শাহরিয়ার খাঁন কৌশিক ॥
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে ঈগল-১ লঞ্চ থেকে নৌ পুলিশের উপস্থিতিতে হাজীগঞ্জের এক স্বর্ন ব্যবসায়ীর ৪৭ ভরি স্বর্ন ছিনতাই করার ঘটনায় পলাশের কাছ থেকে নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন একটি স্বর্নের ভার উদ্ধার করলেও সেই স্বর্নের হদিস নেই। ঘটনার পর দিন রবিবার কোড়ালিয়া এলাকায় সকাল ৯ টায় রাজনৈতিক দলের এক নেতার বাসায় পলাশ তার মায়ের উপস্থিতিতে স্বর্নের ভারটি নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেনের হাতে দেওয়া হলেও উদ্ধারকৃত স্বর্নের ঘটনা মডেল থানা পুলিশকে আদো জানায়নি।
ঘটানার ৪দিন পর ডিবি পুলিশ ও মডেল থানা পুলিশ ছিনতাইকৃত স্বর্নের প্রায় ১৪ ভরি ওজনের ভার বৃহস্পতিবার রাতে পলাশের বেড রুম থেকে উদ্ধার করলেও রবিবার সকালে মোশারফের উদ্ধার করা স্বর্নের খবর পুলিশ জানতে না পাড়ায় জনমনে মিশ্র প্রতিকৃয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরদিন পলাশ একটি স্বর্নের ভার রাজনৈতিক দলের এক নেতার উপস্থিততে নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন হতে দিয়েছেন এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পলাশের মা আসমা বেগম। তিনি বলেন, শনিবার রাতে পুলিশ বাসায় এসে তল্লাশী করে পলাশকে খোঁজে। পরে তাকে না পেয়ে স্বর্ন ছিনতাইয়ের ঘটনাটি জানায়। এই খবর পেয়ে রাতেই পলাশকে ফোন করে স্বর্নটি নিয়ে এসে পুলিশ মোশারফের কাছে দেওয়ার জন্য বলা হয়। পলাশ তার বন্ধু তাজমিরকে সাথে নিয়ে রবিবার সকালে এসে স্বর্নের ভারটি হেলালের কোড়ালিয়ার বাসায় এসে সকলের সামনে পুলিশ মোশারফের হাতে ভারটি তুলে দেয়। এই সময় মোশারফের সাথে একজন পুলিশ ছিলো। সেই স্বর্ন পুলিশকে বুঝিয়ে না দিয়ে মোশারফ নিজেই আত্বসাৎ করার পায়তারা করছে।
এই ঘটনায় নৌ-পুলিশের ডিআইজি মনিরুজ্জামান জানায়, স্বর্ন ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে যদি পুলিশ জরিত থাকে ও তদন্ত রিপোর্টে মোশারফের নামে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
নৌ-পুলিশের এসপি শাহরিয়ার জানায়, ঘটনাটি যেহেতু মডেল থানা তদন্ত করছে, সেহেতু সবকিছু তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে নৌ পুলিশ জড়িত থাকলে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
এই ঘটনায় মডেল থানার ওসি মামুনুর রশীদ জানায়, নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন স্বর্ন উদ্ধারে ঘটনা জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে বলতে পারবো। ঘটনাটি সত্য হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত মোশারফের কাছে জানতে চাইলে সে বলেন, কোন স্বর্ন পলাশ আমাকে দেয়নি। এটি সম্পূর্ন মিথ্যা। পলাশের মার রেকর্ডকৃত বক্তব্য শুনালে সে নিমেশেই স্তব্দ হয়ে যায়। এসময় তিনি বলেন, আপনাদের কলম আছে, লিখতে পারেন। কি আর হবে, যতখুশি লিখেন।
এদিকে হাজীগঞ্জের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সেন শিল্পালয়ের মালিক রতন সেনের কাছ থেকে ৪৭ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত নৌ-পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেনের নাম এজাহারভুক্তকরন ও স্বর্ণ উদ্ধার সহ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে হাজীগঞ্জ বাজার স্বর্ণ ব্যবসায়িদের উদ্দোগ্যে মৌন মিছিল, মানববন্ধন করে। ব্যাবসায়িরা দোকান বন্ধ রেখে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের হাজীগঞ্জ এলাকায় রাস্তার উপর প্রায় ১ঘন্টা প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে স্বর্ণকার পট্টির সম্মূখ হতে মৌন মিছিলটি পশ্চিম বাজার পদক্ষিন শেষে স্বর্ণকার পট্টির সামনে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় ১ঘন্টার মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানায়। এসময় বাজারের সকল স্বর্ণ ব্যবসায়িদের দোকান প্রায় ১ঘন্টা বন্ধ থাকে।
উল্লেখ্য, গত ৫জানুয়ারি শনিবার হাজীগঞ্জ বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ি, সেন শিল্পালয়ের স্বত্তাধীকারি রতন সেন ৪৭ভরি স্বর্ণ নিয়ে ঢাকার উদ্দোশ্যে যাওয়ার জন্য চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে যান। রতন সেন স্বর্ন নিয়ে শনিবার সকাল ৯ টায় ঢাকাগামী ঈগল-১ লঞ্চে উঠার পর ৩য় তলায় সৌখিনে নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ ও সোর্স পরিচয়ে ৩ জন ভিতরে প্রবেশ করেই ব্যবসায়ী রতন সেনকে পাচারকারী বলে ব্যপক মারধর করে। নৌ পুলিশের ইনচার্য মোশারফের সামনেই তার সোর্সরা স্বর্ন ছিনিয়ে নিয়ে মোশারফের ইশারায় লঞ্চ থেকে নেমে পরে। এব্যাপারে রতন সেনের পক্ষে তার ভাই সুশেন সেন বাদি হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি দায়ের করেন। সেই ঘটনায় ডিবি পুলিশ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টায় পলাশের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৪ ভরি ওজনের স্বর্নের ভার উদ্ধার করে। বাকি স্বর্ন নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোশারশের কাছে এখনো রয়েছে।