স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুরে রেলওয়ের লীজকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পাওনা না পেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্তৃপক্ষ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা বন্ধ করে সীল গালা করে দিয়েছে। সোমবার সকাল থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় এষ্টেট অফিসার (ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা) ইসরাত রেজার নেতৃত্বে রেলওয়ের একটি টিম এ অভিযান করেন। এ সময় রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী আইন শৃংখলার দায়িত্ব পালন করেন। এ নিয়ে লীজকৃত বৈধ ব্যবসায়ীদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা শহরের ৫ নং ঘাটে মন্টু দেওয়ানের দোকানে আদালতের নির্দ্দেশ উপেক্ষা করে তালা বন্ধ করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাপ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়া তিনি চাঁদপুরের অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে নির্মিত হচ্ছে এমন স্থাপনা সরেজমিনে দেখার জন্য বলা হলেও তা’ নিয়ে গুরুত্ব দেননি। যার ফলে জনমনে সমলোচনার ঝড় উঠে।
রেলওয়ে চট্টগ্রাম ও লাকসামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদ ও কানুনগো আবুল খায়ের জানান,বাংলাদেশ রেলওয়ের এষ্টেট বিভাগ চাঁদপুর রেলওয়ে এলাকায় লীজকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিকট কয়েক কোটি টাকা বকেয়া লীজ বাবদ পাওনা রয়েছে। গত ৭দিন যাবত রেলওয়ের লাকসাম কাচারীর পক্ষ থেকে বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য মাইকিং করা হয়। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় এষ্টেট অফিসার বকেয়া পাওনা বুঝে নিবেন বলেও বলা হয় । তা’না হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার জন্য তালা বন্ধ করে সীল গালা করে দিবেন বলেও মাইকিং করে জানান। ৭ দিন সময় দেওয়ার পরও বকেয়া পরিশোধ না করায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইসরাত রেজা বকেয়া আদায়ের জন্য মাঠে নামতে বাধ্য হয়। গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এষ্টেট অফিসার ইসরাত রেজার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ১টি টিম,স্থানীয় কর্মকর্তা ও চাঁদপুর-লাকসাম রেলওয়ের জি.আর.পি পুলিশ সদস্য ও নিরাপত্তা বাহিনীকে সাথে নিয়ে অভিযান করেন। শহরের বড় ষ্টেশন,মাছঘাট,৩নং কয়লা ঘাট,৫নং ঘাট,বকুলতলা,হকার্স মার্কেটের শত শত লীজকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান কালে তারা কয়েক লক্ষ টাকার ব্যাংক ড্রাফের মাধ্যমে বকেয়া আদায় করেন বলে লাকসামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আবু সাইদ জানান। অভিযানকালে বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা বন্ধ করে সীল গালা করে দিয়ে চাবি নিয়ে যান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিকে বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লীজকৃত বকেয়া পাওনার জন্য তালা বন্ধ করা হলেও অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনরুপ ব্যবস্থা গ্রহন ও তালাবন্ধ না করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষোভের ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ দিকে অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উল্লাসের সৃষ্টি হয়। বৈধদের বকেয়ার জন্য তালা বন্ধ রয়েছে অথচ অবৈধ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে যাচ্ছে আনন্দের সাথে। যা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপরদিকে শহরের বকুল তলায় ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী (সাবেক বিএনপি অফিসের কেয়ার টেকার)সাব্বির ছৈয়ালের কাছে রেলওয়ে প্রায় ১ লক্ষ টাকা বকেয়া পাওনা থাকলেও ঐ ব্যবসায়ী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সার্টার খুলে ফেলে অভিযানের খবর পেয়ে। যার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে চলে যায়। এদিকে চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা জানান,শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। শহরের বড় ষ্টেশন রোডে রেলওয়ে হাসপাতালের সামনের পুকুরে অবৈধভাবে শরিফ সরকারের নেতৃত্বে এক দল ভূমি দস্যু আরসিসি পিলার স্থাপন করে সেখানে অবৈধভাবে দোকান নির্মান করছে। এ ব্যাপারে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইসরাত রেজাকে অভিযোগ করার পরও তিনি অদৃশ্য কারনে সে স্থানে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে সরেজমিনে না গিয়ে রাতে চট্ট গ্রাম চলে যান। তিনি চলে যাওয়ার পর সেখানে অবৈধভাবে তড়িগড়ি করে নির্মান কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে । অভিযানে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ,হেদায়েত উল্যাহ হেদু,আবু সাইদ,আবুল খায়ের,ফেরদৌস আলম। আইন শৃংখলার দায়িত্বে ছিলেন চাঁদপুর রেলওয়ের উপ-পরিদর্শক আব্দুস ছাত্তার,রতন চন্দ্র,রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ আমিনুল হক,খোরশেদ আলম সহ রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা । উল্লেখ্য, অভিযানকালে রেলওয়ের তালিকাভূক্ত বকেয়া পাওনা ব্যবসায়ীদের অনেকের নিকট অভিযানের টিম না গিয়ে তাদের ইচ্ছামত অভিযান পরিচালনা করায় ক্ষতিগ্রস্থ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।