপারের পৃষ্টপোষকতায় চলছে রমরমা মাদকের ব্যবসা। কারাগার কর্তৃপক্ষের প্রচ্ছন্ন সহায়তা ও অর্থের ভাগ-বাটোয়ারায় এ ব্যবসা এখন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। কারাগারের অভ্যন্তরের কয়েদিরা সহজলভ্য মাদক পেয়ে নির্বিঘ্নে তা সেবন করে চলছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুর জেলা কারাগারে জেলার ও সুপার সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের দিয়ে পুরোদমে কারাগের ভিতরে কারারক্ষীদের মাঝে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা মাদকের ব্যবসা। যার ফলে কারাগারের ভেতরেই বসে কয়েদিরা পেয়ে যাচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইনোকটিন, ফেনডিন ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য। এখানে কয়েদিদের ‘নিরাপদ রাখা’ তো দূরের কথা বরং কয়েদিরা আরো দিন দিন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
কারাগারের অভ্যন্তরের ক’জন কয়েদির সাথে আলাপকালে জানা গেছে, জেলা কারাগারের জেলরক্ষী ও গোয়েন্দা রক্ষীরা নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য কারাগারে এনে তা কারাবন্দীদের কাছে বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছে। বিক্রিত টাকা ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছে প্রতিদিন। তারা আরো জানায়, জেলা গোয়েন্দা রক্ষী কুমিল্লার রাসেল প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ক্রয় করে তা কারাবন্দীদের কাছে অধিকমূল্যে বিক্রয় করে। আর এইসব কিছুই করছে উদ্ধর্তন প্রশাসনের কর্তাদের কাঁচা টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে। এই বিষয় গুলো কে শুনবে ? আর কে দেখবে ? যারা দেখার দায়িত্বে এবং রক্ষক হিসেবে পরিচিত তারইতো আজ চালিয়ে যাচ্ছে এসব ব্যবসা। তবে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কারাগার ভিজিট করার নামে তেলেসমাতি খেলা করছে উদ্ধর্তন প্রশাসন। কারণ এসব ঘটনা কোন বন্দী কারা ভিজিটরদের কাছে অভিযোগ করলে তার পরিণতি হয়ে থাকে ভয়াবহ। তাই কথায় আছে ঢেকি র্স্বগে গেলেও ধান বুনে আর পুলিশ কবরে গেলেও ঘূষ খাবে এমন কথাটি ব্যসত্মবে সত্য প্রমানিত হয় । কারণ এ কারাগারে দীর্ঘ দিন থেকে জেলারও সুপার তাদের ক্ষমতার দাপটে মাদক ব্যবসা চালালে ও প্রতিকারের জন্য এগিয়ে আসছেনা উর্দ্ধতন কোন প্রশাসন। এসব কিছু নিয়ে লেখতে গেলে নিজেকে ছোট মনে হয়। তবে না লিখলেও নিজেকে একজন অপরাধী মনে হয়। তাই নিজের বিবকের কাছে দায় বদ্ধ হয়ে আজকের এই প্রতিবেদন। সাধারন দশনার্থী ও মুক্তি পাওয়া কয়েক জন হাজতির অনুরোধে চাঁদপুর জেলা কারাগারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, কারাগারের অভ্যন্তরে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী যারা বিভিন্ন মাদক মামলায় আটক হয় তাদেরকে একটি ওয়ার্ডে রাখা হয়। আর এদেও কাছে কারাবন্দী হামিদও এসব মাদক ওয়ার্ডে অবাধে বিক্রয় কাজে সহায়তা করে। কারাগার অভ্যনন্তরে অবাধে মাদকদ্রব্য পাওয়া যাওয়ায় কারাবন্দী ও সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিরা ক্রমান্বয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে।
একটি সুত্র দাবী করছে একারাগারে বর্তমান জেলার সাহেব যোগদান করারপর থেকেই এমন কর্মকান্ড চলছে। তাছাড়াও কারাগারে চলছে বন্দীদের মাঝে নিম্মমানের খাবার পরিবেশন ও হাজত খানার হাজতীদের দেখার নামে ঘুষ গ্রহণসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে কারাগারের বন্দীরা। অথচ দেখার কেউ নেই। কারাভ্যন্তরের ভিতরে ষ্টল রয়েছে বন্দীদের কাছে নির্ধারিত মুল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য। কিন্তু সেই ষ্টলে বাজার দরের বিপরীতে ৫গুন বেশী দরে প্রতিদিন ৩০/৩৫হাজার টাকার খাদ্য ও প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রির মাধ্যমে প্রতিমাসের লভ্যাংশের টাকা জেলার ও সুপার বেহিসাবী ভাবেই পকেটস্ত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ডিজিটাল সরকারের কায্যক্রম ধুলিস্যৎ করতে বর্তমান জেলার ও সুপার কারাগারের নিয়ম শৃঙ্খলাকে তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামাফিক কার্য্যক্রম করে যাচ্ছে। আর এসব ঘটনা কোন বন্দী কারা ভিজিটরদের কাছে অভিযোগ করলে তার পরিণতি হয়ে থাকে ভয়াবহ। জেল সুপারের মদদে জেলার কারাবন্দীদের রুটিন