শওকতআলী.
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথটি লাভজনক হওয়া সওে¦ও মহল বিশেষের অসহযোগিতা ও উদাসীনতায় লোকবল সংকটের দোহাই দিয়ে এ রেল পথটিকে অগুরুত্বপূর্ণ করে রাখা হয়েছে । এতে করে এ রুটে চলাচলকারী হাজার-হাজার যাত্রীদের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পৌহাচেছ। এক সময় যাত্রীরা ভারতের আসাম ত্রিপুরা থেকে রেলপথে চাঁদপুর এসে স্টিমারযোগে গোয়ালন্দ হয়ে কোলকাতা যাতায়াত করত। লোকাল ট্রেনযোগে ইলিশ মাছ বরফ দিয়ে বড় বড় বক্স কিংবা ঝুড়িতে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। এছাড়া লঞ্চযোগে বিভিন্ন মালামালও চাঁদপুর ঘাটে এসে আনলোড করার পর মালবাহী বগিতে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। শুধু মালামাল বুকিং দিয়ে এ রেল পথে সরকার বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আয় করত। সরকারের বিরাট রাজস্ব আয়ের সেই রেলপথটিকে গুরুত্বহীন করতে সব লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে এ পথের ১১টি স্টেশনের মধ্যে চারটি স্টেশনের কার্যক্রম দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ বন্ধ হয়ে আছে। স্টেশনগুলো চালুরও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
চাঁদপুর-লাকসাম রেল পথে ১১টি রেল স্টেশনের মধ্যে যে ৪টিতে স্টেশন মাস্টার ও প্রয়োজনীয় লোকবলের কারণে বন্ধ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ওয়ারুক স্টেশন, বলাখাল স্টেশন, শাহতলী স্টেশন ও চিতোষী স্টেশন। বন্ধ হওয়া এ ৪টি স্টেশনে পরিচালনা করা হতো রেলওয়ের অপারেশন কাজ। বর্তমানে স্টেশনগুলোতে ট্রেনের ইঞ্জিন ঘুরানো, ক্রসিংয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ট্রেন চলাচলের সিডিউলও বিঘিœত হচ্ছে। বিশেষ করে বি-ক্লাস স্টেশনের মধ্যে চাঁদপুর, চিতোষী, মেহের, হাজীগঞ্জ ও শাহতলী স্টেশনে অপারেশন কাজ পরিচালিত হতো। এই স্টেশনগুলোতে কমপক্ষে তিনজন করে স্টেশন মাস্টার থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে চিতোশী স্টেশনে রয়েছে একজন মাস্টার, মেহের স্টেশনে রয়েছে একজন, হাজীগঞ্জ স্টেশনে রয়েছে একজন, চাঁদপুর স্টেশনে রয়েছে তিনজন। অন্যদিকে শাহতলী, বলাখাল ও উয়ারুক স্টেশনে মাস্টারসহ কোন লোকবল নেই বিধায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে এসব স্টেশনের কার্যক্রম। এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত চাঁদপুর শহরতলীর মৈশাদী রেল স্টেশনটিকে দীর্ঘ ত্রিশ বছরেও কোনো সংস্কার করা হয়নি । ‘ডি’ শ্রেণিভুক্ত এই স্টেশনটির আধুনিকায়নতো দূরের কথা, কোনো লোকবল প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত এখানে দেয়া হয়নি। যেসব স্টেশন চালু আছে তাতে দিনের বেলা স্টেশন মাস্টাররা দায়িত্ব পালন করলেও রাতে তারা দায়িত্ব পালন করছে না। যার জন্য স্টেশনগুলো রাতে থাকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে সংগঠিত হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড। পতিতাবৃত্তি, মাদক বেচা কেনা ও নেশাখোরদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বন্ধ থাকা এসব রেল স্টেশনগুলো। চুরি হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের অধিকাংশ জিনিসপত্র। এর ফলে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে শুধু মাত্র চাঁদপুর-চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে দু’টি স্পেশাল ট্রেন আনঃনগর মেঘনা ও সাগরিকা চলাচল করছে। আর চাঁদপুর-কুমিল্ল¬ায় চলাচল করছে ডেম্যু ট্রেন। অথচ এক সময় এই রেল পথে প্রতিদিন ১৬টি ট্রেন যাতায়াত করতো। এর মধ্যে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ৫৯আপ ও ৬০ডাউন, চাঁদপুর-ভৈরব ১শ’ ৬১আপ ও ১শ’ ৬২ডাউন, চাঁদপুর-লাকসাম ১শ’ ৬৩আপ ও ১শ’ ৬৪ডাউন, সিলেট- চাঁদপুর ৪৯আপ ও ৫০ ডাউন চলাচল করতো। এর মধ্যে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, চাঁদপুর-সিলেটের লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে অনেক পূর্বেই। দেড় বছর পূর্বে চাঁদপুর-ভৈরব লোকাল ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে যায়। লাকসাম-চাঁদপুরের লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ৫বছর পূর্বে। সর্বশেষ চাঁদপুর-লাকসামের একটি লোকাল ট্রেন কোন রকমভাবে চালিয়ে রেখেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য, এই ট্রেনটিও বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে চাঁদপুর থেকে রেলপথে সকল লোকাল ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। যার কারণে ইলিশ মাছও ট্রেনযোগে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো বন্ধ রয়েছে। সব লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেয়ায় এবং মালবাহী বগি কিংবা মালবাহী ট্রেন না থাকায় শুধুমাত্র চাঁদপুর রেল স্টেশন থেকেই বাংলাদেশ রেলওয়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন চাঁদপুর রেল স্টেশনের হেড বুকিং কর্মকর্তা আঃ সালাম সরকার। তিনি জানান চাঁদপুর পার্সেল বুকিং অফিসটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এটিতে এখন তালা ঝুলছে। বর্তমানে একদিকে যেমন চাঁদপুর থেকে কিংবা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে কোন প্রকার পণ্য আনা-নেয়া করা যাচ্ছে না তেমনি চাঁদপুর জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার হাজার হাজার রেল পথের যাত্রীকে ট্রেনের অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডি আর এম) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আসলে বুকিং ক্লার্ক সমস্যা ও জনবল সংকটের জন্য বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করা যাচ্ছে না। তবে এসব সমস্যা সমাধান করে এ পথে ট্রেন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের। এদিকে জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ স্টেশনগুলো চালু ও চালু স্টেশনগুলোতে লোকবল প্রদানের পাশাপাশি পূর্বের ন্যায় লোকাল ও মালবাহী ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছে হাজার-হাজার ভুক্তভোগী যাত্রীগন ।
শিরোনাম:
শনিবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১৩ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।