শাহরিয়ার খাঁন কৌশিক ॥ চাঁদপুর শহরের প্রান কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু সড়কে মিজানুর রহমানের নামধারি পদ্মা অয়েল এজেন্সীর গোডাউনে জ্বালানী তেলের ট্যাংকার থেকে পেট্টোল অকটেন তেল নামানোর সময় এলপি গ্যাস সিলেন্ডার বিস্পরনে সূত্র পাত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। আগুনে পুড়েছে বঙ্গবন্ধু সড়কের সেলিনা ভবনের ৩লা তলার একাংশ। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ফায়ার সার্ভিসের দু’সদস্যসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৫জনকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে।
বুধবার (৩১ আগষ্ট) দিনগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় একটি জ্বালানী তেলের ট্যাংকার থেকে ওই তেলের গোডাউনে ড্রামে পাম্প মেশিন দিয়ে তেল অপসারণ করতে গিয়ে গ্যাস সিলেন্ডার বিস্পরনে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তের মধ্যে আগুন পুরো ট্যাংকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং ওই গোডাউনে বিক্রির জন্য থাকা গ্যাস সিলিন্ডারগুলো বিকট শব্দে উপরের দিকে উঠে। খবর নিয়ে জানাযায়,এ তিনতলা ভবনটি শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেলরানার। তিনতলার বাসার নিচতলায় তেলের গোডাউন ছিল। স্থানীয়রা জানায়, অগ্নিকান্ডের খবর শুনে চাঁদপুর উত্তর ও হাজিগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের ৫টি ইউনিট তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে এসে আগুন নির্বাপনের কাজ শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ সময় দালানের নিচতলায় থাকা তেলের দোকানে থাকা তেলের ড্রামগুলো বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা আরো ভয়াবহ আকার ধারন করে। বাসার সামনে থাকা তেলের লরী ও ভিতরে একটি পিক আপ ও মোটরসাইকেল সহ বাসার পর্যাপ্ত আসবাবপত্র পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। দীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘন্টা
চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মডেল থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনতা সহায়তা করেন। ওই বাসায় থাকা তিনটি পরিবারের লোকজন হুরাহুরি করে প্রথমে ছাঁদে উঠে যায়, পরে আবার ছাঁদ থেকে নামতে গিয়ে আগুনের লেলিহান শিখায় দোকানের মালিক ও ফায়ার সার্ভিসের দু’সদস্যসহ কমপক্ষে ১৫জন আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দোকানের মালিক মিজানুর রহমান (৪৫), ছেলে রায়হান (২৩), নূর মোহাম্মদ(২১), বাদশা মিয়া (৫০), বেলাল হোসেন ভূইয়া (২৮) ও খোকন (৩০)কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করা হয়। বাকীরা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কমান্ডার ফারুক হোসাইন জানান, তাদের ৪টি ইউনিটের সদস্যরা রাত ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ সময় পদ্মা ওয়েল এজেন্সির মালিক মিজানুর রহমানসহ ৭জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। ওই ভবনে থাকা বাকী লোকদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে।।তিনি আরো জানান, আবাসিক এলাকায় বেআইনি ভাবে তিনতলার বাসার নিচতলায় মিজানুর রহমানের দোকানে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, গ্যাস সিলেন্ডারসহ পর্যাপ্ত জ্বালানী তেল মজুদ ছিল।
এই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধরা হচ্ছেন: নুরু মোহাম্মদ (২১), রায়হান (২৩) মিজানুর রহমান (৫০), বাদশা মিয়া (৫০), মাসুদ হোসেন (২৮), বেলাল হোসেন ভুঁইয়া (৩৫)।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. বেলাল হোসাইন ঢাকা টাইমস ২৪.কমকে বলেন, অগ্নিদগ্ধ ছয়জনকেই ঢাকা রেফার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪জন ৮০/৯০% এবং দুইজন ৫০/৬০% পুড়েছেন। এছাড়া আহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী খোকন মজুমদার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চাঁদপুর উত্তর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক রতন দত্ত বলেন, আগুন নিভাতে সক্ষম হলেও এই মুহুর্তে ক্ষয়ক্ষিতর পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। তবে ওই গোডাউনে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, গ্যাস সিলিন্ডার ও কেরোসিন ছিলো। এছাড়াও যে ট্যাংকারটি তেল নামাচ্ছিল, সেটিতেও তেল ছিলো। ট্যাংকারটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়েগেছে এবং ৩ তলা ভবনের অনেকাংশ পুড়েগেছে।
এলাকাবাসি জানায়, দির্ঘ কয়েক বছর যাবত চাঁন্দ্রা লোহাগড় পাটওয়ারী বাড়ির মৃত আবু সাদেক পাটওয়ারীর ছেলে মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বঙ্গবন্ধু সড়কের সেলিনা ভবন ভাড়া নিয়ে পদ্মা অয়েল এজেন্সীর নাম ব্যবহার করে পেট্টোল অকটেন, এলপি গ্যাস সিলেন্ডার বিক্রি করে আসছিলো। মিজানুর রহমান প্রতি সপ্তাহে চট্রগ্রাম থেকে তেলের ট্যাংকার করে পেট্টোল অকটেন এনে আবাসিক এলাকায় সেই বাসায় ও তার দোকানে এসে তেল মজুদ করে রাখে। তাকে এলাকাবাসি বহু বার বারন করেও তাকে এই এলাকা থেকে সড়াতে পারেনি। ঘটনার দিন রাতে তেলের ট্যাংকার থেকে তেল তরিগড়ি করে নামানোর সময় এলপি গ্যাস সিলেন্ডার বিস্পরনে সূত্র পাত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।
্
এদিকে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আব্দুল হাই, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শাহাদাৎ হোসেন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালি উল্লাহ অলির নেতৃত্বে পর্যাপ্ত পুলিশ আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল জানান, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে প্রশাসনের সবাই ছুটে আসে। আমি বাখরাবাদে ফোন করে চাঁদপুরের গ্যাসের লাইন বন্ধ করে যেন বড় ধরনের দুর্ঘটনা না হয়।