মাফিক খাদ্য খাবার না দিয়ে রুই মাছের পরিবর্তে সিলভার কাপ, খাসির মাংসের পরিবর্তে বাজার থেকে অল্প মুল্যের অসুস্থ প্রকৃতির ছাগলের মাংস সংগ্রহ করে আনছেন। মশুর ডালের স্থানে বুটের ডাল, এবং সে সবজি খাওয়ানো হচ্ছে সেটি পাতলা ডালের চেয়েও পাতলা। কিন্তু তারপরও বন্দীদের বলার কিছু নেই। কারণ মারপিটের ভয়ে কোন বন্দী ভিজিটরদের সামনে সঠিক কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। মাত্রাবিরোধী নিষ্টুর আচরণসহ ক্ষুদ্ধ হয়ে বন্দীরা অনাহারে অর্ধহারে মানবেতর ভাবে দিনতিপাত করছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের এহেন কর্মকান্ডে শতশত বন্দী যে কোন সময় আন্ডার ধর্মঘটসহ ফুঁসে উঠতে পারে বলে সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত কয়েকজন হাজতী জানান। কোন হাজতী-কয়েদীর সাথে তার আত্নীয় স্বজনরা সাক্ষাতের জন্য আসলে তার উপর কতৃপক্ষ চড়াও হয়ে অশীল ব্যবহার করে থাকেন। বন্দীর আত্বীয় স্বজনরা সাক্ষাতের পর কারা অভ্যনত্মরে বন্দীদের কাছ পাঠানো টাকার ১০/২০ টাকা হারে বকসিস আদায় করে সিআইডি নামধারী ব্যাক্তিরা। এবং ভিতরে তাদের বন্দীদের উপর চালানো হয় আদিম কায়দায় নির্য়াতন। পান থেকে চুন খসলে এমন তুচ্ছ ঘটনায় বন্দীদের কে ওয়ার্ড থেকে ডেকে এনে গাছের ডালের সাথে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিষ্টেট কিংবা মানবাধিকার সংস্থা কিংবা ডিসি সাহেব জেল ভিজিটে গেলে আগে ভাগেই নির্যাতনের সব কিছু না বলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া এ জেলার চাঁদপুর জেলা কারাগারে যোগদানের পর বন্দীদের জীবন যাত্রার মান করুন আকার ধারন করেছে। এদিকে বন্দীদের জন্য খাদ্য সল্পতা হওয়ায় বাহিরে থেকে সাক্ষাৎকারীরা পিসি’র মাধ্যমে টাকা পাঠান হাজতী/কয়েদীদের নামে ভাল খাদ্য খাবার কিনে খাবার জন্য। বন্দীদের দু’বেলা পেট ভরে খেতে না দিয়ে সেখানে একটি ক্যান্টিন করেছেন কারা-কর্তৃপক্ষ আর্থিক লাভবান হবার জন্য। কারাগারের অভ্যানত্মরে রয়েছে ক্যান্টিনে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে চা, বিস্কুট বাজার মুল্যের চেয়ে ৫’গুন দরে বিক্রি করেন কারারক্ষীরা। যা উপায়নত্ম না পেয়ে বন্দীরা পেটের জ্বালায় কিনতে বাধ্য হয়ে থাকে। আর প্রতিদিন ২০/৩০ হাজার টাকা কেনাবেচার মাধ্যমে প্রতিমাসের ওই লভাংশের টাকা আত্নসাত করেন জেলার ও জেল সুপার। তবে এসব দ্রব্যাদি কেনার জন্য কারাগারের বাইরে থেকে পিসির মাধ্যমে টাকা দিতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানে বাজারের নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছে । কিন্তু এ ব্যাপারে জেলার, সুপারের কোন মাথা ব্যথা নেই। বরং ক্যান্টিনে অতিরিক্ত মুল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রির তদারকির নামে জেলার অথ্যবাণিজ্য করে থাকেন।
সদ্য মুক্তি পাওয়া কয়েকজন বন্দীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, জেলার নানা অনিয়মের কারনে কারাবন্দীদের নিম্নমানের খাদ্য-সামগ্রী দিয়ে অর্থ আত্বসাত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতেই একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়েছে। যারা নিম্নমানের খাদ্য বিতরণের মাধ্যমে অর্থ বাঁচিয়ে মাসের শেষে ভাগবাটোয়ারা করে থাকে। শুধু এমন কর্মকান্ড করেই শেষ না, প্রত্যেকটি ওয়র্ডে রয়েছে জেলারের বিশ্বস্ত সহচর, কেউ অসুস্থ হলে কারা হাসপাতালে ভর্তি ক্ষেত্রে দু’ থেকে আড়াই হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। আর জরুরী রোগীকে ঐ হাসপাতালে থেকে ঔষুধ পেতে হলেও সেখানকার ডাক্তার ও জেলার কে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। সব কিছু মিলিয়ে চাঁদপুর জেলা কারাগার এখন জেলার ও সুপার ও ডাক্তারের অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আর এ সমস্ত কর্মকান্ডের ফলে কারাবন্দীরা যে কোন মূহূর্তে আন্ডার অনশন বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে পারে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি জরুরী ভিক্তিক সুনাম ধণ্য জেলা প্রশাসকও ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় খতিয়ে না দেখলে অচিরেই কারাগারারের বন্দীদের হাতে জেলার ও সুপার গনধোলাইয়ের শিকার হতে পারে বলে একটি সুত্র জানিয়েছেন।
শিরোনাম:
সোমবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।