চাঁদপুরে নাড়ির টানে ফিরছে ঘরমুখো মানুষ ঈদুল আযহা উদ্যাপন করতে নাড়ির টানে গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে নৌপথে ফেরা যাত্রীদের ভিড় শুরু হয়েছিলো শুক্রবার আরো কয়েকগুন বেশি দেখা গেছে। নিয়মিত লঞ্চের বাইরেও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বিআইডব্লিউটিএ।
লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ নৌ-বন্দর চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে হাজারো মানুষের ভিড়। ঈদ আসলেই আনন্দযাত্রা ভোগান্তি দিয়েই শুরু হয় মানুষের। যারা বাসে চড়েন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের আটকে থাকতে হয় মহাসড়কে। তাই লঞ্চে আসতে অনেক বেগ পোহাতে হলেও নদীপথ আরামদায়ক হওয়ায় লঞ্চে ঝুঁকি নিয়েই আসছে মানুষ। তবে সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, যাত্রীদের কয়েকজন ছাড়া কারো মুখে মাস্ক দেখা যায় নি।
সরেজমিনে জানা গেছে,প্রশাসন যাত্রীদের হয়রানি না করার জন্য বার-বার মাইকিং করা সত্তেও লঞ্চ থেকে যাত্রীরা নামার সঙ্গে সঙ্গেই সিএনজি, অটো রিকশার চালকরা যাত্রীদের লাগেজ ধরে টানাটানি করছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। যাত্রীদের অভিযোগ তাদের জিন্মি করে ভাড়া নিচ্ছে ১০ গুণ বেশি। এ ব্যপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
এদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাঁদপুর প্রশাসন বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। গেটের সামনেই রয়েছে নৌপুলিশের মোবাইল টিম। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে লঞ্চঘাটে পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে কোষ্ট গার্ড,ফায়ার সার্ভিস,আনসার,স্কাউট সদস্যরা। পথের এসব শত বিড়ম্বনা আর ঝক্কি ঝামেলা মেনে নিয়েই স্বজনদের সান্নিধ্যে ছুটছেন ঘরমুখো মানুষ।
কয়েকজন যাত্রীর সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, আমরা ঈদের ছুটি নিয়ে ঈদ উ্দযাপনের লক্ষ্যে গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজনের সাথে পালনের লক্ষ্যে এসেছি।
ঢাকা থেকে আসা লঞ্চযাত্রী মো. শামীম বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি আসছি। কিন্তু লঞ্চঘাটে অটোরিকশা-সিএনজি চালকরা ভাড়া দ্বিগুণ চাচ্ছে। ১০০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা চায়।
ঢাকা থেকে আসা আরেকজন লঞ্চযাত্রী আ: মালেক আমাদের কাছ অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয় নি। কিন্তু লঞ্চে অতিরি যাত্রী নেয়া হয়েছে।
নারায়নগঞ্জ আসা লঞ্চযাত্রী রাশিদা জানান, অনেক জায়গায় ঘাট পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয়। টারমিনালে লঞ্চ থেকে বের হয়ার সময় কষ্ট হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য লঞ্চ দিয়ে বের হতে হয়েছে।
লঞ্চের স্টাফদের সাথে কথা বললে তারা জানান,আমরা আমাদের জাহাজগুলোর ওয়াটার লেভেল ক্রস করার আগেই যে যাত্রী পেয়েছি তা নিয়ে সরকারের নির্দেশনা মেনে ছেড়ে এসেছি। আমাদের জাহাজগুলোতে যে পরিমাণ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা আমরা সে পরিমাণ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসেছি।
চাঁদপুর নদী বন্দরের পরিদর্শক মো:শাহ আলম ও কোষ্ট গার্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তা পলাশ বলেন, যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ নেই। আমরা বেশ কিছু রির্জাভ লঞ্চ দিয়ে যাত্রীদের পারাপারের ব্যবস্থা করেছি।অতিরিক্ত ভাড়া নেয় হচ্ছে না।সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
চাঁদপুর নৌপুলিশের ওসি মো.কামরুজ্জামান বলেন,পবিত্র ঈদুল আযহা যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, তার জন্য নৌপুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লঞ্চঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো লঞ্চঘাট জুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কোনো যাত্রী অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল হোসেন চৌধুরী বলেন, যাত্রীসেবায় আমরা ঘাটে মনিটরিং করছি। সুস্পষ্টভাবে কোনো অভিযোগ পেলেই জরিমানা করা হচ্ছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন সারোয়ার মুঠোফোনে জানান,জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, রোভার স্কাউটস, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস এবং পৌরসভার সমন্বয়ে লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় এরই মধ্যে সবধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নিয়মিত লঞ্চের বাইরেও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বিশেষ উদ্যোগ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় কোন যাত্রীকে জিম্মি করে কোন রুটে যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে আমারা সেই বিষয়ে সজাগ আছি।